যে হাতে শোভা পাওয়ার কথা ব্যাট। সে হাতে ঝুলছে ক্র্যাচ। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দৌড়ে বেড়ানোর কথা সৌম্য সরকারের। সেই তিনি ধীর পায়ে হাটছেন। স্বল্প দূরত্ব অতিক্রান্ত করতেও লেগে যাচ্ছে অনেকটা সময়। এই দৃশ্যটা সৌম্য সরকারের ক্যারিয়ারের একটা প্রতীকি দৃশ্যও বটে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে পায়ে চোট পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। বাউন্ডারি বাঁচাতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যান তিনি। ঠিক তখনই হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন বা-হাতি এই ব্যাটার। মাটিতে পড়ার সময় ঘাড়েও বেশ ঝাকি খেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আর মাঠে নামতে পারেননি। করতে পারেননি ব্যাট।
তার পরিবর্তে কনকাশন সাব হিসেবে ব্যাট করতে নেমে দূর্দান্ত খেলেছিলেন তানজিদ তামিম। সৌম্য সেই চোটের কারণে তিন সপ্তাহের জন্যে ছিটকে যান মাঠ থেকে। আগামী ছয় এপ্রিল পর্যন্ত মাঠের বাইরে থাকছেন তিনি। এরপর পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সবুজ গালিচায় পা রাখবেন।
তার এমন ধীরলয়ে হেটে যাওয়ার সাথে ক্যারিয়ারের রয়েছে দারুণ যোগ সাদৃশ্য। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সময়ের হিসেবে বেশ লম্বা সৌম্য সরকারের। সেই ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পদার্পণ করেন তিনি। বছরের হিসেবে প্রায় এক দশক আগের ঘটনা। তবে এই লম্বা সময়ে তার অতিক্রান্ত দূরত্ব বেশ স্বল্প।
এত দীর্ঘ সময়ে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। সাদা পোশাক কিংবা রঙিন, তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা কেবলই ১৬৩টি। ৪১৩০ রান করেছেন তিনি এই সময়টায়। বেজায় করুণ এক চিত্র নিঃসন্দেহে। তার অভিষেকের পরে বাংলাদেশ তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছে ৩১৯টি। যার প্রায় অর্ধেক ম্যাচেই তিনি ছিলেন দলের বাইরে।
সেটার কারণ অবশ্য তিনি নিজেই। সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রদীপ জ্বেলেই এসেছিলেন তিনি। তবে ব্যাট আর বলের সংযোগ ঠিক মত ঘটাতে পারেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ব্যাট হাতে নিয়ম করে রানের জন্যে ছুটে বেড়াতে হয়েছেন ব্যর্থ। ঠিক সে কারণেই তো তার ক্যারিয়ারের বিস্তৃতি বছরওয়ারীতে বাড়লেও, বাড়েনি ম্যাচের সংখ্যায়।
অথচ তার হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যাট হাতে ক্লিন হিট করতে পারার সক্ষমতা সৌম্যের এখনও রয়েছে। নিজের দিনে তিনি কতটা ভয়ংকর- তা তো তিনি দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে করেছিলেন ১৬৯ রান।
তবে তার এই ভাল খেলাও ঠিক এবারের তার হাঁটুর ইনজুরির মতই। দু’টোই ক্ষণস্থায়ী। তবে ইনজুরি কাটিয়ে তিনি ফিরবেন নিশ্চিত। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি ধারাবাহিক হবেন সে বিষয়ের নিশ্চয়তা যেন নেই এক বিন্দু। সময় একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি নিশ্চয়ই।
কষ্ট হলেও তো হাঁটছেন সৌম্য। মাঠে ফেরার প্রত্যাশা থেকেই হয়ত সময় নিয়ে স্বল্প দূরত্ব দিচ্ছেন পাড়ি। এবারে ফিরে এসে অন্তত তিনি হবেন ফাইটার জেট। তেমন প্রত্যাশা করা নিশ্চয়ই নয় খুব একটা বাড়াবাড়ি। সৌম্য নিজের প্রতিভার কদর করবেন, তিনি ধারাবাহিকভাবে হবেন বিধ্বংসী- এমন আশা নিয়ে অপেক্ষামান তো অনেকেই। সে অপেক্ষা ফুরাবে কখনো?