তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে

জীবনটা এমনই। কখনো আনন্দ, কখনো তীব্র বেদনা। কখনো শোক, কখনো উৎসব।

এই যেমন চেতন সাকারিয়া। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ছিলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) নামের এক উৎসবে। বেশ আলোচিতও ছিলেন। রাজস্থান রয়্যালসের বোলিং ইউনিটে ক্রিস মরিস, মুস্তাফিজুর রহমানরা থাকার পরও রান বন্যার ম্যাচে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।

আইপিএল থেমে গেছে। স্থগিত হতে বাধ্য হয়েছে করোনা ভাইরাস নামের এক ভয়াল থাবার জের ধরে। দিন পাঁচেক আগে সেই আইপিএলের পারিশ্রমিকটা বুঝে পেয়েছিলেন চেতন।

বাঁ-হাতি এই পেসার পারিশ্রমিকটা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাড়িতে। বাবার চিকিৎসা করতে হবে তো। বাবা কাঞ্জিভাই সাকারিয়া। টেম্পো চালাতেন। সেই মানুষটার শরীরে জায়গা হয় করোনা ভাইরাসের। ছেলে চেতন আয় করা শুরু করেছে, এই সময় হয়তো বাবার আর টেম্পো চালাতে হত না।

কিন্তু, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। নতুন যুদ্ধ এবার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। লড়ছিলেন সেই যুদ্ধের বিরুদ্ধেই।

জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকায় প্রথমে বাড়ি যেতে পারেননি সাকারিয়া। তবে, আইপিএল স্থগিত হওয়ার পর চলে যান বাড়িতে, গুজরাটে। সামিল হন বাবার সাথে লড়াইয়ে। কিন্তু, চেতন বা তাঁর উপার্জিত অর্থ কোনোই কাজে আসলো না। কোভিড ১৯-এর সাথে যুদ্ধে হেরে জীবন নদীর ওপারে চলে গেলেন কাঞ্জিভাই। ভারতের মৃত্যুর মিছিলে যোগ হল আরেকটি নাম।

কষ্টগুলো যখন একটু একটু করে জোড়া দিয়ে সুখের দেখা পাচ্ছিলেন চেতন, তখনই আবারও তাঁর মাথার ওপর ভেঙে পড়লো আকাশ। বাবা চলে গেলেন, উৎসবের মঞ্চ থেকে ফিরে এবার আবারো শোকের আবহে ঢুকলো সাকারিয়ার জীবন।

এই শোক থেকে বের হয়েই খেলতে গিয়েছিলেন আইপিএলে।

চলতি বছরেরই কথা। ব্যস্ত ছিলেন সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি খেলতে। আইপিএলের নিলাম হতে তখনও সপ্তাহ তিনেক বাকি। চেতনের ভাই আত্মহত্যা করে। খেলায় ব্যস্ত ছিলেন বলে মা ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি চেতনকে। নিলামে এক লাখ ২০ কোটি রুপিতে তাঁকে কিনে রাজস্থান রয়্যালস।

ফোন দিয়ে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাইলেই মা বারবার বিষয়টা এড়িয়ে যেতেন। একদিন আর ঘটনা চাপা থাকলো না। চেতন সব জেনে গেলেন। এরপর থেকে ১০ টা দিন কারো সাথে কথাই বলেননি চেতন। নাওয়া-খাওয়াও প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন।

সেই শোক কাটিয়ে গিয়েছিলেন আইপিএলে। পারফরম করেছেন। বিশ্ব চিনেছে নতুন এক বাঁ-হাতি পেসারকে। আইপিএল থেকে ফিরে আবারো সেই কষ্টের সাগরেই ঠাঁই হল তাঁর। আর কত সহ্য করবে এই একটা মানুষ!

তারপরও কথায় আছে না – শো মাস্ট গো অন। চেতন নিশ্চয়ই ফিরবেন ক্রিকেট মাঠে। হয়তো আরো নতুন কোনো বিস্ময় গড়বেন। গোটা ভারত কিংবা গোটা বিশ্বই চমকে উঠবে। আপাতত সেই দিনের অপেক্ষা করা যাক। শোক আর বেদনার ভোলার যুদ্ধে চেতনের জয় হোক। শোকের এই আগুনেই আরো শক্তিশালী হয়ে উঠুন চেতন সাকারিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link