এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু…

ধরুন, ভীষণ ব্যাস্ত এক দিন। অফিসে কাজের চাপ পাহাড়সম কিংবা ধরুন ইউনিভার্সিটিতে চলছে সেমিস্টার ফাইনালের গ্যাপ কিংবা ধরুন জীবনের কোন এক অনিশ্চয়তায় আপনি ভীষণ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। বুঝতেই পারছেন, জীবনপথের খুব কঠিন এক সময়ের গল্প শোনাচ্ছি আমি আপনাকে। এখন এরকম কঠিন একটি দিনের শেষে সন্ধ্যাতে যদি আপনি টিভি খুলে এক প্রান্তে লিটন কুমার দাস এবং আরেক প্রান্তে সৌম্য সরকারকে ব্যাট হাতে দেখতে পান, আপনার কেমন লাগবে?

আপনি যদি ক্রিকেটপ্রেমী না হন, তাহলে অবশ্য আলাদা কথা। কিন্তু যদি ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে থাকেন, তবে এই দুই মায়েস্ত্রোকে ব্যাট হাতে ক্রিজের দুই প্রান্তে দেখেই কিছু সময়ের জন্যে আপনার জীবনের সকল দুশ্চিন্তা উবে যাবে। সেই দুশ্চিন্তা হতে পারে পুরো ম্যাচের সময়ের জন্যে, হতে পারে কয়েক ওভারের জন্যে, হতে পারে কয়েক মিলিসেকেন্ডের জন্যে। কিন্তু, আপনার রক্তে শিহরণ তো দেবেই!

এই শিহরণের কিছুটা গতকালের ম্যাচে আপনারা পেয়েছেন আশা করি। এক প্রান্তে লিটন আর আরেক প্রান্তে সৌম্য থাকলে পাওয়ারপ্লেতে কি হতে পারে তা খুব সম্ভবত আন্দাজ করতে পারা যাচ্ছে ছিটেফোঁটা!

আজকের কেচ্ছা এই দু’জনকে নিয়ে। যদি আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুর দিকের সময়ের কথা বলি, দুইজনের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল দুই রকমভাবে।

২০১৫ বিশ্বকাপের আগে তখন আমরা খুঁজছিলাম একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। খেলা হবে অস্ট্রেলিয়ায়, একাদশে থাকবে তিন পেসার, তবু গ্যাবার মাঠে কে না আরেকজন পেসার চায়। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছিল সেই পেসারকে শুধু বল করলেই হবেনা, জানতে হবে পাকা ব্যাটিংও!

এই শর্ত এখন দেওয়া হলে হয়তো আপনি সাইফউদ্দিনের নাম বলতেন, তবে সেই সময়ে পেস বোলিং অলরাউন্ডার বলতে দেশের ক্রিকেটে সেরকম নামী কেউ ছিল না। এই চাওয়াতেই দৃশ্যপটে আগমন সৌম্য সরকারের। ছেলেটার ডেব্যু হল বিশ্বকাপের মাত্র কয়েক ম্যাচ আগে। খেলতে নামে নির্ভীক ভঙ্গিতে, অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে কাভার ড্রাইভটা এত সুন্দর করে আঁচড় কাটে যে তাকিয়ে থাকতে হয় নীলিমার চোখে তাকিয়ে থাকার মত করেই!

আবার এই ছেলেটা একটু যেন অন্যরকমও। ব্যাটিং স্ট্যান্স, আগ্রাসী মনোভাব, আবার হাতে কালো রঙের একটা ব্যান্ড, ট্রাউজারে গোঁজা একটা রুমাল! বাংলাদেশ ক্রিকেটে এত স্টাইলিশ একজন ব্যাটসম্যান কি আগে দেখা গেছে? সৌম্য সরকারকে হাতুরুসিংহের মনে ধরল বেশ, মাত্র এক সিরিজের অভিজ্ঞতাতেই তাকে প্লেনে নিয়েই অস্ট্রেলিয়া উড়াল দিল সে সময়ের বাংলাদেশ টিম। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে নেওয়া সৌম্যকে আবার নামিয়ে দেওয়া হল তিন নম্বরে!

সে সময় দেশের ক্রিকেটে একটা আলোচনা বেশ ঘোরাফেরা করছিল। বাংলাদেশ নাকি ওয়ার্ল্ডকাপে গেছে ব্যাকআপ ওপেনার না নিয়েই। সেই আলোচনার রেশ টানলেন নির্বাচকেরা, পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে নেওয়া হল যে ছেলেটাকে সেই ছেলেটাই নাকি ওপেনিং ব্যাটসম্যানও!

এরপর আর সৌম্য সরকারকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। মোটামুটি ভাল একটা বিশ্বকাপ কাটিয়ে তিনি আর ব্যাকআপ ওপেনার নন, হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর ওপেনারই। এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট যেন নতুন এক ক্রিকেট যুগে প্রবেশ করল। সৌম্য সরকার আমাদের মনে করিয়ে দিলেন তরুণ তামিম ইকবালকে। পাওয়ারপ্লে ব্যাবহার করে রানের ফোয়ারা ছোটাতে লাগলেন, পাকিস্তান ভারত সাউথ আফ্রিকার বোলিং ইউনিটকে এক রকম মাটিতে নামিয়ে আনলেন। এভাবেই ধ্রুবতী তাঁরার মত করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করলেন সৌম্য সরকার।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌম্য সরকারের ঠিক উল্টোভাবে আবির্ভাব লিটন দাসের। এমনিতে ছিলেন বিশ্বকাপ ২০১৫ এর স্ট্যান্ড বাই দলে। এর আগেও বিভিন্ন সিরিজে স্ট্যান্ড বাই হিসেবে রাখা হচ্ছিল লিটনকে। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ তিনি পেলেন বিশ্বকাপের পর! বয়সভিত্তিক দল কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটের যারা খোঁজখবর রাখেন, লিটন দাস তাদের কাছে পরিচিত এক নাম। মাশরাফির মতে তিনি নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচাইতে মেধাবী ব্যাটসম্যান, তখনকার সময়েই!

সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম কে না বলেছেন লিটনের সামর্থ্য। তবে সেই লিটন দাস ব্যার্থ হতে লাগলেন শুরু থেকেই। এমনিতেই মাথার ওপর লিটনের চাপ ছিল ভীষণ, কেননা ততদিনে বিশ্বকাপে ইনজুরি বাঁধিয়ে বসা আনামুল হক বিজয় সুস্থ হয়ে গেছেন। সৌম্য সরকারের আগ্রাসী ওপেনিংয়ে মজে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট তখন বিজয়কে আর ওপেনিংয়ে নিতে পারবেনা সে তো জানা কথা, কিন্তু তিন নম্বরে তো নেওয়া যায়! কিন্তু সেখানে বসে ছিলেন লিটন দাস। গুটিকয়েক সেঞ্চুরির জন্যে বিজয়ের ভক্ত সমর্থক ছিল সেসময় অনেক বেশি, তাই লিটন যখন প্রথম কয়েকটা ব্যাচে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন, তাকে বাদ দেওয়ার রেওয়াজ উঠেছে প্রায়ই!

তবে অধিনায়ক, কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট কেউই কখনও লিটনের ওপর থেকে আস্থা হারাননি। মিডিয়ার সামনে, লিটনের সামনে ক্যাপ্টেন মাশরাফি নিজে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বারবার। তবে সেই অধিনায়ককে বারবারই নিরাশ করতে লাগলেন লিটন দাস। শুরুটা এতটাই বিবর্ণ ছিল এই লিটনের!

এতক্ষণ যেটুকু বললাম, এটুকু স্রেফ ট্রেইলার ধরে নিতে পারেন। কারণ মূল গল্পটা আমি এখনও শুরুই করিনি। সেই গল্পটার নায়ক একজন নয়, দুইজন! কোন দুইজন তা কি আর বলে দেওয়া লাগবে?

যা হোক, শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে দল থেকে নানা সময়ে বাদ পড়ে লিটন আর সৌম্য বারবার ফিরে এসেছেন। আসলে তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে। এখন যদি এই দুইজন একই সাথে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন ইনিংস উদ্বোধনে, তবে কেমন হয়?

ইনিংস উদ্বোধনের গল্প বলতে গিয়ে জাস্টিন ল্যাংগার আর ম্যাথ্যু হেইডেনের কথা মনে পড়ে গেল। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের এই ত্রাহী ওপেনিং জুটিকে কে না চেনেন! মাঠে নামলেই যারা একের পর এক বলকে সীমানা ছাড়া করতেন, সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে দিগ্বিজয়ী তো এরাই বানিয়েছিল। আধুনিক ক্রিকেটে ওপেনারদের আদর্শ মানা হয় যে ল্যাঙ্গার-হেইডেনকে, সেই জুটির জাস্টিন ল্যাংগার বলেছেন, ওপেনারদের হতে হয় ভাইয়ের মত।

ভাইয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ হল নন স্ট্রাইকে থাকা খেলোয়াড়টিকে আপনাকে চিনতে হবে ততটাই, যতটা আপনি আপনার ভাইকে চেনেন। তা এতদিন ধরে একসঙ্গে খেলা লিটন সৌম্য যে নিজেদের বেশ ভালভাবেই চেনেন, তা কি আর বলে দিতে হবে?

ওপেনিং জুটি নিয়ে এন্ড্রু স্ট্রাউস বলেছেন, ওপেনারদের একে অপরের প্লেয়িং স্টাইল জানতে হবে পুরোপুরিভাবেই। লিটন আর সৌম্যর এই জায়গাতে একটা বেশ বড়সড় সুবিধা আছে বলতে হয়। দুইজনই শট খেলতে ভীষণ পছন্দ করেন, দুইজনই একই ঘরানার, একই মনোভাবের ব্যাটসম্যান। আর তাই দুজন দুজনের খেলাটাকে বুঝতে পারবেন বেশ ভালভাবেই।

লিটন-সৌম্য ওপেনিং জুটির সবচাইতে বড় সুবিধাটা তো বলাই হল না। সেটি হল এই দুই ব্যাটসম্যানের বাঁহাতি-ডানহাতি কম্বিনেশন। এমনিতে এটি যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আহামরি কোন ব্যাপার সেরকমটা অবশ্যই নয়। কিন্তু কোন একটি জুটির একজন বাঁহাতি আর আরেকজন ডানহাতি হলে প্রতিপক্ষ দলের বোলারকে রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটের পর ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হয় । আবার প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেও বারবার ফিল্ডিং পরিবর্তন করতে হয় । এই পরিবর্তন খেলার পরিকল্পনাতে কিছুটা হলেও ব্যাঘাত ঘটায়। তাইতো সেরা সব ওপেনিং জুটিতেই আমরা দেখতে পাই ডানহাতি বাঁহাতি ব্যাটিং কম্বিনেশন।

আবার লিটন সৌম্যর ব্যাটিং টেকনিকেও ভিন্নতা আছে। মূলত এই ভিন্নতা খুবই জরুরী। এন্ড্রু স্ট্রাউস যেমন বলেছেন, ” ওপেনারেরা ভিন্ন ভিন্ন টেকনিকের হলে প্রতিপক্ষ ধাঁধায় পড়ে যায়। তাই একজন যদি ফ্রন্ট ফুটে ভাল খেলে, আরেকজনকে ব্যাক ফুটে ভাল খেলতে হয়। এটা জরুরী নয়, তবে এতে ব্যাটিং কম্বিনেশনটা ভাল হয়”

লিটন সৌম্যর টেকনিকের এই ভিন্নতা অবশ্য ফ্রন্ট ফুট ব্যাকফুটে নয়। এটা অন্য জায়গাতে। সৌম্য সরকার হলেন একজন পিঞ্চ হিটার। শট খেলার ক্ষেত্রে ক্রিকেট ব্যাকরণ ঠিক মানেন না তিনি। কিন্তু লিটন দাস একেবারে ব্যাকরণ মেনে ব্যাট করা ব্যাটসম্যান। এই ‘ব্যাকরণিক’ আর ‘অ-ব্যাকরণিক’ দুই ব্যাটসম্যান নিয়ে ওপেনিং জুটিটা যে বেশ চোখের জন্যে আরামের হবে সেটা অবশ্য বুঝতে গেলে ক্রিকেট বিশ্লেষক হওয়া লাগেনা।

আবার এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে আমাদের পাওয়ারপ্লের সম্পূর্ণ ব্যাবহার করে দিতে পারবেন। যদি শুধুমাত্র পাওয়ারপ্লের অংশটুকুও তাঁরা টিকে থাকেন, তাহলেও দলের পরবর্তী ব্যাটসম্যানেরা নির্ভার ব্যাট করতে পারবেন। আর বাংলাদেশের মিডল অর্ডার নির্ভার থাকলে রানের চাকা যে সচল থাকে জোরেশোরেই তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি বেশ অনেকবার।

তবে এই ওপেনিং জুটির সমস্যাও থাকবে। এটা অবশ্য জুটির সমস্যা না বলে নিজেদের সমস্যা বলাই শ্রেয়।

একটু আগেই বলেছি সৌম্য সরকার একজন পিঞ্চ হিটিং ওপেনার। পিঞ্চ হিটারদের একটা বড় সমস্যা হল, এদের দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায় সহজেই। এ ধরণের ব্যাটসম্যানদের তাই নিজেদের খেলায় নতুনত্ব যোগ করতে হয়, নেট সেশনে সময় কাটাতে হয় অন্য যেকোন ব্যাটসম্যানের চাইতে বেশি। উদাহরণ চাইলে সৌম্য বীরেন্দর শেবাগের দিকে তাকাতে পারেন।

সৌম্য সরকারের মতই বীরুও ছিলেন ব্যাকরণ না মানা একজন পিঞ্চ হিটার, সৌম্যর মতই তাঁরও ফুট ওয়ার্ক ছিল দুর্বল। সেসব সাথে করে নিয়েই তিনি জিতে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। কিভাবে? বীরু প্রচুর নেট সেশনে সময় কাটাতেন। কেননা, তিনি জানতেন তাঁর দুর্বলতা খোঁজা প্রতিপক্ষের জন্যে সহজ । সৌম্যকে তাই প্রচুর নেট সেশনে কাজ করতে হবে, খেলায় নিত্যনতুন শট যোগ করতে হবে। আর সবচাইতে বড় ব্যাপার, পিঞ্চ হিটারদের সাহস ধরে রাখতে হয় সবচাইতে বেশি। সৌম্য সরকারকে তাই সাহসী হতে হবে সবচাইতে বেশি। মূলত, পিঞ্চ হিটাররা টিকেই থাকে এই সাহসের জোরে!

লিটন দাসের সমস্যা হল এত প্রখর নয়। ব্যাকরণ মানা ব্যাটসম্যানেরা এত কঠিন সমস্যাতে পড়েনও না, এদের দুর্বলতা এত সহজে প্রকাশও পায়না। তবুও লিটন দাসের সমস্যা তিনি নিজেই। এই বছরটা বাদে তিনি ক্রিকেটে বড্ড অধারাবাহিক। লিটনকে তাই হতে হবে বেশ ধারাবাহিক। আরেকটি ব্যাপার নিয়েও লিটনকে কাজ করতে হবে, সেটি হল তাঁর অফ সাইডে খেলার সক্ষমতা। লেগ সাইডে ভীষণ দক্ষ লিটন অফ সাইডে একটু যেন আড়ষ্ট। অফ সাইডে তাই লিটনকে কাজ করতে হবে একটু বেশি।

এদিক দিয়ে অবশ্য লিটন একটু নির্ভার হতে পারেন, বা এটিকে সৌম্য-লিটন জুটির আরেকটি ভাল দিকও বলতে পারেন। লিটন যেমন লেগ সাইডে দক্ষ, তেমনি সৌম্যর দক্ষতা অফ সাইডে। এই স্ট্রাউসের বলা ‘ভিন্ন টেকনিকের’ ব্যাপারটা, এটা এক্ষেত্রে আবার খেটে যায় লিটন-সৌম্য জুটিতে!

লিটন-সৌম্য জুটি নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে, এই জুটি নিয়ে তাবৎ ক্রিকেটপ্রেমীদের আশা আকাঙখা অনেক বেশি। মনে করা হয়, এই দুই ব্যাটসম্যান ইনফর্ম থাকলে সেদিম ক্রিকেট রেকর্ডের সব খেরোখাতাও বদলে যেতে পারে, পালটে যেতে পারে ক্রিকেটের ইতিহাস, তা সেটিই তো আমাদের চাওয়া!

সৌম্য-লিটন পথ চলুক একইসাথে পায়ে হেঁটে – হয়ে উঠুক ক্রিকেটের শার্লক আর ওয়াটসন, জয় করে ফেলুক ক্রিকেট রহস্যের সবটাই!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link