২৫ বছর আগের কথা। ১৯৯৬ সালের ২০ জুন শুরু হওয়া ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে ওই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে একসঙ্গে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন দুজন ক্রিকেটার – সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার।
সৌরভ গাঙ্গুলি টেস্ট আবির্ভাবেই একটি ঝকঝকে শতরান করেছিলেন, প্রথম ইনিংসে। ২০ টি বিদ্যুৎময় বাউন্ডারিতে সাজানো চোখ ঝলসানো ১৩১ করে অ্যালান মুলালির বলে তিনি বোল্ড হয়ে গিয়েছিলেন। তার আগে তিনি ক্রিজে ছিলেন ৪৩৫ মিনিট, খেলেছিলেন ৩০১ টি বল। তাঁর সূর্যোজ্জ্বল কেরিয়ারের আবাহন ছিল ঐ ইনিংসটি। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাট করার মত পরিস্থিতি আসার আগেই ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়ে যায়।
কেউ বলেন না যেটা সেটা হল এই যে, ঐ ম্যাচে বোলার সৌরভ গাঙ্গুলি মোট তিনটি উইকেটও পেয়েছিলেন ৫৪ রান দিয়ে। প্রথম ইনিংসে (১৫-২-৪৯-২) তিনি তুলে নিয়েছিলেন নাসির হুসেইন আর গ্রায়েম হিকের উইকেট। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তিন ওভার বল করার ফাঁকে ৫ রান দিয়ে তার তোলা উইকেটটি ছিল ঐ টেস্টের ম্যাচ সেরা ইংল্যান্ড উইকেটরক্ষক জ্যাক রাসেলের।
অন্যদিকে রাহুল দ্রাবিড় দুর্ভাগ্যবশত শতরানের ৫ রান দূরে থেমে গিয়েছিলেন ঐ টেস্টের একমাত্র ইনিংসের ব্যাটিংয়ে। ৩৬৩ মিনিটের ধৈর্য্যশীল ইনিংসে ২৬৭ বল খেলে ছয়টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৯৫ রান করে তিনি লিউয়িসের বলে রাসেলের হাতে ধরা পড়েন। তাঁর ইনিংসে লেখা ছিল এক রত্নখচিত আগমনবার্তা। আগেই লিখেছি, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ব্যাট পায়নি। এছাড়া রাহুল দ্রাবিড় একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে, যেটি ছিল নাসির হুসেইনের তোলা ক্যাচ।
ড্র হয়ে যাওয়া ঐ লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ড করেছিল ৩৪৪ ও ২৭৮/৯। আর ভারত তাদের একমাত্র ইনিংসে করেছিল ৪২৯ রান।
১০ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জীবনের ১১৩ তম টেস্ট খেলে অবসর নেবার আগে ১৬ টি শতরান ও ৩৫ টি অর্ধশতরান সহ ৭২১২ রান করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ রান ছিল ২৩৯। শেষ টেস্টে তার রান ছিল ৮৫ ও ০। ১১৩ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে ছিল ৩২টি উইকেট। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত খেলেছিল ৪৯ টি টেস্ট, যার মধ্যে ২১ টি টেস্ট জিতেছিল তাঁরা এবং যার মধ্যে ১১টি জয়ই ছিল বিদেশের মাটিতে।
আর রাহুল দ্রাবিড় ১৬৪ টি টেস্ট খেলার পথে ২৮ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলে অবসর নেবার আগে ৩৬ টি শতরান ও ৬৩ টি অর্ধশতরান সহ ১৩২৮৮ রান করেছিলেন। টেস্টে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ২৭০। শেষ টেস্টে তার রান ছিল ১ ও ২৫। ১৬৪ টেস্টে তাঁর ঝুলিতে একটি উইকেটও ছিল। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত খেলেছিল ২৫ টি টেস্ট, যার মধ্যে আটটি টেস্টে তারা জয় পেয়েছিল।
আসলে ২০ জুন ১৯৯৬ ছিল একসঙ্গে দুটি দীর্ঘ গৌরবোজ্জ্বল টেস্ট পথচলার একসঙ্গে শুরুর দিন। যথাক্রমে ১২ ও ১৬ বছর চলা ঐ পথদুটির দুপাশে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকগুলি ভালবাসা ও মায়ামেদুর মাইলস্টোনের বটগাছ, যার ছায়ায় দীর্ঘদিন শান্তিতে দিন কাটিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট।