‘প্রিন্স অব কলকাতা’ খ্যাত সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ব্যাপারে রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, ‘অফে প্রথমে ঈশ্বর, তারপরই সৌরভ।’ ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন তিনি, বিশ্ব ক্রিকেটেও তাই। বাঁ-হাতে খেলেই ক্যারিয়ারে গড়েছেন হাজার হাজার রান! কিন্তু শুরুতে তিনি ছিলেন একজন ডান হাতি ব্যাটসম্যান! – জানতেন কি?
সৌরভের বড় ভাই স্নেহাশিস ছিলেন বাঁ-হাতি ক্রিকেটার। স্নেহাশিস যখন ক্রিকেট খেলতেন সৌরভ চাইতেন তার ‘ক্রিকেট কিট’ গুলো ব্যবহার করতে। কিন্তু বাঁ-হাতি হওয়ায় সৌরভ নিজেকে সেটায় ফিট করতে পারছিলেন না। যার কারণে নিজের ব্যাটিং স্টাইলই বদলে ফেলেন সৌরভ। বনে যান পুরোদস্তুর বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
বেঙ্গল ক্রিকেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন স্নেহাশিস। সৌরভের ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক দেখে তাকেও ভর্তি করিয়ে দেন এক ক্রিকেট অ্যকাডেমিতে। সৌরভ নিজের স্কুলের অধিনায়কও ছিলেন। তবে, তিনি কখনোই দ্বাদশ ব্যক্তি হতে চাইতেন না। তিনি মনে করতেন, পানি টানা কিংবা বাইরে বসে থাকাটা তাঁর কাজ নয়! ১৯৮৯ সালে বেঙ্গল ক্রিকেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সৌরভের পদচারণা। আর সে সময় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তাঁর ভাই স্নেহাশিস।
সেখান থেকেই প্রোফেশনাল ক্রিকেটে পথচলা সৌরভের। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পুরো ক্যারিয়ারে সবসময়ই বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেও ভালোভাবে করতে পারেননি তিনি। দল থেকে বাদ পড়েন দ্রুতই! এরপর টানা দুই মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সেরাটা দিয়ে আবারো জাতীয় দলে কামব্যাক করেন তিনি সামর্থ্যর সবটা দিয়ে দ্রুতই ভারতের হয়ে নিজের জায়গাটা পাকা করে ফেলেছিলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে টেস্ট অভিষেক। আর লর্ডসে অভিষেক টেস্টেই জুড়ে দেন সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেখান থেকে ২০০০ সালে পান ওয়ানডেতে অধিনায়কের দায়িত্ব। তার অধীনেই অজিদের টানা ১৬ জয়ের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় ভারত। ২০০০ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফির ফাইনাল খেলে ভারত। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই স্মরণীয় সিরিজ! লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভের জামা ঘুরানো সেই স্মৃতি ক্রিকেটভক্তদের মাঝে আজো তাজা!
ফিক্সিং ইস্যুতে যখন জর্জরিত ভারত। দলের অবস্থা যখন ভঙ্গুর প্রায়! তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উঠিয়ে এনে নতুন করে শুরু করেছিলেন সৌরভ। দলকে আবারো দাঁড় করান তিনি। এরপর ভারতের কোচ হয়ে এলেন গ্রেগ চ্যাপেল! সেটিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় বহু সিনিয়র ক্রিকেটারের জন্য। দল থেকে বাদ পড়লেন অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার। এই তালিকায় ছিলে সৌরভ গাঙ্গুলিও। গ্রেগ চ্যাপেল সৌরভকে ‘আনফিট’ ঘোষণা করেন!
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে টেস্টে ১১৩ ম্যাচে ৭২১২ ও ওয়ানডেতে করেছেন ১১ হাজারেরও বেশি রান। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে করেছেন ৩৮ সেঞ্চুরি ও ১০৭ ফিফটি! বল হাতেও শিকার করেছেন ১৩২ উইকেট।
বড় ভাইর ক্রিকেট সরঞ্জাম ব্যবহার করতে গিয়ে নিজের ব্যাটিং স্টাইলটাই বদলে ফেলেন সৌরভ। সেখান থেকেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দীর্ঘ পথ চলা। এখন তিনি বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট! ক্যারিয়ারে এই লম্বা সফরে বড় ভাই স্নেহাশিসের অবদান নেহাত কম নয়! ডান হাতি সৌরভ বনে গেলে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান!