ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিলো ১২২ রান, হাতে ৮ উইকেট। চোখের দেখায় প্রোটিয়াদের জন্য জয়টা সহজ মনে হলেও এই লক্ষ্যটা ছিলো বেশ দূরুহ।
চতুর্থ দিনের শুরুটা অবশ্য মোটেও শুভকর ছিলো না প্রোটিয়াদের জন্য। কালোমেঘে ঢাকা আকাশ যেনো ভিন্ন বার্তাই দিচ্ছিলো। বৃষ্টিতে প্রথম দুই সেশনই ভেস্তে যায়। শামি-বুমরাহদের পেস অ্যাটাকের সাথে বৈরি আবহাওয়া যেনো আতংকে রূপ নেয় এলগার-বাভুমাদের সামনে।
তবে সেই দূরুহ লক্ষ্য সহজ করে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে প্রোটিয়াদের জয় এনে দিয়েছেন অধিনায়ক ডিন এলগার। দিনের প্রথম দুই সেশনই ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি, শার্দুল ঠাকুর, সিরাজদের পেস দাপটের সাথে অভিজ্ঞ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনে সামনে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনাটা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বুমরাহ-শামিদের একের পর এক বাউন্সার আর গতির সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এলগার। তবে জোহানেসবার্গের মেঘ জমাট আকাশে ঠিক আলোর রেখে খুঁজে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক।
ভারতের মতো কঠিন প্রতিপক্ষ, বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং অ্যাটাক, বৈরি কন্ডিশন, নিজেদের ব্যাটিং ডেপথ – সব বিবেচনায় নিয়েই গুরুদায়িত্বটা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এলগার। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে খেলা মাঠে গড়ালে দিনের তখনো প্রায় ৩৪ ওভার খেলার সম্ভাবনা ছিলো। ভারতের দরকার উইকেট আর প্রোটিয়াদের লক্ষ্য উইকেটে থিতু হওয়া। শামি, বুমরাহ, শার্দুলদের একের পর এক বাউন্সারেও মাথা নোয়াননি এলগার।
চতুর্থ দিনে তৃতীয় উইকেটে রাসি ভ্যান ডার ডাসেনের সাথে ৫৭ রানের জুটির পথে দলকে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান এলগার। একপ্রান্তে থিতু হয়ে ব্যক্তিগত ফিফটিও তুলে নেন তিনি। দলীয় ১৭৫ রানে ডাসেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে ফিরলেও একপ্রান্তে নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন এই ওপেনার। টেম্বা বাভুমার সাথে বাকি পথটা তিনি পাড়ি দেন সহজেই। এলগারের অপরাজিত ৯৬ রানে ৭ উইকেট দুর্দান্ত জয় পায় প্রোটিয়ারা। মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও ম্যাচ জয়ী নায়ক হিসেবে সেই আক্ষেপটা নিশ্চয়ই থাকবে না এলগারের।
এলগারের ব্যাটিংয়ে বলিউডের অন্যতম সেরা মুভি চেন্নাই এক্সপ্রেসে শাহরুখ খানের ডায়লগটা কানে বাজলো! ‘ Don’t underestimate the power of a common man ‘ (কখনোই একজন সাধারণ মানুষের ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করো না)।
প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করে এই কথাটিই যেনো আবারো প্রমাণ করে দিলেনে এলগার। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পারফরম্যান্স, ভারতের শক্তিমত্তা সব মিলিয়ে এই টেস্টেও ফেবারিট ছিলো ভারত। তবে চতুর্থ ইনিংসে এলগারের দায়িত্বশীল ইনিংস ভারতের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ফলাফল এনে দেয় প্রোটিয়াদের পক্ষে। অধিনায়কের ব্যাটেই সিরিজ সমতায় আনলো প্রোটিয়ারা।