পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম দুই দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের রান উৎসব দেখার পর ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারও শুরু করেছিলেন একই ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশের এই হতাশা বেশি দীর্ঘায়িত হয়নি। দিনের শেষ সেশনে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। ৭ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশের থেকে এখনো ৩১২ রানে পিছিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারত্নে।
দিনের প্রথম সেশনে রানের পাহাড় গড়ে ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশের বোলারদের শুরুটাও ছিলো বেশ আশা জাগানিয়া। গতির সাথে বাউন্স এবং আগ্রাসন মিলিয়ে তাসকিন আহমেদ কাঁপিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও লাহিরু থিরিমান্নেকে।
তবে দাঁতে দাঁত চেপে মধ্যাহ্নভোজের আগের সময়টুকু কাটিয়ে দেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে সফরকারী বোলারদের সাবলীল ভাবে খেলেন দুই ব্যাটসম্যান। মেহেদি হাসান মিরাজ মন্থর টার্ন পেয়ে মোটামুটি ভালো বল করলেও বাকি দুই পেসার আবু জায়েদ ও এবাদত হোসেন প্রচুর আলগা বল করেন।
বার বার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ কাঙ্খিত সাফল্য পায় দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে। মিরাজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে যান লাহিরু থিরিমান্নে। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান। এক উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যাওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিলো ১১১ রান।
তবে দিনের শেষ সেশনে আর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। এই সেশনে দুই উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা সংগ্রহ করে ১১৮ রান। ফার্নান্দো ২০ রান ও ম্যাথিউজ ২৫ রান করে আউট হয়ে যান। দিন শেষে করুনারত্নে ৮৫ ও ধনাঞ্জয়া ২৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ। এর আগে দিনের শুরুতে ৪ উইকেটে ৪৭৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে সময়ের দাবি মিটিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন লিটন দাস। কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। ৩৯ বলে ২৫ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা লিটন ২৮ বলে আরো ২৫ রান যোগ করে গালিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান।
৬৭ বলে ৫০ রান করে লিটন ফিরে যাওয়ার পর হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকুর রহিমও। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরি করার পরেও মুশফিক দ্রুত রান তুলতে পারেননি। দ্রুত রান তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলামও। তাই প্রথম সেশনে ১৮ ওভার ব্যাটিং করার পর মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
ইনিংস ঘোষণার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিলো ৭ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রান। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৬৬ রান করে। এই নিয়ে দেশের বাইরে তৃতীয় বার ৫০০ এর বেশি রান করলো বাংলাদেশ। যার দুই বারই করেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ৬৩৮ শ্রীলঙ্কার মাটিতেই।
এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে ২০১৭ সালে ৫৯৫ রান করেছিলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এই ইনিংসে ব্যাট করেছে ১৭৩ ওভার। এর আগে সর্বোচ্চ ১৯৬ ওভার ব্যাট করেছিলো শ্রীলঙ্কার সাথেই; ২০১৩ সালে ৬৩৮ রান করার ইনিংসে।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন বিশ্ব ফার্নান্দো। বাংলাদেশের রানের পাহাড় গড়ার ইনিংসে এই পেসার শিকার করেন ৪ উইকেট। এছাড়া ধনাঞ্জয়া, লাকমল ও কুমারা শিকার করেন ১ টি করে উইকেট।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৪১/৭ ডিক্লেয়ার ওভার: ১৭৩ (তামিম- ৯০, সাইফ- ০, নাজমুল- ১৬৩, মুমিনুল- ১২৭, মুশফিক- ৬৬*, লিটন- ৫০*, মিরাজ- ৩, তাইজুল- ২, তাসকিন- ৬*; ফার্নান্দো- ৩৫-৯-৯৬-৪, কুমারা- ২৮-৪-৮৮-১,
লাকমল- ৩৬-১৪-৮১-১, ধনাঞ্জয়া- ৩০-১-১৩০-১)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ২২৯/৩ (ওভার: ৭৩; থিরিমান্নে- ৫৮, করুনারত্নে- ৮৫*, ফার্নান্দো- ২০, ম্যাথিউজ- ২৫, ধনাঞ্জয়া- ২৬*) (মিরাজ- ২৪-৬-৬০-১, তাসকিন- ১২-৩-৩৫-১, তাইজুল- ২০-৫-৫৬-১)