অদ্ভুত অপেক্ষার অনুভূতি

অদ্ভুত এক অনুভূতি এই ‘অপেক্ষা’। মুহূর্তগুলো যেন মহাকালের আঁকার ধারণ করে। কত সহস্র মহাকালের অপেক্ষায় রয়েছেন ভারতে কিংবদন্তি ব্যাটার বিরাট কোহলি, তাঁর সাথে আবার যোগ হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আরেক তারকা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ। তাঁদের দুইজনের অপেক্ষা শতক হাঁকানোর। কিন্তু, ক্রমশই যেন অপেক্ষার প্রহরটা লম্বা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মিডল অর্ডারের ভরসার দুই নাম স্মিথ এবং বিরাট। এদের দুইজনের কাঁধে ভর করে ম্যাচ জয়ের কত কাব্য লেখা হল। তাঁর ইয়ত্তা নেই। আর এই দুই ব্যাটারই নাকি এখন ভুগছেন শতক খরায়। এও কি মেনে নেওয়া যায়! ট্যাকলিকালি এই বিরাট ও স্মিথ খুব দারুণ দুইজন ব্যাটার। ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনেই যত সুদর্শনীয় শট রয়েছে তাঁর সবই প্রায় আয়ত্ত করা এই দুই কিংবদন্তির।

স্মিথ এবং বিরাটের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কিছুই করার থাকেনা। ফরম্যাট ভেদে তাঁদের ব্যাটিং গিয়ারের তারতম্য ঘটে ঠিক তবে তাতে তাঁদের ব্যাটিংয়ের নান্দনিকতা যেন বিন্দুমাত্র কমেনা। বরং আরও বেশি চোখের স্বস্তি হয়। ব্যাকরণ মেনেই যেন টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ফরম্যাটেও ব্যাট করা যায়, সে সাথে রান তোলাও যায় তা বারংবার দেখিয়েছেন বিরাট ও স্মিথ।

তবে হায় কি এক সময় দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা! একসময় ভাবা হত ক্রিকেটের ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকারের ১০০টি শতকের রেকর্ড পার করে যাবেন বিরাট কোহলি। হয়ত তিনি পারও করে যেতে পারতেন। বর্তমানে তিন ফরম্যাটে মিলিয়ে তাঁর শতকের সংখ্যা ৭০টি। আর ৩০ খানা শতক হলেই তো ছুঁয়ে ফেলা যেত শচীনকে। কিন্তু তা আর হচ্ছে কই। ৭১ নম্বর শতকের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বিরাট। খুব কাছে গিয়েও তিনি যেন রয়েছেন বহুদূরে।

অপরপদিকে ২০২০ এর পর ওয়ানডে না খেলা স্টিভ স্মিথের আক্ষেপ টেস্টে শতকের দেখা না পাওয়া। লম্বা একটা সময় ধরে তিনিও পারছেন না তাঁর ইনিংসগুলোকে শতকের কাছাকাছি নিয়ে যেতে। শেষ টেস্টে শতক করেছিলেন প্রায় ১৫ মাস আগে। ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে ২০২১ এর জানুয়ারিতে ১৩১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ‘ফ্যাব ফোর’ এর অন্যতম সদস্য স্টিভ স্মিথ। এরপরই শুরু টেস্টে শতকের খরা।

এরপর দুই দফা সত্তরের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের ইনিংস। আর একবার তো চলে গিয়েছিলেন নব্বইয়ের ঘরে। ভারতের বিপক্ষে সেই শতকের পর আরও সাতবার অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু কোন বারই তিনি তাঁর সেই অর্ধশতকগুলোকে টেনে শতক পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেনি। সে অপেক্ষা যে আরও একটু দীর্ঘায়িত হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবে বিরাটের সমস্যাটা বেশ গুরুতর। সেঞ্চুরি শেষে যে ব্যাট ও হেলমেট খুলে উদযাপন করতে হয় সেটাই যেন ভুলতে বসেছেন বিরাট। কোন ফরম্যাটেই আর সেঞ্চুরি যুক্ত হচ্ছে না বিরাটের নামের পাশে। তাঁর করা শেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০১৯ এর নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে সেবার তিনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৩৬ রান। সেবারই শেষ তাঁর ব্যাট ও হেলমেট হাওয়ায় ভেসে থাকার স্বাদ পেয়েছিল।

দিনের হিসেব যদি কষা শুরু করি তবে বিষয়টা খানিক বেগতিক হয়। আজকের এই হিসেবের সাথে আরও দুই মাস যুক্ত হবে। কেননা আগামী দুই মাস বিরাট ব্যস্ত থাকবেন আইপিএল নিয়ে। তাহলে বিরাটের আক্ষেপ আর অপেক্ষা যে আরও মাস দুয়েক অন্তত স্থায়ী হচ্ছে সেটা বলে দেওয়া যায়। যেহেতু আইপিএলে থাকছেন না স্টিভ স্মিথ, সেহেতু তাঁর সম্ভাবনা রয়েছে নিজের টেস্ট শতকের সংখ্যাটা ২৭ পার করবার।

তবে তাতেও বেশকিছু যদি-কিন্তু সমীকরণ থেকেই যায়। বিরাট কিংবা স্মিথদের মত ব্যাটারদের উপর ভরসা করা যায়। হয়ত এই অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে। তবে এর ফলাফল যে মধুর কিছুই হতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্তত ব্যাটাররা যখন বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথ তখন আসলে প্রত্যাশাটা খানিক বেড়ে যাক।

‘সবুরে মেওয়া ফলে’ তবে তাঁদের অপেক্কার প্রহরের অবসান হোক। একজন ক্রিকেট ভক্ত হয়ত এমনটাই প্রাথর্ণা করতে। অচিরেই হয়ত কাল মেঘ সরে গিয়ে হাসবে সূর্য। সেই সাথে হাসবে স্মিথ-বিরাটের ব্যাট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link