জীবন খেলার লড়াকু অলরাউন্ডার

ক্রিকেট খেলায় সুধির নায়েক ছিলেন একজন ওপেনার, জাতীয় দলেও খেলেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন অলরাউন্ডার। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন অলরাউন্ডার। ছোট্ট এক জীবন মানুষের সেই জীবনে তিনি ভিন্ন সব চাকুরী করেছেন। তাছাড়া ক্রিকেটটাও খেলেছেন সমানতালে। চাকুরী জীবনে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত যেমন ছিলেন তেমনি ক্রিকেট থেকে বহুদূরেও ছিলেন সুধির নায়েক।

ক্রিকেট খেলায় সুধির নায়েক ছিলেন একজন ওপেনার, জাতীয় দলেও খেলেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন অলরাউন্ডার। সত্যিকার অর্থেই তিনি ছিলেন অলরাউন্ডার। ছোট্ট এক জীবন মানুষের সেই জীবনে তিনি ভিন্ন সব চাকুরী করেছেন. তাছাড়া ক্রিকেটটাও খেলেছেন সমানতালে। চাকুরী জীবনে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত যেমন ছিলেন তেমনি ক্রিকেট থেকে বহুদূরেও ছিলেন সুধির নায়েক।

সুধির নায়েক, ১৯৪৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্মেছিলেন তৎকালীন বোম্বেতে। পরে অবশ্য বোম্বের নাম বদলে এখন হয়েছে মুম্বাই। আর চার-পাঁচটা শিশুদের মতই তাঁর ক্রিকেটের হাতেখড়ি টেনিস বল আর ভাঙাচোড়া ব্যাটেই। সেখান থেকেই শিখেছিলেন কি করে খেলতে হয় ক্রিকেট। জীবনের শুরুর দিকে তিনি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কারের মত কিংবদন্তির সাথে।

তবে ক্রিকেট থেকে বেশি মনযোগটা তাঁর ছিল পড়াশোনা। তিনি মূলত ক্রিকেটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাননি। তিনি বরাবরই চেয়েছিলেন একজন চাকুরীজীবী হতে। যে কিনা একটা এয়ারকন্ডিশনার রুমে বসে কর্তৃত্ব চালাবেন বাকিদের উপর। তাঁকে সব সময় বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতে দেখা যেত। এমন কি ক্রিকেট খেলতে ট্যুরে থাকাকালীন সময়েও তিনি তাঁর ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন তাঁর পাঠ্যপুস্তক।

শিক্ষা জীবনে তিনি বেছে নেন জৈব রসায়নের মত এক কঠিন বিষয়। সেই বিষয়ে তিনি মাস্টার্স করেছিলেন। সেখানেও বেশ ভাল ফলাফল নিয়েই তিনি শেষ করেছিলেন পড়াশোনা। তাঁর এমন আগ্রহের কারণ তাঁর সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট অবস্থা এতটা ভাল ছিল না। পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেওয়াটা এক ধরণের বোকামি হিসেবেই গণ্য হত।

তবে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ক্রিকেটটা ঠিকই চালিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতের সবচেয়ে প্রাচীনতম টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে তিনি বোম্বের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন। এমন কি সেই দলকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ম্যাচ খেলেছেন ৮৫টি। সাতটি সেঞ্চুরি মিলিয়ে তিনি মোট রান করেছিলেন ৪৩৭৬ রান। দারুণ ছন্দে থাকা সুধীর হয়ত ভেবেছিলেন এই বুঝি ডাক এল জাতীয় দলে।

অবশেষে ১৯৭৪ সালে তিনি ভারত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে তাঁর ক্যারিয়ারটা খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি। তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন ক্রিকেট থেকে। এর পেছনে অবশ্য ভাল এক চাকরির সন্ধান পাওয়া ছিল অন্যতম প্রভাবক। তিনি জৈব রসায়নের ছাত্র হিসেবে জায়গা করে নেন ভারতের বিখ্যাত টাটা কোম্পানির তেল কারখানায় চাকরি পেয়ে যান।

১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে তাঁকে বোম্বে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজিং কমিটিতে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এরপরের পদক্রমায় তিনি নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৭ সালের দিকে তাঁকে মাঠ পরিচর্যার দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হলে সুধীরের ভিতরে থাকা ক্রিকেট সত্ত্বা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারেননি। দায়িত্ব নিয়ে নেন।

এরপর ১৯৯৬ সালের দিকে তিনি মাঠ পরিচর্যার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তাঁর তেল কোম্পানির চাকরিতে পদোন্নতি হয় এবং তাঁর দায়িত্ব বেড়ে যায়। আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়াঙখেড়ে স্টেডিয়ামের পুন:গঠিত করার। প্রায় তিন বছরের কাজ মাত্র ১৬ মাসে করে দিয়ে তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

সেই স্টেডিয়ামেই পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ এর ঐতিহাসিক ফাইনাল। যেই ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির সেই ঐতিহাসিক ছয় নিশ্চয়ই স্মৃতির পাতায় মলিন হয়ে যায়নি। সে যাই হোক সুধীর নায়েকের মত এই অলরাউন্ডার হয়ত চিরদিনই থেকে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। তাঁদের নিয়ে গল্প হয় না, হয় না আলোচনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...