রাজশাহীতে সৌম্যের ঝলক

রাজশাহীর পেস বোলিং উইকেটে পেসাররা ঝড় তুলেছেন। তবে আরো বড় ঝড়টা এসেছে সৌম্য সরকারের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে হাই পারপফর্মেন্সের বিপক্ষে সৌম্যের এমন ব্যাটিং ডিসপ্লে পুরনো সেই সৌম্যকেই মনে করিয়ে দেয়। আহা, কতকাল পরে সেই স্টাইলিশ, ক্লাসিক, এলিগেন্ট সৌম্য সরকার। যিনি কিনা একাই তছনছ করে দিতে পারতেন ভারত, পাকিস্তান কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলগুলোর বোলিং আক্রমণ।

আপনি যদি পুরনো সেই সৌম্যকে মিস করে থাকেন। তাহলে এই ভিডিওটি আপনার জন্যই। আজ সকাল থেকেই রাজশাহীর কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে নিজের ক্যারিশমা দেখাতে থাকেন তিনি। প্রায় সারাদিন ব্যাটিং করে ৮১ রানে সাঝঘরে ফিরিছেন। তবে ফেরার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় নজরটা নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছিলেন সৌম্য।

বাংলাদেশ টাইগার্স ও হাই পারফর্মেন্সের এই ম্যাচ দেখতে হাজির হয়েছিল রাজশাহীর লোকাল ক্রিকেটাররা। চোখের সামনে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই তারকাদের খেলা দেখার সুযোগ তাঁরা হাতছাড়া করতে চায়নি। আর আজ সারাটা দিন তাঁরা মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিলেন সৌম্য সরকারের ব্যাটে। যেন ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইন আপকে দুমরে মুচরে ফেলা সেই সৌম্য। তামিমের সাথে বাংলাদেশকে ফ্লায়িং স্টার্ট এনে দেয়া সেই  সৌম্য।

তবে ২০১৫ সালের সেই সৌম্যকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের দেখা না পেতে পেতে দল থেকেই বাদ পড়ে যান। এমনকি বছরখানেক ধরে তিনি আর জাতীয় দলের পরিকল্পনাতেও নেই। তবুও বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে নিজের ফিরে আসার লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার। কঠিন এই ক্যাম্পে থেকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই তিনি করেছেন।

আর রাজশাহীতে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন তাঁর প্রতিদানও পেলেন এই ব্যাটার। আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ টাইগার্সের হয়ে ওপেন করতে নামেন নাঈম শেখ ও ইমরুল কায়েস। নাঈম শেখ ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়ে ফেরেন। এরপর সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস মিলে বাংলা টাইগার্সকে তুলে আনার চেষ্টা করেন। দুজনের মধ্যে বেশ দারুন একটা জুটিই হয়।

তবে ইমরুলও শেষ পর্যন্ত খুব বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে সৌম্য সরকারকে যেন থামানোই যাচ্ছিল না। অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেট দিয়ে আসলেও দিনের প্রায় শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে গেছেন সৌম্য। তাঁর মত একজন ব্যাটসম্যানের জন্য হয়তো এই ৮১  রানের ইনিংস খুব বড় কিছু না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এরচেয়ে দারুণ সব ইনিংস তিনি খেলেছেন।

তবে সময় সবকিছুই পালটে দিয়েছে। এই সময়ে এসে আজকের ইনিংসটাই হয়তো সৌম্যর জন্য অনেক বড় কিছু। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেও কোনভাবেই রানের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন একেবারেই মলিন। এমনকি মোহামেডানের হয়ে শেষ ১০ ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি। একটি ৫৯ রানের ইনিংস ছাড়া প্রায় সব ম্যাচেই দুই অংকের স্কোর করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

ফলে এই মুহূর্তে সৌম্য সরকার বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্রেফ একজন আক্ষেপ হয়ে উঠেছিলেন। জাতীয় দলে এখন আর ডাক পড়েনা। আসলে বলা ভালো, জাতীয় দলের ভাবনাতেও আর এখন থাকেননা তিনি। এই বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু লিটন দাস, মুনিম শাহরিয়ার, মাহমুদুল হাসান জয়দের এই সময়ে এসে সৌম্যর জাতীয় দলে ফেরাটা সত্যিই কঠিন। খুব অবিশ্বাস্য কিছু করে না দেখাতে পারলে হয়তো সৌম্য সরকার সেই একটা ঝলক হয়েই থেকে যাবেন।

ফলে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য কিংবা ব্যাট হাতে রানে ফেরা জন্য এমন একটা মঞ্চ,  একটা  ইনিংস সৌম্যর প্রয়োজন ছিল। আর সেই শুরুটা হয়তো রাজশাহীর এই ইনিংস থেকেই হতে পারে। সৌম্যর জন্য জাতীয় দলে ফেরার রাস্তাটা হয়তো এখন অনেক লম্বা। তবে রাজশাহীতে সেই পথে হাটা অন্তত তিনি শুরু করলেন।

 

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link