এক হাফ সেঞ্চুরির অনন্ত বেদনা

নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়ী তারকা অলরাউন্ডার আখ্যা পেয়েছিলেন শ্রীধরন শ্রীরাম। অনূর্ধ্ব- ১৯ দল থেকেই নজর কেড়েছিলেন নির্বাচকদের। ভাবা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারেন তিনি।

কিন্তু, মুদ্রার উল্টোপিঠই দেখতে হল শ্রীরামকে। মাত্র আট ম্যাচেই সীমাবদ্ধ ছিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। সম্ভাবনা আর আশার আলো নিভে গেছে অল্পতেই। ভবিষ্যত তারকা থেকে বনে গেছেন হারিয়ে যাওয়া প্রতিভা!

১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ুতে জন্ম শ্রীরামের। ১৯৯২-৯৩ অনূর্ধ্ব -১৯ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২৯ উইকেট শিকার করে নজর কেড়েছিলেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে যান আরো উপরে। রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পেয়ে দেখান নিজের ব্যাটিং প্রতিভাও।

সাজঘরে ফিরছেন শ্রীরাম, হাফ সেঞ্চুরি করেও সেটাই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে ৫ সেঞ্চুরিতে ৯৮ গড়ে ১০৭৫ রান করেন এই অলরাউন্ডার! পরের মৌসুমে ৬৬ গড়ে ১২৬৩ রান করেন তিনি। এমনকি ২০০২-০৩ মৌসুমেও ১ হাজারের বেশি রান করেন! ওই মৌসুমে বল হাতে ৩৩ গড়ে ১৬ উইকেট শিকার করেন তিনি। ভারতের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ারের পুরষ্কারটাও ঘরে তোলেন তিনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটের নজরকাড়া পারফরম্যান্সে ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নাগপুরে ওয়ানডে অভিষিক্ত হন শ্রীরাম। ৬ ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরই দলে জায়গা হারান তিনি। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরই ঘরোয়া ক্রিকেটে আবারও ফর্মের তুঙ্গে এই অলরাউন্ডার।

ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স তাঁকে আবারও টেনে নেয় জাতীয় দলে। ২০০৪-০৫ মৌসুমে বাংলাদেশ সফরে ২ ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে ৩ উইকেট ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৫৭ রান করেন! ওই ম্যাচটি অবশ্য হেরে যায় ভারত। এরপর আর ভারতের জার্সিতে সুযোগ হয়নি শ্রীরামের!

২০০৪ সালে স্কটল্যান্ডে ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলেন শ্রীরাম। এছাড়া দুলীপ ট্রফিতে সাউথ জোনের হয়ে খেলছেন তিনি। ২০০৭ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) অংশ নেন এই অলরাউন্ডার। তামিলনাড়ু ছাড়াও মহারাষ্ট্রের হয়ে এবং হিমাচলের হয়ে ২০১১ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন শ্রীরাম।

একটা জায়গায় তাঁর সাথে মিল আছে ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত রাহুল দ্রাবিড়ের। তিনিও কাউন্টি ক্রিকেটে কিছুকাল খেলেন, দ্রাবিড়ের মতই স্কটল্যান্ড দলের হয়ে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলার পর দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের হয়ে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন শ্রীরাম। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের সাথেও কাজ করেছেন এই অলরাউন্ডার, স্পিন বোলিং পরামর্শক হিসেবে। এছাড়া নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের হয়েও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

খেলোয়াড়ী জীবনে ঘরোয়া ক্রিকেটেই নিজের সামর্থ্য দেখাতে পেরেছেন শ্রীরাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি! পারেননি সামর্থ্যের সিকিভাগও দেখাতে। কোচ হিসেবে অবশ্য বেশ পরিচিতি লাভ করেন তিনি। কোচিংকেই পরবর্তীতে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না ফোটা ফুল হিসেবে আক্ষেপটা হয়তো আজীবন বয়ে বেড়াবেন এই অলরাউন্ডার।

শ্রীরামকে বাংলাদেশের ভক্তরা চাইলে মনে রাখতে পারেন। শ্রীরাম তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন ঢাকার মাঠে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ২২৯ রানের জবাবে লক্ষ্য থেকে ১৬ রান দূরে থাকতে থেমে যায় ভারত। বাংলাদেশ জিতে ১৫ রানের ব্যবধানে। সেবারই প্রথমবারের মত ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশ তাকে মনে রাখতে পারে অন্য আরেকটা কারণেও, বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

৯১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে মোহাম্মদ কাইফের সাথে ভারতের লড়াইটা চালাচ্ছিলেন এই শ্রীরামই। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি, না ম্যাচের – না শ্রীরামের ক্যারিয়ারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link