নামের পাশে নাম্বার ওয়ান তকমা বসেছে এই বিশ্বকাপ চলাকালীনই। অথচ স্বপ্নের বিশ্বকাপের শুরুটা হয়নি মোটেই রাজকীয়ভাবে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শুরুতে দর্শকের সারিতে ঠাই হয়েছে। এরপর যখন ফিরলেন, তখন আবার নতুন শঙ্কা ভর করেছে, গোটা বছরে ব্যাট হাতে ছন্দের ধারাবাহিকতা থাকবে তো? সেই শঙ্কা যে একেবারেই অমূলক ছিল, তাও নয়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যখন শুভমান গিল ফিরলেন, তখন ব্যাট হাতে খানিকটা ‘অচেনা’ রূপেই প্রত্যাবর্তন ঘটালেন। যে প্রত্যাবর্তনে সম্ভাবনার চেয়ে প্রশ্ন অনেক বেশি? গিল চেনা রূপে কবে ফিরবেন কিংবা আরেকটু বাড়িয়ে, বৈশ্বিক মঞ্চের চাপটা নিতে পারবেন তো এ তরুণ ব্যাটার? এমন সব প্রশ্ন, আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিল যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি বাদে তেমন রান পাচ্ছিলেন না কোনো ম্যাচেই।
কিন্তু গিল ফিরেছিলেন মোক্ষম সময়েই। অসুস্থতার আড়ষ্ঠতা কাটিয়ে আবারো সজীবতায় পুনরজ্জীবিত হয়ে ফিরলেন গিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রানের ইনিংস খেলার পর রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে পেলেন আরেকটি ফিফটি। সেই ধারাবাহিকতায় ফাইনালে ওঠার ম্যাচে আবারো জ্বলে উঠলেন তরুণ এ ব্যাটার। ব্যাট হাতে দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খেললেন ৬৬ বলে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এ দিন ইনিংসের শুরুতেই ভারতের প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত শুরু। ওপেনার রোহিত শর্মাও সেই পথে হেঁটেছিলেন। আক্রমনাত্বক ব্যাটিংয়ে শুরুতেই কিউই পেসারদের ব্যাকফুটে ফেলে দেন এ ব্যাটার। আর সে যাত্রায় রোহিতকে সঙ্গ দিয়েছিলেন শুভমান গিল। তবে রোহিত যখন থামলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের হাতে ক্যাচ দিয়ে, তখন যেন আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ব্যাটনটা তুলে দিয়ে যান গিলের হাতে।
অধিনায়ক ফেরার পর তাই প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ চালানোর যাত্রাটা আর তাই থেমে থাকেনি। শুরুটা করেছিলেন রোহিত। এরপর সেই ব্যাটিংয়ের স্রোত ধরে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন গিল। আর তাঁর ব্যাটিংয়ের সামনে লকি ফার্গুসনও যেন কোনো উপায়ন্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শর্ট বলে ধরা দেবেন, এমন ভাবনায় শর্ট বল দিয়ে গেছেন। কিন্তু ফার্গুসনের সেই রণকৌশল বুমেরাংই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। এক ওভারেই চারের পর ছক্কা হাঁকান গিল।
আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ব্যক্তিগত অর্ধশতকে পৌঁছাতেও তেমন সময় নেননি এ ওপেনার। ৪১ বলে টপকে যান পঞ্চাশ। এরপর স্যান্টনারের ওপর চড়াও হন গিল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে প্রথমে ছক্কা। এর পরের বলে কাট করে মারেন চার। সাবলীল ব্যাটিংয়ে তাই নিশ্চিত সেঞ্চুরির পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন গিল। তবে হঠাতই এক সিঙ্গেল নিতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন ভারতীয় এ ওপেনার।
ক্র্যাম্প নাকি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট, সেটা অবশ্য মাঠে থেকে বোঝা যায়নি। তবে অস্বস্তিতে পড়ে আর ইনিংসটাকে দীর্ঘায়িত করেননি। হেঁটেই মাঠ ছাড়েন তিনি। গিলের ইনিংসের যাত্রাটাও তাই থেমে যায় ৬৫ বলে ৭৯ রান। ফাইনালের আগে হয়তো বাড়তি সতর্কতামূলক হিসেবেই ঝুঁকিটা গিল নেননি কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট নিতে চায়নি।
কেননা, এরই মধ্যে চোটে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ মুহূর্তে এসে তাই ইনজুরির তালিকাটা আর লম্বা করতে চায়নি ভারত। তবে গিলের ইনজুরিটা যে গুরুতর নয়, তা টের পাওয়া গেল ইনিংসের শেষ ওভারে। সুরিয়াকুমার যাদব ফিরে যেতেই আবারো মাঠে নামেন গিল।
যদিও মাত্র একটি বলই খেলেন তিনি। তাতে সিঙ্গেল নিয়ে নিজের ইনিংসটা শেষ করেন ৬৬ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থেকে। আর তাঁর শুরুর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সুতো ধরেই ভারত পৌঁছে যায় রানপাহাড়ের চূড়ায়। ৩৯৭ রানের যে সংগ্রহের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এই গিল