আইরিশ ক্রিকেটের মহাতারকা

২০০৭ সালে প্রথম আইরিশ ক্রিকেটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন পোর্টারফিল্ড। এরপর কাউন্টি দল গ্লস্টারশায়ারের কাছ থেকে তিন বছরের চুক্তির প্রস্তাব পান এই আইরিশ অধিনায়ক। গ্লস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন বেশ কিছু সময়।

আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাস খুব বড় না। এইতো বছর খানেক আগে ২০২১ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে দেশটি। এর আগ অবধি আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতো আইরিশরা। বড় দলগুলোর সাথে বিশ্ব মঞ্চ ছাড়া খুব একটা খেলার সুযোগ পায় না বললেই চলে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর অবশ্য বিশ্বকাপের মঞ্চেও উঠে আসতে হিমসিম খাচ্ছে দলটি।

আইরিশ ক্রিকেটে বেশ কিছু প্রতিভাবান আর বড় তারকা খেলোয়াড় আছেন। যাদের অনেকেই পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে নিজেদের বিশ্বসেরাদের কাতারে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে আয়ারল্যান্ডের জার্সি গায়ে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে নিজের সেরাটা দিয়ে গিয়েছেন। এদেরই একজন আয়ারল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড।

আয়ারল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৩ দল থেকে যাত্রা শুরু। বয়সভিত্তিক প্রতিটা দলেই তিনি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৬ সালে নামিবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। ট্রেন্ট জনস্টনের অধীনে ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন পোর্টারফিল্ড। এরপর দ্রুতই অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব কাঁধে ওঠে। ট্রেন্ট জন্সটনের স্থলে ২০০৮ সালে প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান।

জাতীয় দলে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচকদের ভাবনায় ছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সেই পদটাও দ্রুতই নিজের করে নেন পোর্টারফিল্ড। মাত্র ২৪ বছর বয়সে পান অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব। সেই থেকে আইরিশ ক্রিকেটকে প্রতিনিধিত্ব করে গিয়েছেন লম্বা সময় ধরে।

২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে নর্দাম্পটনশায়ার, ডার্বিশায়ার ও কেন্টের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ না থাকায় বেশ কিছু ক্রিকেটারই কাউন্টিতে নাম লেখাতেন।

খর্বশক্তির এই আইরিশ দলটার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন পোর্টারফিল্ড। অভিষেকের পর বছর খানেকের মাঝে ২০০৭ সালে বারমুডার বিপক্ষে মেইডেন ওয়ানডে সেঞ্চুরি করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। পরের ম্যাচেই কেনিয়ার বিপক্ষে জুড়ে দেন আরেকটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি।

ওই মৌসুমটা ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় পার করেন তিনি। সেবার ২০০৭ সালে প্রথম আইরিশ ক্রিকেটার হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন পোর্টারফিল্ড। এরপর কাউন্টি দল গ্লস্টারশায়ারের কাছ থেকে তিন বছরের চুক্তির প্রস্তাব পান এই আইরিশ অধিনায়ক। গ্লস্টারশায়ারের হয়ে খেলেছেন বেশ কিছু সময়।

এরপর বিশ্বকাপ মিশন। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংসে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন এই আইরিশ তারকা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেও তখনও তিনি অপেক্ষায় ছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মেইডেন সেঞ্চুরির। সেই অপেক্ষার প্রহর অবশ্য বেশিদিন গুনতে হয়নি। ২০০৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও মেইডেন সেঞ্চুরি তুলে নেন এই তারকা।

২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাটিতে মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায় আয়ারল্যান্ড। সেবারও ব্যাট হাতে বেশ ভাল পারফর্ম  করেন পোর্টারফিল্ড। তাঁর অধীনেই ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দলকে হারায় আইরিশরা। ইংল্যান্ড ছাড়াও ওই আসরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও জয় পায় আইরিশরা।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১টি সেঞ্চুরি করেছেন পোর্টারফিল্ড। এর মধ্যে দু’টি সেঞ্চুরি আছে শক্তিশালী ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। অবশ্য দলের বাকিদের ব্যর্থতায় দুই ম্যাচেই হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে আইরিশরা।

আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেন পোর্টারফিল্ড। ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে লম্বা সময় তিনি অধিনায়ক হিসেবে দলকে আগলে রেখেছিলেন। খেলেছেন ৩ টেস্ট, ১৪৮ ওয়ানডে ও ৬১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি প্রায় ১২ হাজারের বেশি রানের মালিক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...