আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় টিকে থাকার জন্য ক্রিকেটীয় প্রতিভা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে শুধুই ক্রিকেটীয় প্রতিভা কী যথেষ্ট?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানে কোটি মানুষের আলোচনা-সমালোচনাকে পিছনে ফেলে বাইশ গজে জবাব দেয়া। তবে তাঁর জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড মানসিক দৃঢ়তা। অনেকেরই প্রতিভা থেকে বিশ্বক্রিকেটের সেরাদের সেরা হবার। তবে সবাই কেনো হতে পারেন না? তাঁরা হার মেনে যান অপ্রত্যাশিত নানা দিকের কাছে।
দলীয় রাজনীতি, ইনজুরি সহ আরো নানা বিষয় তাঁদেরকে বিশ্বসেরা হতে দেয় না। তাই অনেকেই মনে দু:খের ভার নিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবেই বিদায় জানান প্রিয় এই খেলাকে। সেই ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের বিভিন্ন ধাপ পেড়িয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসার পরেও সবকিছু ভেঙে চুরমার হয় একটি ঘোষনায়। বিদায়ের ঘোষণা,অবসরের ঘোষণা। যাদের বিদায়ে নির্বাক হয়েছিল ক্রিকেটবিশ্ব তাঁদের নিয়েই আজকের আয়োজন।
- মার্কাস ট্রেসকোথিক (ইংল্যান্ড)
মার্কাস যখন ক্রিকেট শুরু করেন তখন তিনি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ওপেনার ছিলেন। তাঁর স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা, মাঠে তাঁর আক্রমণাত্মক মনোভাব, নেতৃত্বগুণ তাঁকে ইংল্যান্ডের ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের পথেই নিয়ে যাচ্ছিল।
২০০০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজেই ৪৮.০০ গড়ে করেন ২৮৮ রান। তবে হঠাৎ করেই ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনে ভোগেন এই ক্রিকেটার। শোনা যায়, মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলের ঘটনা তাঁর এই ডিপ্রেশনের কারণ।
যদিও তিনি কখনো এর কারণ নিজ মুখে বলেননি। ফলে অসম্ভব প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর সেভাবে দেখা যায়নি। যদিও, কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছেন লম্বা সময়।
- কেভিন পিটারসেন (ইংল্যান্ড)
ইংল্যাল্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসন দেশটির অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন। ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার পর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি। তারপর ইংল্যান্ডের অধিনায়কও হন তিনি। তবে তিনি অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ভারতের কাছে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ হারে ইংল্যান্ড।
এই হারের দায় সম্পূর্ণ নিজের কাধে নেন এই অধিনায়ক। তারপর ২০১২ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে হঠাতই অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। এই অবসরে থমকে গিয়েছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকেও অবসর নেন তিনি।
- বিনোদ কাম্বলি (ভারত)
শচীন টেন্ডুলকার যখন ভারতীয় দলে আসেন তখন আরেকজন ক্রিকেটারকে নিয়েও বড় আশা ছিল ভারতের। তিনি বিনোদ কাম্বলি। স্কুল ক্রিকেটে শচীনের সাথে ৬৬৪ রানের জুটিই আছে এই ব্যাটসম্যানের। দুজনই করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
তবে, আস্তে আস্তে তাঁর পারফর্মেন্স হতাশ করতে থাকে। ফলে একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে যান এই ক্রিকেটার। লম্বা সময় যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন, তাঁর নিজেরও শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ছিল। ২০০০ সালে তিনি সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিলেন। তারপর ২০১১ সালে নিজের অবসরের ঘোষণা দেন এই ক্রিকেটার।
- টটেন্ডা টাইবু (জিম্বাবুয়ে)
মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পন করেন জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার। সম্ভাবনাময়ী এই ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের হয়ে ২৮ টি টেস্ট,১৫০ টি ওয়ানডে ও ১৭ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি জিম্বাবুয়ের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি হঠাত অবসরের ঘোষণা দেন। শোনা যায় জিম্বাবুয়ে সরকারের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়েছিক এই ক্রিকেটারের। ফলে নানা কারণে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় জানান। এর আগে তিনি আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও খেলেন।
- ক্রেইগ কিসওয়েটার (ইংল্যান্ড)
২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচের হিরো ছিলেন ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেটার। যদিও কিসওয়েটারের জন্ম হয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকায়। এমনকি দক্ষিন আফ্রিকার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপও খেলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের হয়ে। অসাধারন ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন তিনি।
তবে চোখে মারাত্মক ইনজুরির পর তাঁর ক্রিকেট যাত্রা ধুলোয় মিশে যায়। অপারেশনের পর খেললেও আগের রূপে আর ফিরে আসতে পারেননি প্রতিভাবান এই ক্রিকেটার। মাত্র ৪৬ টি ওয়ানডে ও ২৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই শেষ হয় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।