একটা ধাক্কা অবধারিত ছিলো।
সকাল থেকে গুঞ্জন ছিলো যে, দলে সিনিয়র কেউ থাকবেন না। সাকিব-তামিম এমনিতেই নেই দলে। মুশফিকুর রহিমকে রাখা হবে না, এটা নিশ্চিত ছিলো। বলা হচ্ছিলো, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও জায়গা হবে না পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে।
শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। যা হয়েছে, তাও কম নয়। একবারে দল থেকে বাদ পড়েছেন বা অনুপস্থিত হয়ে গেছেন ৬ জন ক্রিকেটার-মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, সাইফউদ্দিন, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন। আবার নতুন করে দলে ঢুকেছেন বা প্রথম ডাক পেয়েছেন ছয় জন ক্রিকেটার-নাজমুল হোসেন শান্ত, আকবর আলী, শহিদুল হোসেন, সাইফ হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও ইয়াসির আলী রাব্বি।
টি-টোয়েন্টি দলে এমন একটা ঝটকা দরকার ছিলো। ফলে এই পরিবর্তনের মুল সুরের সাথে আমি একমত। তবে ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্নগুলো সবিনয়ে এই সুযোগে জানাতে চাই।
১.
সাইফ হাসান কেনো ডাক পেলেন?
সাইফ সেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে মারকাটারি ব্যাটিং, সেটা করে খুব অভ্যস্ত নন। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিনি রান পেয়েছিলেন। সেটাও খুব মারাত্মক স্ট্রাইরেটে নয়। তাহলে তাকে কেনো দুই নম্বর ওপেনার হিসেবে নেওয়া হলো।
আমাদের তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়ার পক্ষে যারা বলছিলেন, তাদের যুক্তি ছিলো, তামিমের স্ট্রাইকরেট খুব ভালো নয়। তার বদলে এলেন নাঈম শেখ। তিনি রান পাচ্ছেন। কিন্তু প্রথম পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর মত করে যে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং, সেটা করতে পারছেন না।
নাঈমকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কারণ তিনি ফর্মে আছেন। সে ক্ষেত্রে অন্য প্রান্তে নাঈমের মতই ব্যাট করে, এমন কাউকে কী আমরা এফোর্ট করতে পারবো? নাকি এখানে আমাদের অন্য প্রান্তে মিজানুর রহমান বা মুনিম শাহরিয়ারের মত কাউকে দরকার ছিলো? এমনকি অন্য প্রান্তে আমরা পারভেজ হোসেন ইমনকেও কী চেষ্টা করতে পারতাম না?
২.
আকবর আলী কেনো টি-টোয়েন্টি দলে?
কোনো সন্দেহ নেই, আকবর বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতদের একজন। তিনি হয়তো একসময় সব ফরম্যাটেই থিতু হবেন। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যে ধরণের ইম্প্রোভাইজেশন প্রয়োজন হয়, তা কী আবর এখনই করতে পারছেন? তার টি-টোয়েন্টি রেকর্ড কী পক্ষে কথা বলে?
আকবরকে সম্ভবত ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়েছে। কারণ দলে মুশফিক বা লিটন বা মিঠুন নেই। সে ক্ষেত্রে আকবরের আগে ইরফান শুক্কুর কী জায়গাটা দাবি করেন না? শুক্কুর একাধারে উইকেটরক্ষক এবং টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি ঢাকা লিগে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতে সেরা দশ রান সংগ্রাহকের একজন ছিলেন।
আমার সবচেয়ে বড় ভয়, আকবর এখান থেকে না কোনো বিপদে পড়ে যান। যদি তিনি ম্যাচ পান, তাহলে তাকে একটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। স্বাভাবিক ভাবে তিনি খুব মারকুটে ব্যাট করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ‘গেলো গেলো’ রব উঠতে পারে। তখন না এই অমিত সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়টির ক্যারিয়ার প্রশ্নের মধ্যে পড়ে যায়।
৩.
কামরুল ইসলাম রাব্বি নন কেন?
শহিদুলকে উঠতি পেসার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেটা নিশ্চয়ই তার গতি ও নিয়ন্ত্রণ দেখে। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বি নন কেনো?
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে রাব্বি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। তার ইকোনমি রেটও ছিলো খুব ভালো। বাংলাদেশের এই কন্ডিশনে তিনি শহিদুলের চেয়ে অনেক ভালো উইকেট টেকিং অপশন। সে ক্ষেত্রে রাব্বির প্রতি কী অন্যায় করা হলো না?
৪.
রুবেল কী দোষ করলেন?
পুরো বিশ্বকাপ দলের সাথে রইলেন। রিজার্ভ থেকে মূল দলে নেওয়া হলো। কিন্তু একটা ম্যাচও খেলতে পারলেন না। তাহলে তার ঠিক কী দোষ দেখে রুবেলকে দল থেকে বাদ দেওয়া হলো? রুবেল অযোগ্য হলে তো বলতে হবে, বিশ্বকাপেই তাকে নেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। তাকে যে নির্বাচক কমিটি বিশ্বকাপের দলে রেখেছিলেন, তারাই কোনো ম্যাচ না দেখে তাকে বাদ দিলেন!
৫.
শান্ত এর মধ্যে কী করেছেন?
শর্টার ফরম্যাটে টানা ব্যর্থতার জন্যই নাজমুল হোসেন শান্তকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো। বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি লিগে দারুন করার পরও তাকে দলে নেওয়া হয়নি। তারপর তো কোনো টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি। তাহলে শান্ত ঠিক কী কারণে বিবেচ্য হলেন? এই সময়ে শান্তর পারফরম্যান্স কী?