সৌরভের সুরভিত ব্যাটিংয়ের পরও দুর্গন্ধ

৮৭ রানে অপরাজিত থাকলেন মুমিনুল হক। ১৩ তম সেঞ্চুরির খুব কাছেই ছিলেন তিনি। তবে দলগত ব্যর্থতার টেস্টে একমাত্র প্রাপ্তি হয়ে রইলো মুমিনুলের এই ইনিংস। দলের বাকিদের বিপরীতে গিয়ে অন্তত টেস্ট সুলভ ইনিংসই খেলে গেলেন তিনি। নিজের প্রিয় প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে স্বদেশী ব্যাটারদের আবারও বুঝিয়ে দিলেন- টেস্ট কি করে খেলতে হয়।

শ্রীলঙ্কাকে মুমিনুল হকের পছন্দের প্রতিপক্ষই বল চলে। সাদা পোশাকে যখনই ব্যাট হাতে নেমেছেন তিনি, তখনই দারুণ সময় পার করেছেন। তবে এদিনের ইনিংসটি একটু হলেও ভিন্ন। যেমনটা তার নিজের জন্যে, তেমনি দলের জন্যেও।

দলের বাকি ব্যাটারদের দারুণ ব্যর্থতার এক নিদর্শনই হয়ে রইলো সিলেট টেস্ট। ধৈর্য্য নামক চারিত্রিক গুণ যেন কোথাও একটা হারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশি ব্যাটারদের। সবার মধ্যেই কেমন একটা তাড়া। সবাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের চাহিদা ঠিক কি। ফলাফল স্বরুপ বাংলাদেশ সিলেট টেস্ট হেরে গেছে ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।

রানের বিচারে ষষ্ঠ বড় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য স্বীকারই করেছিলেn যে তারা টেস্ট খেলার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না। মুমিনুলের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। তিনি সারাবছর ধরেই অপেক্ষায় থাকেন লাল বলের ক্রিকেটের। কেননা টেস্ট ক্রিকেটার তকমা জুড়ে গেছে তার নামের সাথে বহু আগেই। সেই তকমাকে আরও একবার যথার্থই প্রমাণ করলেন তিনি।

অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে এবারই যে প্রথম দলের বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন, তা নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাট হাতে বরাবরই উজ্জ্বল মুমিনুল। সিলেট টেস্ট সহ লঙ্কানদের বিপক্ষে ১২ ম্যাচ খেলেছেন মুমিনুল। ব্যাট করেছেন ২২ ইনিংসে।

তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বাধিক ম্যাচ এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই খেলেছেন মুমিনুল। স্বাভাবিকভাবে লঙ্কানদের বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি রান করেছেন বা-হাতি এই ব্যাটার। সিলেট টেস্টের হাফসেঞ্চুরি সহ মোট ৯৮৭ রান করেছেন তিনি। আর ১৩ টি রান করতে পারলেই এক হাজার রান পূর্ণ হতো। পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরির দেখাও পেয়ে যেতে পারতেন মুমিনুল।

তাতে করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও পঞ্চম সেঞ্চুরি আদায় করা হয়ে যেত তার। যা কি-না কোন নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মুমিনুলের সর্বোচ্চ। তবে এই হাফসেঞ্চুরির কল্যাণে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চতুর্থ অর্ধশতক পূর্ণ করেন। সেটাও সর্বোচ্চ।

তাতেই অন্তত প্রমাণিত হয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঠিক কতটা সাবলীল মুমিনুল। সিলেট টেস্টের চতুর্থ ইনিংসেও মুমিনুল সেই সাবলীল ব্যাটিংটাই করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে সতীর্থদের সহয়তা পাননি। তাইতো মুমিনুলের পরিসংখ্যান পায়নি নতুন সৌরভ।

দলগত ব্যর্থতার মাঝেও মুমিনুল নিজের কাজটা করে যান। একেবারে নিরবে-নিভৃতে। তার ব্যাটিংয়ে কোন বিখ্যাত চিত্রকর্মের মত সৌন্দর্য নেই। মারকাটারি ভঙ্গিমায় তিনি ব্যাটিং করেন না। তিনি টেস্টের মেজাজ, চাহিদা বোঝেন। ধৈর্য্যের ফল কতটা মধুর হতে পারে- তা তিনি জানেন। আর টেস্টকে বোঝেন বলেই মুমিনুল মুখ থুবড়ে পড়েন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link