খেলা হিসেবে গলফকে যেমন মানুষের কাছে পরিচিত করেছেন, ঠিক তেমনি পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমানকে সে কারণেই বাংলাদেশের গলফ আইকন হিসেবে অবিহিত করা হয়ে থাকে। অবধারিতভাবে তিনি খেলাটির দেশের সেরা তারকাও বটে। দেশের প্রথম এই পেশাদার গলফার নিজের ক্যারিয়ারে অনেককিছুই যোগ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়টা তাঁর মোটেও ভাল যাচ্ছেনা। একে তো করোনা তারওপর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো খেলতেই পারছেন না।
সেই হতাশা থেকে সম্প্রতি বলেই ফেললেন, অলিম্পিকে তাঁর আর খেলার সম্ভাবনা নেই! ব্যাংকিংয়ে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার মধ্যে থাকতে পারলেই কেবল মিলত টোকিও যাওয়ার টিকিট। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে নিজেকে প্রমাণের তো মঞ্চই পাচ্ছেন না। সে কারণে হতাশা ঘিরে ধরেছে সিদ্দিকুরকে। সেটি কাটাতেই অলিম্পিকে খেলার যে পরিকল্পনা ছিল সেখান থেকে সরে এসেছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নিয়েই ভাবতে চান এই তারকা গলফার। অথচ সিডিউল অনুসারে একাধিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ ছিল। কিন্তু গলফ কোর্সে নামতে না পেরে নিজের সর্বনাশটা নিজেই দেখেছেন।
এমনিতে করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে যে টুর্নামেন্টগুলোতে খেলেছেন সেখানে শেষদিকে এসে মনসংযোগ ঠিক রাখতে না পারার কারণে সর্বোচ্চ সাফল্য আসছিলনা। মনোবিদের শরনাপন্ন হলেও তেমন একটা কাজ হয়নি। সে জন্য চাইছিলেন বেশি বেশি টুর্নামেন্টে খেলতে। পাশাপাশি করোনার প্রথম ধাক্কাটা শুরু হওয়ার পর পরই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য বৃত্তি চাইছিলেন। আবেদন করে কোন সাড়া এখন পর্যন্ত পাননি সিদ্দিকুর।
তবে হাল না ছেড়ে সামনের দিকে তাকাতে চাইছেন তিনি। এর আগে দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক গেমসে কোটা প্লেসের মাধ্যমে খেলেছিলেন। একজন বাংলাদেশী হিসেবে সেখানে তার নামটা সোনার হরফে লেখা থাকবে। এবার দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অসামান্য সেই অর্জনটি করেছেন রোমান সানা। বাংলাদেশ আনসারের এই আর্চার ২০১৮ সালে বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ব্রোঞ্চ পদক জিতে সরাসরি টোকিও যাবার টিকিট সবার আগে হাতে পেয়েছেন।
মানুষের জীবনে ঝেকে বসা করোনা মহামারির জন্য এশিয়ান ট্যুরসহ গলফের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা স্থগিত হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে আর অলিম্পিকে খেলার সুযোগ দেখছেন না সিদ্দিকুর রহমান, ‘করোনা পরিস্থিতি এক দেশে ভাল হচ্ছে তো আরেক দেশে খারাপ হচ্ছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা তো এখন সবচেয়ে খারাপ। এদিকে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এশিয়ান ট্যুর স্থগিত রয়েছে। করোনার জন্য বিদেশে খেলতে যেতে পারছি না একবছরের বেশি সময় হলো। কিছু টুর্নামেন্ট খেললে অলিম্পিকে খেলার একটা সুযোগ তৈরি হতো। এবার অলিম্পিক খেলা হচ্ছে না, এটা আমি মোটামোটি নিশ্চিত হয়ে গেছি’।
টোকিও অলিম্পিক খেলতে পারবেন না জেনে নিয়ে কোন আক্ষেপ রাখতে চান না। এখন ভিন্ন এক পরিস্থিতির মধ্যে সারা পৃথিবীর মানুষ রয়েছে বলে, মোটেও হতাশ হতে চাননা। তার কাছে একবার তো অলিম্পিকে খেলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা কোটা প্লেসের মাধ্যমে সরাসরি অলিম্পিকে খেলা প্রথম বাংলাদেশি খেলোয়াড় যে তিনি। এটি নিজের ক্যারিয়ারের জন্য দারুণ এক তৃপ্তির বিষয় তার কাছে।
২০১৬ সালে বিশ্ব র্যাংকিং এ সেরা ৬০ জনের একজন থাকার কারণে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার কৃতিত্ব অর্জণ করেছিলেন। সেই সুযোগটা এবার পেলেন না সিদ্দিকুর। অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের অংশগ্রহন বলতেই ওয়াইল্ড কার্ড। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) মাধ্যমে অনেকটা দানেই বিশ্বের সেরা এই আসরে অংশ নিয়ে থাকেন বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা। আশির দশক থেকে এই রেওয়াজ চালু রয়েছে। অ্যাথলেটিক্স, শুটিং, সাতার, ভারোত্তোলন সবখানেই ওয়াইল্ড কার্ডই ভরসা।
এবারের আসরেও রোমান সানা ছাড়া বাকিদের ভরসাও অনেকটা দানে খেলার এই সুযোগ। গত বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত প্রশিক্ষনের জন্য বিওএ’র কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন সিদ্দিকুর। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্বান্তের কথা এখনো জানতে পারেননি। সিদ্দিকুর জানিয়েছেন, অলিম্পিকে সহায়তা পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত প্রশিক্ষনে তার মধ্যে থাকা ভুল-ত্রুটিগুলো সহজেই দূর করতে পারতেন। বিওএ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলেই সিদ্দিকুরের প্রত্যাশা। এদিকে সিদ্দিকুর নিজেই আবার বাংলাদেশ অ্যাথলেট কমিশনের সদস্য।
সব মিলিয়ে নিজের দুঃসময় কাটাতে যে ধরনের পরিস্থিতি প্রয়োজন সেটি পাচ্ছেন না বলবয় থেকে গলফার হওয়ার সিদ্দিকুর রহমান। প্রতিনিয়ত তাকে যুদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। সেই ছোটবেলায় খাবার থেকে শুরু করে অনেক কষ্টই করেছেন। এখন সেসব টপকে সুখের সময় দেখার পর খেলোয়াড়ী জীবনে নানা প্রতিকুল পরিস্থিরি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে হতাশ না হয়ে ইতিবাচক থেকে সামনে ভাল সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান।