পাঁচ বছরের মধ্যে চারটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা যেকোনো দলের জন্য মনের রাখার মত অর্জন। শ্রীলংকা দল এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে এবং এর জন্য যোগ্য তারা। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে না পারার ব্যর্থতা তাদেরকে নিশ্চয় পোড়াবে। সাম্প্রতিক অতীতে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল ছিলো শ্রীলংকা।
এতো ধারাবাহিক একটি দলকে ‘চোকার’ বলতে খারাপ লাগে। কিন্তু এটা সত্যি যে ,তারা ফাইনালে চাপ নিতে পারেনি। আর এই চাপ নিতে না পারার কারণে তারা বঞ্চিত ছিলো বিশ্বকাপ থেকে।
- ঘটনা-১
২০০৭ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়ে প্রথমবারের মত হারের মুখ দেখে শ্রীলংকা। কিংস্টন ওভালে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে কোনো ধরনের প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি শ্রীলংকা। অস্ট্রেলিয়ান উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গ্রিলক্রিস্টের দূর্দান্ত ব্যাটিং এ শ্রীলংকার বোলিং আক্রমণ দুমড়ে মুচড়ে যায়। চামিন্দা ভাস,মুরালিধরন,মালিঙ্গাদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছাড়েন।
অপরদিকে , ব্যাটিং করতে নেমে গ্লেন ম্যাকগ্রার বোলিং এর সামনে দাঁড়াতে পারেননি শ্রীলংকা। জয়াসুরিয়া,জয়াবর্ধনে,সাঙ্গাকারার মত ব্যাটসম্যানরা অসহায় আত্মসমার্পণ করে।
কিন্তু এই দলটাই পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে ছিলো দূর্দান্ত । ফাইনালের চাপ নিতে না পারার কারনেই ঘরে তুলতে পারেনি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।
- ঘটনা-২
২০০৯ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এই বিশ্বকাপে শ্রীলংকার দূর্দান্ত ওপেনিং জুটি। জয়সুরিয়া এবং দিলশানের ওপেনিং জুটি বিশ্বকাপের প্রত্যেক ম্যাচেই দলকে এনে দেয় দূর্দান্ত সূচনা। কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনালে এসে এই ওপেনিং জুটি ব্যাট হাতে সফল হতে পারেনি। দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ফাইট দেয়ার মত রান তুলতে পারেনি শ্রীলংকা।
অপরদিকে ছোটো লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে অতি সহজেই পেরিয়ে যায় শ্রীলংকার দেয়া লক্ষ্য।
সারা বিশ্বকাপে দূর্দান্ত খেলে ফাইনালে ম্যাচ হেরে যাওয়ার ঘটনা ছিলো এটি দ্বিতীয়।
- ঘটনা-৩
২০১১ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠে শ্রীলংকা। কিন্তু এইবারও সমর্থকদের হতাশ করে সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনেরা। মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে শ্রীলংকা। ব্যাট হাতে খুব ভালো করতে পারেনি পুরো বিশ্বকাপে ভালো খেলা দুই ওপেনার দিলশান এবং থারাঙ্গা। তারা আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরেন সাঙ্গাকার এবং জয়াবর্ধনে। জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিতে ভালো সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা।
কিন্তু বোলিং আক্রমণের ব্যর্থতার জন্য বিশ্বকাপের কাছে গিয়েও টানা দ্বিতীয় বারের মত স্বপ্ন ভঙ্গ হয় লংকানদের।
পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে দূর্দান্ত সব পারফর্মেন্স তাদেরকে বিশ্বকাপ জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচে প্রত্যাশার চাপে ভেঙ্গে পড়ে বিশ্বকাপ আর জেতা হয়ে উঠেনি।
- ঘটনা-৪
২০১২ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের অন্য ফেবারিট ছিলো শ্রীলংকা। ফেবারিটের তকমা গায়ে লাগিয়ে ভালোই পারফর্মেন্স করছিলো লংকানরা।
ফাইনালেও দূর্দান্ত শুরু করেছিলো শ্রীলংকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের ভালো মতই আটকিয়ে রাখতে পেরেছিলো। কিন্তু এর মাঝেও দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন মারলন স্যামুয়েলস। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এনে দেন লড়াই করার এক পুঁজি।
ব্যাটিং করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের মত একের পর এক প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লংকান ব্যাটসম্যানরা। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা এবং নুয়ান কুলাসেকারা ছাড়া কেউ দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি।
ঘরের মাঠেও স্বাগতিক দর্শকদের হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দেয় শ্রীলংকা।
পাঁচ বছরে চারটি বিশ্বকাপের ফাইনালে দলকে তুলে জিতাতে না পারার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান শ্রীলংকার সেরা প্রজন্মের ক্রিকেটাররা।