দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০০ ওভারের ম্যাচ। কিন্তু মাঠে গড়ালো মাত্র ২১.৩ ওভার! কলম্বোর ফাইনাল বলে ম্যাচের এমন চিত্রের পিছনে বৃষ্টির দায় দিয়ে লাভ নেই। বৃষ্টি এ দিন কোনো বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি।
ম্যাচের এমন দশার মূলহোতা ছিলেন মূলত মোহাম্মদ সিরাজ। কারণ তাঁর বোলিং তোপেই যে মাত্র ১৫.২ ওভারে ৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। আর সেই ছোট লক্ষ্যটা ভারত টপকে যায় মাত্র ৬.১ ওভারেই, কোনো উইকেট না হারিয়ে।
এশিয়া কাপের ফাইনালের মঞ্চ। জমজমাট এক ফাইনালেই সাধারণত চোখ থাকে সবার। তবে সে আশায় এবার গুড়েবালি। ইতিহাসের সবচাইতে একতরফা ফাইনালের স্বাক্ষী হলো পুরো বিশ্ব ক্রিকেট। যদিও এবারের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এশিয়ার সবচেয়ে সফল দুই দল। কিন্তু সেয়ানে সেয়ানে লড়াই তো দূরে থাক, কলম্বোর ফাইনালে লঙ্কানদের অবস্থা ছিল ঠিক এমন, ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।
শ্রীলঙ্কার এমন অসহায় আত্মসমর্পণে অষ্টম বারের মতো এশিয়া কাপ শিরোপা জিতল ভারত। আর সর্বোচ্চ ১১ বার এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠলেও ৬ টি শিরোপা নিয়েই আপাতত পরের এশিয়া কাপের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। এমন বাজে হারের পর যে কোনো দলেরই ভেঙে পড়ার কথা। দু:স্বপ্নে ঘেরা এমন দিনটা তাই ভুলেই যেতে চাইছেন শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড।
ম্যাচ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন, ‘খুবই বাজে একটা দিন। যা হলো, তা খুবই হতাশার। আজকে আমরা শক্তিশালী এক পেস আক্রমণের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলাম। সিরাজ, বুমরাহ যা করেছে, তা দুর্দান্ত। এই জায়গাতে আমরা আগেই পিছিয়ে ছিলাম। আমাদের বোলিং অ্যাটাকটা তারুণ্য নির্ভর। তবে আজকের দায়টা তো আর তাদের না। যা হয়েছে ভুলে যেতে চাই। একটা ভালো ঘুম দিয়ে আমরা কোচিং স্টাফরা পরে এ নিয়ে বসব।’
২১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ। তবে ম্যাচশেষে দেখালেন অন্যরকম এক মহানুবতা। ম্যাচসেরা হিসেবে পাওয়া পুরস্কার হিসেবে পাওয়া পাঁচ হাজার ডলারের পুরোটাই মাঠকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন এ পেসার।
ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বলেন, ‘শুরু থেকেই সুইং পেয়েছি। উইকেট ভাল ছিল। তবে আমি বলব, আমাদের পেসারদের যেমন সংমিশ্রণ, তাতে ভাল করার আরো রসদ পেয়েছি। আর এটাই আমার জীবনের সেরা বোলিং স্পেল। আর হ্যাঁ। এই পুরস্কারের প্রাইজমানি গ্রাউন্ডসম্যানদের কাছে যাবে। কারণ তাদের ছাড়া এই টুর্নামেন্ট অসম্ভব ছিল।’
ম্যাচশেষে লঙ্কানদের এমন হারের পিছনে অবশ্য কোনো নির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেননি শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তাঁর মতে, উইকেট ঠিক ছিল। তবে ব্যাটাররা তাদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারেনি।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘খুবই বাজে একটা দিন। সিরাজের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। আর আমরা ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছি সেখানেই। তবে আমরা এমন বাজে অবস্থা থেকে ফিরে আসাটা জানি। আমরা ফিরেও আসবো আশা করি।’
মাঠে আসা লঙ্কান দর্শকদের কাছে দু:খ প্রকাশ করে এরপর শানাকা বলেন, ‘আমরা দু:খিত। এই সমর্থন দুর্দান্ত। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আর ভারতীয় দলকে অভিনন্দন।’
অষ্টম বারের মতো এশিয়া কাপ শিরোপা জিতল ভারত। স্বাভাবিকভাবেই এমন অর্জনে দারুণ গর্বিত ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শিরোপা জয় স্বরূপ ট্রফি নেওয়ার আগে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘দারুণ পারফর্ম্যান্স। দারুণ বোলিংয়ে শুরু। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং দিয়ে শেষ। এমনটাই তো আমরা সব সময়ে চেয়েছিলাম। তবে আমি এতটা কখনো ভাবিনি। সিরাজ মূলত কাজ সহজ করে দিয়েছে। ও যেভাবে বাতাসে ভাসিয়ে বল সুইং করিয়েছে, তা দুর্দান্ত।’
বিশ্বকাপের আগে এখন আত্মবিশ্বাসী ভারত। রোহিত বলেন, ‘সামনে বিশ্বকাপ। আমরা এখন সেটিকে ভাবনায় রেখেই এগোব। আর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ম্যাচে রাহুল, কোহলি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। পুরো টুর্নামেন্টে হার্দিক পান্ডিয়া, ঈশান কিষাণ ভাল খেলেছে। আর শুভমান গিল তো সব ম্যাচেই দারুণ ব্যাটিং করেছে। এমন সব টুর্নামেন্টে টিম পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করতে পেরেছি।’