ধরুন, মিরপুর স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের অনুশীলন নেই আজ।
আপনি বেড়াতে বেড়াতে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েছেন। বিসিবির করপোরেট অফিসে দেখছেন কর্মকর্তা, কর্মীদের ইতস্তত ঘোরাঘুরি। অ্যাকাডেমি বা মূল মাঠে ঘাস বাছাই, মাটি ঠিক করা নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। কোনো এক কোনায় ঠিক ব্যাটিং নক করে চলেছেন মুশফিকুর রহিম।
এমন সাদামাটা একটা দিনেও আপনি দেখবেন অ্যাকাডেমি মাঠে কয়েক জন কিশোর স্পিনার নিয়ে টুকটুক করে অনুশীলন চালাচ্ছেন ক্ষিনাকায় একজন মানুষ।
তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান বা মেহেদী হাসানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন এই মানুষটার পরিচয়। তারা সমস্বরে বলবেন, ‘আমাদের কোচ। সোহেল স্যার।’
হ্যাঁ, সোহেল ইসলাম।
সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড এবং সবচেয়ে কম প্রচার পাওয়া কোচ। সেই ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের ফিল্ডার ও স্পিনারদের নিয়ে কাজ করেই যাচ্ছেন। একটার পর একটা বয়সভিত্তিক দল সামলাচ্ছেন। বিশেষ করে অনুর্ধ্ব-১৭ দলটা, মানে যুব দলের ঠিক আগের ব্যাচটাকে তৈরি করাটা তাঁর দায়িত্ব হয়ে গেছে।
সেই সোহেল ইসলাম এবার আগের মতোই নীরবে একটা বড় দায়িত্ব পেয়ে গেলেন। কিংবদন্তী স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি জাতীয় দলের অনুশীলনে আসছেন না করোনা সংকটে। ফলে এবার জাতীয় দলে প্রধাণ স্পিন কোচ হিসেবে কাজ করবেন সোহেল। ভেট্টোরির বহন করা পতাকাটা এখন আমাদের সোহেল ইসলামের কাঁধে।
সোহেলের জাতীয় দলে অর্ন্তভূক্তি এই প্রথম নয়।
২০১৪ সালে প্রথম একবার ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করেছিলেন। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বা পাকিস্তান সফর; মাঝেই মাঝেই দলের সাথে কখনো ফিল্ডিং সহকারী, কখনো স্পিন বোলিং সহকারী হিসেবে থেকেছেন। তবে পুরো একটা বিভাগের দায়িত্ব এই প্রথম।
সাতক্ষীরায় জন্ম নেওয়া সোহেল ইসলাম ঢাকার ক্রিকেটে একসময় পরিচিত খেলোয়াড়ই ছিলেন। ডানহাতি এই অফস্পিনার মোহেমডান, ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেছেন। লম্বা সময় খেলেছেন সূর্যতরুণে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলেও খেলেছেন একবার। কিন্তু ক্যারিয়ারটা খুব বড় হয়নি।
বেশ কম বয়সেই কোচিংয়ে চলে এসেছেন। শুরুতে ক্লাব পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে বিসিবির কাঠামোতে আছেন। এর মাঝে বিপিএল বা ঢাকা লিগেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সবমিলিয়ে নিজেকে একজন ক্রিকেটার তৈরীর কারিগর হিসেবে প্রস্তুত করে ফেলেছেন।
তাইজুলরা বেশ গর্বের সাথে বলেন, আমরা ওনার হাত ধরেই উঠে এসেছি।
সোহেল সবসময় আলোচনা থেকে দূরে থাকা মানুষ। ক্যামেরার ফোকাস তাকে খুব একটা খুজে পায় না। তাই একটু লাজুক ভাবেই বলেন, ‘একজন কোচ তো আর একজন খেলোয়াড় তৈরী করতে পারে না। সে তাঁর চলার পথে অনেকের সাথেই কাজ করে। ফলে কেউ আমারই তৈরী করা, এই দাবি আমি করি না। কেউ সফল হলে ভালো লাগে যে, তার চলার পথে আমি কিছু একটু ভূমিকা রাখতে পেরেছি।’
সোহেলের জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে বয়সভিত্তিক দল নিয়ে। এখনও তিনি অনুর্ধ্ব-১৭ দলের দায়িত্বে আছেন। এটাই সোহেলকে সবচেয়ে বেশী তৃপ্তি দেয়। দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতদের সাথে থাকতে পারছেন তিনি, তাদের হাত ধরে এগিয়ে দিতে পারছেন; এটা বড় একটা স্বস্তি দেয়।
এখন অবশ্য সোহেলকে আরেকটু বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। পা গলাতে হবে ভেট্টোরির জুতোয়। অবশ্য সোহেল এটাকে সেভাবে দেখতে রাজি নন। তিনি এরকম কোনো চাপ হিসেবেই দেখছেন না তার দায়িত্বটাকে। তিনি বলছিলেন, ‘আমি ভেট্টোরি থাকা অবস্থায়ও কাজ করেছি। আমরা ভিন্ন ভিন্ন কাজ করেছি। এবারও কাজ করবো। আমি ভেট্টোরির কাজটা করবো, তা তো না। আমি আমার কাজ করবো। ফলে আমি এটাকে ওভাবে দেখছি না।’