প্রথম ওভারে আঘাত হেনেছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এশিয়া কাপ ফাইনালের মঞ্চে নায়ক আর লঙ্কানদের জন্য প্রধান হুমকি— দুটোই হয়ে উঠেছিলেন তিনিই। তবে ফাইনালের সব আলো যেন কেড়ে নিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। মেডেন দিয়ে শুরু।
এরপর থেকেই সিরাজের সামনে রীতিমত অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছিল লঙ্কান ব্যাটাররা। আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় উইকেটও পেয়ে যান দ্রুতই। শুরুটা হয় পাথুম নিসাঙ্কাকাকে দিয়ে। ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন নিসাঙ্কা। তবে ধরা দেন রবীন্দ্র জাদেজার হাতে।
সিরাজের উইকেটখেকো হওয়ার শুরু সেখান থেকেই। একের পর এক এ পেসার ফেরান শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার ব্যাটারদের চতুর্থ ওভারে হয়েছিল নিশাঙ্কার উইকেট দিয়ে শুরু। এরপর সাদিরা সামারাবিক্রমা। আসালাঙ্কা, ডি সিলভা। সিরাজের সামনে টিকতে পারেননি কেউ।
৪ রানে ৪ উইকেট পাওয়া সিরাজ ফাইফারও পেয়ে যান দ্রুতই। ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারে এবার তিনি ফুল লেন্থের বলে উপড়ে দেন দাসুন শানাকার অফ স্ট্যাম্প। ব্যাস। তাতেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইফারের স্বাদ পান মোহাম্মদ সিরাজ।
তবে এই ফাইফারে অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন সিরাজ। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে সিরাজই প্রথম যিনি এক ওভারে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এখানেই শেষ নয়। মাত্র ১৬ বলের ব্যবধানে ৫ উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। যা ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেরই এখন দ্রুততম ফাইফারের নতুন রেকর্ড।
পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির পর আরো একটা উইকেট নিয়েছেন সিরাজ। কুশল মেন্ডিসকে আউট করার পর নিজের বোলিং ফিগার শেষ করেছেন ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। আর এখানেই তিনি ছুঁয়েছেন আশিষ নেহরার এক কীর্তিকে।
২০০৬ সালে এই কলম্বোর মাটিতেই লঙ্কানদের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন নেহরা। ১৭ বছর বাদে, নেহরার পর আবারো কোনো ভারতীয় বোলার লঙ্কানদের বিপক্ষে পেলেন ৬ উইকেট।
সিরাজের আগ্রাসী বোলিংয়ে কলম্বোর ফাইনালটা এখন ভারতের দিকেই। মাত্র ৫০ রানে অলআউট হওয়া লঙ্কানরা নিজেদের মাটিতেই স্বাদ নিল বিব্রকর সব রেকর্ডের।
২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে যা এতদিন ছিল সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড। কলম্বোর ফাইনালে শ্রীলঙ্কা ৫০ রানে অলআউট হওয়ায় বাংলাদেশের সেই রেকর্ড এখন অতীত।
এশিয়া কাপের মঞ্চে বাংলাদেশের আরো একটি বিব্রতকর রেকর্ড এখন সঙ্গী হয়েছে শ্রীলঙ্কার পাশে। এশিয়া কাপে এতদিন সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ৮৭ রানের। ২০০০ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিল বাংলাদেশ।
এবার সে রেকর্ড ভাঙল শ্রীলঙ্কা। একই সাথে এশিয়া কাপের ফাইনালে এখন এটিই তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহের রেকর্ড। এর আগের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ১৭৩ রান।
শ্রীলঙ্কার কাছে যে স্কোরটা এখন বহুকাল ধরে দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে থাকবে, সেই ম্যাচের নায়ক হয়ে থাকবেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৭ ওভার। ১ মেডেন। ২১ রান। ৬ উইকেট। ওয়ানডেতে ভারতের চতুর্থ সেরা বোলিং ফিগার। তবে সিরাজের নামের পাশে তার চেয়েও মাহাত্ম্যপূর্ণ কথা লেখা থাকবে এই ভাবে– সিংহের ডেরায় সিরাজের ধ্বংসলীলায় ভারতের অষ্টম এশিয়া কাপ শিরোপা।