গল্পটা অল্প বয়সের। চতুর্থ শ্রেণিতে থাকতেই বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন মুশফিক হাসান। অভাব-অনটনের কারণে বাবা-মা এসেছিল ঢাকায়। বাবা-মায়ের অবর্তমানে নানি ছিলেন আশ্রয়স্থল। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে ছিল মুশফিকের মনে। রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা থেকে উঠে এসেছেন এই পেসার।
২০১৮ সাল! লালমনিরহাট দ্বিতীয় বিভাগ লিগে প্রথমবার সুযোগ হয় মুশফিকের। সেখান থেকেই শুরু ক্রিকেট বলে যাত্রা। প্রথমবারই দারুণ বোলিং। মন জয় করেছিলেন সেখানে উপস্থিত রংপুর বিভাগীয় কোচের। কোচের পরামর্শে মাস-দুয়েক পর মেডিক্যাল টেস্ট করেন মুশফিক। সেখানে লেটার মার্ক পাওয়ায় সুযোগ হয় বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলে।
মুশফিকের ক্রিকেটীয় ভাগ্য ঘুরে যায় ২০১৯ সালে। বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন। ভর্তি হয়েছিল ক্রিকেট কোচিং স্কুলে। জেলা দলের হয়ে পাবনায় খেলতে গিয়ে নজরে আসেন বিসিবির এক কোচের। প্রমোশন পেয়ে অনুর্ধ্ব-১৬ থেকে বিকেএসপি ক্যাম্পে সুযোগ হয় অনূর্ধ্ব-১৮ দলে।
সেবছর পাকিস্তান অনুর্ধ্ব-১৮ দলের বিপক্ষে দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। বোলিংয়ে গতি আর ইয়র্কারে ছড়িয়েছিল মুগ্ধতা। সবশেষ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন মুশফিক।
দেশের ঘরোয়া লিগে নিয়মিত পারফরম্যান্স করেছেন মুশফিক। প্রথম বিভাগ লিগে নিজের প্রথম মৌসুমে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। ম্যাচ খেলেছিলেন ৬টি। ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্টে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
মুশফিক এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ১৩টি। উইকেট নিয়েছেন ৪৯টি। এছাড়াও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১৩ ম্যাচে নিয়েছেন ১৫ উইকেট।
৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার মুশফিকের বোলিংয়ে শক্তির জায়গা গতি। মুশফিকের বাউন্স আর ইয়র্কারে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ব্যাটারদের।
২১ বছর বয়সী মুশফিকের বোলিং মুগ্ধ করেছে জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডকে। মুশফিক প্রসঙ্গে ডোনাল্ড বলেছিলেন, আমি মুশফিক হাসানে দারুণ মুগ্ধ হয়েছি। তরুণদের মাঝে সে খুবই শক্ত পোক্ত অ্যাথলেট।’
ধারাবাহিক পারফর্ম করায় রাডারে ছিলেন মুুশফিক। এবার সুযোগ হয়েছে জাতীয় দলের স্কোয়াডে। নিজের বোলিংয়ের জায়গায় উন্নতি করার দারুণ এক সুযোগ এই পেসারের সামনে।
বাংলাদেশ পেস ইউনিটের চরিত্র বদলে দিয়েছেন অ্যালান ডোনাল্ড। এমন এক কোচের সাথে এবার কাজ করার সুযোগ পাবেন মুশফিক। কোচের গুডবুকে থাকায় কাজটি আরও সহজ হবে মুশফিকের জন্য। এছাড়াও বর্তমান ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম সেরা পেসার তাসকিনকেও পাচ্ছেন কাছেই। অনুশীলন থেকে ড্রেসিংরুম, ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন সুযোগ সমৃদ্ধ করতে পারে মুশফিকের ক্যারিয়ার।
অভাব দেখে বড় হয়েছেন মুশফিক। দেখেছেন বাবা-মায়ের আত্মত্যাগ। সেই আত্মত্যাগের প্রতিদান তিনি নিশ্চয়ই দিতে চান।