যেতে নাহি দিব হায়,
তবু যেতে দিতে হয়,
তবু চলে যায়।
লিভারপুল ভক্তদের মনে এখন নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথের বিদায়ী গানটির সুর বাজছে। বাজবেই না কেন, এত প্রার্থনা আর অনুরোধেও কাজে হয়নি। ২০১৬,১৭ এর পর থেকে যাদের অবদানে নিজেদের ক্লাবটি যে পরাশক্তি হয়ে উঠেছে তাদের একজন আজ বিদায় নিচ্ছেন। তিনি সেনেগাল তারকা সাদিও মানে।
লিভারপুলের সাথে ছয় বছরের দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক ছিন্ন করে ইতোমধ্যে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দিয়েছেন সাদিও মানে। ৩৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বাভারিয়ান শিবিরে যোগ দেয়া এই উইঙ্গার ক্লাবটির সাথে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি করেছেন।
অবশ্য লিভারপুল এফসি’র সঙ্গে আরো এক বছরের চুক্তি ছিল সাদিও মানের। কিন্তু গত কয়েকমাস থেকেই গনমাধ্যমে গুঞ্জন ছিল, ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাদিও মানে। এবং এই সিদ্ধান্ত তিনি কোচসহ ম্যানেজম্যান্টের সবাইকে জানিয়েও দিয়েছেন। সেই গুঞ্জনকে সত্যি করে এবার আসলেই ইংলিশ ক্লাবটিকে বিদায় বলে দিলেন সেনেগাল অধিনায়ক।
এই ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে মোহামেদ সালাহের সাথে সাদিও মানে’র প্রতিদ্বন্দ্বীতা সবচেয়ে বড় কারন। এক বনে দুই বাঘ থাকে না – বাংলা প্রবাদটি সত্যি হয়েছে লিভারপুল ড্রেসিং রুমের জন্যও। সালাহ আর মানে বিতর্ক বারবারই উঠেছিল। তবে সাদিও মানে জানিয়েছেন তার শহরের মানুষেরা তাকে অন্য ক্লাবে দেখতে চায় আর এজন্যই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবশ্য সাদিও মানে’র ভক্তদের এমন চাওয়ার কারনও যে লিভারপুলে মোহামেদ সালাহ’য়ের একক আধিপত্য সেটি বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে বায়ার্নের বর্তমান স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ানডস্কিও চাচ্ছেন অন্য কোন ঠিকানা। তাই জার্মান জায়ান্টদের প্রয়োজন ছিল নতুন কোন সুপারস্টার। সবমিলিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে সাদিও মানে আর বায়ার্ন মিউনিখ এসেছে একই চুক্তিতে।
লিভারপুলে নিজের প্রায় অর্ধযুগের এক ক্যারিয়ারে সাদিও মানে খেলেছেন ২৬৯ ম্যাচ। এই সময়ে নিজে করেছেন ১২০ গোল, এর পাশাপাশি সতীর্থদের ফিয়ে করিয়েছেন আরো ৪৮ গোল। এছাড়া অলরেডদের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগ কাপ, এফএ কাপ এবং ফিফা ক্লাব কাপ সহ সম্ভাব্য সব ট্রফি জিতেছেন মানে।
পরিসংখ্যানের বাইরেও অন্যরকম এক সফলতা রয়েছে সাদিও মানের। আজকের লিভারপুল হয়ে ওঠার পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তার। কোচ ইউর্গেন ক্লপের প্রিয় শিষ্যদের একজনই ছিলেন তিনি।
সত্যি বলতে, সাদিও মানে লিভারপুলে এসেছিলেন একজন সাধারণ ফুটবলার হিসেবেই। কিন্তু ইউর্গেন ক্লপের অধীনে আর লিভারপুলের আলো বাতাসে তিনি হয়ে উঠেছেন সময়ের অন্যতম সেরা। বিশেষ করে গত মৌসুমের পারফরম্যান্সের বিচারে তাকে সেরা দশে রাখতে বাধ্য হবেন যেকেউ।
তবে বাস্তবতা আসলে আবেগ মানে না, তাই হয়তো এত সফলতার পরেও সাদিও মানের জীবনে লিভারপুল-অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। অবশ্য তার এই ট্রান্সফারে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন মানে। বিক্রি করা খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে তিনি এখন অলরেডদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী ফুটবলার।
ট্রান্সফার উইন্ডো ফুটবলেরই আরেক খেলা। এই খেলার মারপ্যাচে হয়তো আবার অন্য কোন ফুটবলার আসবেন লিভারপুলে। উল্টোটাও হতে পারে – চলে যাবেন কেউ কেউ। আসা যাওয়ার এই মিছিলের মাঝেও সাদিও মানের প্রভাব কিন্তু থেকে যাবে লিভারপুল শিবিরে।
সেনেগালের এই বিনয়ী যুবক লিভারপুল ভক্তদের হৃদয়ে রয়ে যাবেন চিরদিন। শুধুই একজন ফুটবল খেলোয়াড় নয়, সরল মনের ভালো মানুষ হিসেবেও সাদিও মানেকে সবসময় ভালোবেসে যাবে ফুটবল সমর্থকরা।