শ্রীলঙ্কার নবজাগরণ

এইতো বছর দশেক আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। যেই দল ছিল তাতে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে লংকানরা। সেই শ্রীলঙ্কা দল হঠাতই যেনো এক গোলকা ধাঁধায় পড়ে গেল। দেশটির ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটাররা একটা সময় বিদায় জানালেন।

এইতো বছর দশেক আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। যেই দল ছিল তাতে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেও খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে লংকানরা।

সেই শ্রীলঙ্কা দল হঠাৎই যেনো এক গোলক ধাঁধায় পড়ে গেল। দেশটির ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটাররা একটা সময় বিদায় জানালেন। তবে এরপর আর তেমন কোন আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার তৈরি করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। অথচ একটা দশক আগেও বিশ্বক্রিকেটের পাওয়ার হাউজ ছিল দেশটি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা ক্রিকেটাররা খেলতেন দেশটির হয়ে। গত কয়েক বছর দেশটির ক্রিকেট যেন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তরুণ ক্রিকেটাররা কোন ভাবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে তাল মেলাতে পারছিলেন না। সবমিলিয়ে বিশ্ব আসরে ব্যর্থতা ও দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হোয়াইট ওয়াশই ছিল অধিকাংশ সময়ের প্রত্যাশিত ফলাফল।

শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও এক ভুতুরে সময় পাড় করেছে দেশটি। নানারকম তর্ক-বিতর্ক লেগেই আছে দেশটির ক্রিকেটে। কয়েক মাস আগেই বায়ো বাবল ভেঙে রাতে ক্রিকেটাররা বের হয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয় দেশটির ক্রিকেটে। সবমিলিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে যেনো এক অস্থিতিশীল অবস্থা।

তবে, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হঠাৎই যেন বদলে যাওয়া এক দল শ্রীলঙ্কা। যেই তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে এতদিন ভুগছিল দেশটি তাঁরাই এখন প্রতিদান দিচ্ছেন। বোলিং, ব্যাটিং , ফিল্ডিং তিন  ডিপার্টমেন্টেই চোখে পড়ার মত উন্নতি। শরীরী ভাষায়ও এসেছে দারুণ পরিবর্তন।

দুশমন্থ চামিরা বিশ্বকাপে ঘন্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। স্যুইং পাচ্ছেন এবং বোলের উপর কী ভীষণ নিয়ন্ত্রণ। টুর্নামেন্টের দারুণ সব বাউন্সারও এসেছে এই পেসারের কাছ থেকে। এছাড়া তাঁর সাথে ২৪ বছর বয়সী লাহিরু কুমারাও বল করছেন দারুণ গতিতে। যদিও বোলিং নিয়ে আরো কিছু কাজ করার সুযোগ আছে এই পেসারের সামনে।

ওপেনিং এ পাথুম নিসাঙ্কাও তাঁর সেরাটা দেখাচ্ছেন। এই ওপেনারের বয়স মাত্র ২৩ বছর। টুর্নামেন্টে ইতোমধ্যেই তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২২১ রান। তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধু তাঁরই সতীর্থ আসালাঙ্কা।

ওদিকে আসালাঙ্কাও দলের জন্য ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলছেন। ৪৯ বলে ৮০ রানের দারুণ কার্যকর এক ইনিংস দেখা গিয়েছে এবারের বিশ্বকাপে। এছাড়া থিকসানা কিংবা রাজাপাকশেরাও  নিজের দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করে যাচ্ছেন।

তবে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হয়ে উঠেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। মাত্র ২ বছর আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের নাম লিখিয়েছেন। তবে ইতোমধ্যেই গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায় নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মুহূর্তে দুনিয়ার সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় নিয়ে এসেছেন নিজেকে।

এই বিশ্বকাপেও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক তিনি। বিশ্বকাপের যেকোন এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার কৃতীত্বও তাঁর। ইতোমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন ১৬ টি উইকেট। ম্যাচের যেকোনো সময়ই দারুণ কার্যকর বোলিং করছেন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়ার প্লে তে দুই উইকেট নিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিডল অর্ডারে দারুণ বোলিং করেছেন এবং ডেথেও সমান কার্যকারিতা দেখাচ্ছেন। এই বিশ্বকাপে তাঁর গুগলি যেনো লাসিথ মালিঙ্গার ইয়োর্কারের মতই ভয়ানক হয়ে উঠেছে।

সবমিলিয়ে এই তরুণ শ্রীলঙ্কা দলটা এর মধ্যেই বিশ্বকাপে বাকি দলগুলোর সমীহ অর্জন করে নিয়েছে। তাঁদের থেকে যতটা আশা ছিল তারচেয়েও বেশি মাঠে ঢেলে দিচ্ছেন। এই বিশ্বকাপেও তাঁদের সামনে এখন বড় কিছু করার সুযোগ। সেটা হোক কিংবা না হোক, একটা নির্বাসন কাটিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ফিরে আসার গন্ধটা ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...