নীল আকাশে পাখির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়াবেন। ঘন কালো মেঘ কিংবা শুভ্রতার অতলে হারিয়ে যাবেন। মুহূর্তে ভুপাতিত করে দেবে শত্রুর যুদ্ধযান। এমনটাই স্বপ্ন দেখতেন ছোট্ট সিকান্দার রাজা। মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন একজন ফাইটার প্লেনের পাইলট হবার। জন্ম তাঁর হয়েছিল পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। বিশ্বের শক্তিধর এক সামরিক বাহিনীতে কেই-বা না যেতে চায়?
সিকান্দার রাজাও চাইতেন। শুধু স্বপ্ন দেখাতেই ক্ষান্ত ছিলেন না জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার রাজা। বরং তিনি স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখবার চেষ্টাও করেছিলেন। নিজেকে গড়ে তুলে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী কলেজেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। সেখানে বছর তিনেক ছিলেনও তিনি। একজন যোদ্ধা হবার সব প্রশিক্ষণও রপ্ত করে ফেলেছিলেন প্রায়। তবে এরপর জানতে পারেন চোখে রয়েছে তাঁর মৃদু সমস্যা।
বিধাতা যেন অন্যকিছু লিখে রেখেছিলেন ভাগ্য়ে। ভগ্ন মন নিয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চলে গিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডে। এরপর সেখান থেকে বাবা-মায়ের কাছে জিম্বাবুয়ের হারারেতে। ভাগ্যই সম্ভবত তাঁকে সেখানটায় টেনে নিয়ে যায়। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের সাথে ক্রমশ যুক্ত হতে শুরু করেন। আর এখন তো তিনি রীতিমত রাজার হালে করছেন বসবাস।
ক্রিকেটটাকে একটা পর্যায়ে খুব আপন করে নিয়েছেন তিনি। প্রায় নয় বছরের অধিক সময় ধরে তিনি খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ঠুনকো এক ক্রিকেট কাঠামোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বলাই যায় তাঁকে। সিকান্দার রাজা তাই নিজেকে একজন যোদ্ধা বলতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
শুক্রবার বাংলাদেশের বিপক্ষে এক অভাবনীয় জয় তুলে নেওয়ার পর তিনি ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি একজন ফাইটার পাইলট হতে পারিনি। তবে আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষ হিসেবে আমি সবসময়ই একজন যোদ্ধা।’ এমনটা বলার কারণও রয়েছে বেশ।
একটা লম্বা সময় ধরে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন জয় দেখে না জিম্বাবুয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে। প্রায় ১৯টা ম্যাচ ধরে টাইগাররা অপরাজিত। তবে এই একচ্ছত্র আধিপত্যের দেয়ালে আঘাতটা যেন বসিয়েই দিলেন যোদ্ধা সিকান্দার রাজা। সাথে নিলেন তাঁর আরেক সহযোদ্ধা ইনোসেন্ট কাইয়াকে। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের করুণ দশা তো সবারই জানা। এমন পরিস্থতিতে ৩০৪ রানের টার্গেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়াটা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
এই জয় নিজের ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সাড়ে তিন বছরের ট্রেনিংকে কৃতিত্ব দিয়ে রাজা বলেন, ‘ম্যাচে জয় পাওয়ার একটা প্রচণ্ড চাপ ছিল। আমি মিথ্যা বলব না। বিমান বাহিনী ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসাটা আমাকে সত্যিই সাহায্য করে। আমরা কখনো হাল ছেড়ে দেই না। আমি আঘাত পাই, আমি ব্যথা পাই, আঙুল ভাঙে আমি পরোয়া করি না।’
এই সিকান্দার রাজাই কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। যোদ্ধা হবার স্বপ্নে বিভোর রাজা। যেন ক্রিকেট মাঠের যোদ্ধা হয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। অন্তত তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সে ইঙ্গিতটাই দেয়। দলের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছয় মেরেই জয় নিশ্চিত করেছেন রাজা।
এরপর তাঁর বুনো উল্লাসটা যেন ঠিক বাঁধিয়ে রাখার মতই। স্বপ্ন ভঙ্গ হবার কষ্টটা রাজা বোঝেন। তাইতো তিনি জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে সুদিনের পথে হাটতে সাহায্য করছেন। যেন আগামী দিনে দেশটির কোন শিশু কিংবা কিশোরের স্বপ্নভঙ্গ না হয়। তাঁরা যেন চাইলেই ক্রিকেট মাঠে দাপটটা দেখাতে পারে।