স্থিতধী তলোয়ার

কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে, আজ থেকে বছর ১৭-১৮ পরেও এই টেস্টটা নিয়ে আলোচনা হবে। হবেই, হতে বাধ্য। বাঙালি লড়াই পছন্দ করে, বলা ভাল লড়াকু মানসিকতাকে বেশ প্রায়োরিটি দেয়। তাই ভাবনা হয়, টেস্টটার ঐতিহাসিক মূল্যটুল্য নিয়ে যদি কথা ওঠে। অথচ যাকে নিয়ে আজকে কথা ওঠা উচিত, তিনি ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে ফিরে ফলের রস হাতে রিল্যাক্স মুডে।

আজ থেকে বছর দশেক পরে ভারতীয় ক্রিকেটে একটা শব্দ বহুল জনপ্রিয় হতে চলেছে। ‘৩৬ অল আউট’। ইঁট গাঁথার আগেই ঝড়ো হাওয়া এসে তছনছ করে দিয়েছে। এই ঝড় কিন্তু আমফান নয়, বরং ঝড়টা নিজেই নিজের গতি বাড়িয়েছে।

নিজেকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচয় না দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ব্যবহারটা করেছে অ্যাডিলেডে। তার সামনে দাঁড়ানোর সাধ্য হয়নি সৈনিকগুলোর। সেটা দেখে দলের সবচেয়ে দুজন(একজন বাইরে, একজন মাঠে) অভিজ্ঞ সৈনিক দাঁত দিয়ে নখ কাটছিলেন নির্ঘাত! দলের সহ-অধিনায়ক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছিলেন সবার মুখ, রক্তক্ষয়ের পর।

দলও বোধহয় আবার তাকে ফলো করেছিল। এই নীতিগুলো না হলে পরের ম্যাচে ব্যাক টু ব্যাক দুটো ইনিংসে অপরপক্ষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যাটকে দু’অঙ্কের রান করতে না দেওয়া – জাস্ট যায় না।

আপাত স্থিতধী, ভদ্র, নম্র। আরেকটা কথা লোকটা সম্পর্কে কেউ লেখেনা। লোকটা অসম্ভব বিনয়ী। ন্যক্কারজনক রানআউটের পর লোকটা ক্রিজে দাঁড়িয়েই নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছিল, সমস্ত চাপটা নিজের ঘাড়ে নিয়েছিল। নাহলে অন দ্য স্পট ওইভাবে চাপ নিয়ে না খেলে যদি ধীরে এবং ধরে খেলত, অ্যাডিলেডেই ব্যাটে একটা সত্তর অন্তত আসত।

তা হয়নি, বরং উল্টোটাই হল। দল থেকে সাময়িক অবসরে সেরা ব্যাটসম্যান এবং লোকটার ছাদ। আদর করে যে ছাদকে লোকে ক্যাপ্টেন নামে ডাকে। একই সময়ে সবচেয়ে বিশ্বস্ত পেসার চোট খেয়ে গুডবাই করে দিলেন। বদলে কারা? যারা একটাও টেস্ট খেলেনি। দুটো ২১-২২ বছরের ছেলে। সঙ্গেই বা কারা? টেস্ট খেলেছে, কিন্তু অভিজ্ঞ হতে বহু দেরী, তাই সই।

এই নিয়ে নেমে, দেশবাসীর অসহ্য গালাগাল খেয়ে, উপরন্তু দায়িত্ব নিয়ে – সে কিরকম দায়িত্ব যদি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী একবার অনুভব করতে পারতো। যাক গে, এইসবকে লোকটা জাস্ট স্কোয়ার কাট করে অ্যাডভার্টাইস বোর্ডে ফেলে দিল! ১১২ রান করে ব্যাট উঁচিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরল। বীরগাথা বলে লোকে ভুল করতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়।

দায়িত্ব পাওয়ার পর লোকটা একটা অদ্ভুত কাজ করল। বোলিং ডিপার্টমেন্টের মোস্ট সিনিয়র লোকটাকে গোটা ডিপার্টমেন্টেরই দায়িত্ব দিল। যাকে দেওয়া হল, সে প্রতি ওভারে বোলারের সাথে কথা বলে, পিঠ চাপড়ায়, নির্দেশ দেয় আবার ঠিক সময় নিজেই এসে জমে যাওয়া পার্টনারশিপ ভেঙে দুটো উইকেট তুলে নেয়।

এমন একটা সময় নতুন বোলারটাকে আনল, যখন টার্নিং বল ডিফেন্স করতে করতে ক্রিজে জমাট হচ্ছে এক বাঁহাতি। পেসারটা এল, ফোর্থ স্টাম্পে হালকা অফকাটার, কানায় লাগিয়ে ময়াঙ্কের হাতে ক্যাচ! গোটা মেলবোর্ন প্যাকেজটাই ত মন ভরিয়ে দিয়েছে, এগুলো ছোট ছোট ভালোলাগার মুহূর্ত বলছি শুধু।

সিডনি। স্টিভের লাল রুমালের মাঠ, শচীন টেন্ডুলকারের ২৪১-এর মাঠ, অনিল কুম্বলের আট উইকেটের মাঠ, ভিভিএস লক্ষ্মণের চোয়ালে বল খেয়ে ১৬৭-এর মাঠ। আপাতদৃষ্টিতে আমার কাছে সিডনিতেও অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে আছে। কারণটা একমাত্র বোলিং ডিপার্টমেন্টের জন্য। আর এই টেস্টের পর অস্ট্রেলিয়া ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্টে উন্নতি করলে ভারতের কপালে কিঞ্চিত দু:খ আছে।

তবু খেলা দেখবো এই লোকটার জন্য, লোকটার ক্যাপ্টেন্সি আর ব্যাটিং দেখার জন্য। যে যাই বলুক, জিঙ্কস ইজ অলওয়েজ ফেভারিট। প্রতিটা বল দেখব, প্রতিটা বল করানো দেখব। আফটার অল, টেস্ট ক্রিকেট ইজ দ্য হায়েস্ট স্টেজ অফ অল ফরম্যাট অব ক্রিকেট, বিকজ ইট হ্যাজ আ ক্লাস স্টিল নাও। ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link