দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি উইকেট। প্রোটিয়া পেসার আন্দ্রে ফেলুকাউ এর শর্ট লেন্থে পিচ করা বলটা প্রায় ১৪০ কিমি গতিতে ধেয়ে আসছে ব্যাটসম্যানের মাথা বরাবর। একেবারের জন্যও বলের উপর থেকে চোখ সড়াননি, অপেক্ষা করেছেন। চোখ ধাঁধানো এক হুক শটে বল গিয়ে পড়লো সেঞ্চুরিয়ন পার্কের সীমানার বাইরে। ওয়ানডে দলের নবীনতম সদস্য ইয়াসির আলী রাব্বি যেন দক্ষিণ আফ্রিকারের মাটিতে নতুন বাংলাদেশের প্রতীক।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দলের পূর্ব রেকর্ড করুণ। আজকের ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোন ম্যাচই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর আজ টস হেরে বাংলাদেশকে ব্যাটিং করতে নামতে হয়েছে। ফলে প্রথমদিকে সেঞ্চুরিয়নের শক্ত পিচে প্রোটিয়া পেসারদের সামলানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে শুরুর সেই কঠিন সময়টা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। দুজনের ৯৫ রানের ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশ একটা শক্ত ভীত পেয়েছিল। তবে এরপর আবার এই দুইজন পরপর আউট হয়ে ফিরলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
আর সেই চাপ সামলে উঠার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের সাথে পরে কাধেও কাঁধ মিলিয়ে লড়াইটা করেন ইয়াসির রাব্বি। আজ নিজের চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামলেন। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হলেও শুরুটা ভালো হয়নি। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে রাব্বির নিজেকে প্রমাণ করতেই হতো।
রাব্বি সেই কঠিন চাপটাই সামলে নিলেন। বাংলাদেশকেও বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে গেলেন। আসলে কঠিন সময়েই রাব্বির ভিতর থেকে সেরাটা বের হয়ে আসে। এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে টেস্টে দারুণ ক্রিকেট খেলেছেন। এবার ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমাণ করার ছিল।
রাব্বি সেটাই করে দেখালেন। নিজের ও দলের কঠিন সময়েই বেরিয়ে আসলো রাব্বির সেরাটা। ইয়াসির আলী রাব্বির বাবা বলেছিলেন,’ ছেলেটা সহজে কিছু পায়না। ওকে অনেক বেশি পরীক্ষা দিতে হয়। তবে যত কঠিন সময়ই আসুক ভেঙে পড়েনা।‘
সত্যিই রাব্বি ভেঙে পড়েননি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় ইনিংস। তাও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেরা প্রোটিয়া পেসারদের সামনে ফালানো হলো। শুরুতে একটু সময় নিয়েছেন বটে। তবে পরে ধীরে ধীরে রাব্বির হাত খুলেছে। উইকেটের চারদিকে চোখ জুড়ানো কিছু শট খেলেছেন। ভালো বলেও সিঙ্গেল নিয়ে সাকিবকে স্ট্রাইক দিয়েছেন।
সেঞ্চুরিয়নের বাউন্সি উইকেটে পুল, হুক, কাট সবই খেলেছেন। যেন কতকাল ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্রিকেট খেলছেন। এই উইকেটটা যেন তাঁর চেয়ে বেশি কেউ বুঝেনা। সাকিবের সাথে গড়লেন ১১৫ রানের বিশাল এক জুটি। এই দুইজনের ব্যাটে চড়েই বড় স্কোরের পথে হেটেছে বাংলাদেশ।
রাব্বি পাঁচ নাম্বারে যখন ব্যাট করতে নামেন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১২৪ রানে তিন উইকেট। সেখান থেকে দলকে নিয়ে গিয়েছেন ২৪৩ রান অবধি। আউট হবার আগে খেলেন ৪৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১১৩.৬৩ স্ট্রাইকরেটে।
অথচ এই দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে কখনোই সেভাবে লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবারো দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ভয়ের শেষ ছিল না। তবে বাংলাদেশের তরুণ এই ক্রিকেটার প্রমাণ করলেন তাঁরা এখন নতুন দিনের ক্রিকেট খেলেন। এই কঠিন কন্ডিশনেও বিশ্বের সেরা পেসারদের বিপক্ষে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় তাই দেখিয়ে গেলে ইয়াসির রাব্বি।