২০২১ সালের শুরুতে খবর আসে করোনার কারণে এ বছর আর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ হচ্ছে না।
এমন খবরে সিলেটের ক্রিকেটাঙ্গনে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। সিলেটের ক্রিকেট লিগ কমিটির এমন সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েন স্থানীয় ক্রিকেটাররা। এমন পরিস্থিতে মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে উঠেপড়ে লাগে সিলেট ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন। ক্রিকেটারদের এই সংগঠনের সভাপতি এনামুল হক জুনিয়র প্রায় এক মাস ধরে ক্রিকেট মাঠে ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছেন। তার পাশে সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সাদিকুর রাহমান তাজিমকে। তাদের সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনের অন্য সব সদস্যরা।
প্রায় এক মাস ধরে সিলেটে ক্রিকেট লিগ মাঠে নামানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছিল সিলেট ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের এই প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখে ১০ ফেব্রুয়ারি।
বুধবার সিলেটের কুশিয়ারা আন্তর্জাতিক কনভেনশন হল এ জমকালো এক আয়োজনের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষ ইভ্যালি সিলেট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট ২০২১ এর প্লেয়ার্স ড্রাফট অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় তারকা ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে সন্ধ্যা সাতটায় জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্লেয়ার্স ড্রাফট অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রিকেটের এই আসরে জন্য সিলেটের স্থানীয় ও সারাদেশের প্রায় ১১৪ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তাদের মধ্য ২০ জন ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির, ৪৩ জন ‘এ’ ক্যাটগরির, ও ৫১ জন ‘বি’ ক্যাটাগরির। বুধবার আয়োজিত প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে প্রত্যেক দল একজন আইকন ক্রিকেটারসহ এ প্লাস ক্যাটাগরির ৪ জন, এ ক্যাটাগরির ৫জন ও বি ক্যাটাগরির ৩ জন নিয়ে মোট ১৩ জনের একটি টিম গঠন করে।
এই টুর্নামেন্টের আইকন হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ৪ ক্রিকেটার। তারা হলেন আবু জায়েদ রাহি, অলক কাপালি, এনামুল হক জুনিয়র, জাকির হাসান । এছাড়াও আইকন হিসেবে ছিলেন ইমতিয়াজ হোসাইন তান্না। আইকনদের এই তালিকা থেকে লটারীর মাধ্যমে পছন্দের খেলোয়াড় বেছে নেয় ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। আবু জায়েদ চৌধুরী রাহিকে আইকন হিসেবে দলে নেয় সিলেট ইউনাইটেড।
স্টার প্যাসিফিক স্ট্রাইকে দলে নেয় অলক কাপালিকে। জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার এনামুল হক জুনিয়রকে আইকন হিসেবে দলে নেয় এমকেবি প্লাটুন। সিলেট সিটি করপোরেশন ওয়ারিয়র্সের আইকন জাকির হাসান। ইমতিয়াজ হোসেন তান্না আইকন হিসেবে আছেন কুশিয়ারা রয়্যালসে।
এমন আয়োজনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সাদিকুর তাজিম কৃতিত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের সভাপতি এনামুল হক জুনিয়রকে। তিনি বলেন, ‘আসলে বলতে গেলে আমাদের সংগঠনের সভাপতি এনামুল হক জুনিয়রের কথা বলতে হয়। আমরা যখন যেকোনো বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসি খুব সহজে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি তার কারণে আর যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলেই সবাই একযুগে কাজ করে তাই এমন আয়োজন করাটা সহজ হয়েছে।’
এনামুল হক জুনিয়রও বলছেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে সংগঠনের সবাই তরুন এবং উদ্যমী, কোনো সিদ্ধান্ত নিলে পারবে না এমন শব্দ তারা কখনো বলে নাই। এটাই সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ আমাদের।’
আহমেদ সাদিকুর রাহমান দেখছেন ইচ্ছা থাকলেই এমন আয়োজন সম্ভব। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেই এমন আয়োজন সম্ভব, স্পন্সর নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করতে হয় না। আমরা যাদের কাছে গিয়েছি কেউ না করেনি। সবাই আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। বিশেষ করে নাদেল ভাই (শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল), পাপলু দত্ত দাদা, আমার ফ্রেন্ড নবাব কিচেনের মালিক জান্নাতুল হাসান মাহি তাদের কথা বলতে হয়, নাদেল ভাই আমাদেরকে কখনো নিরাশ করেননি। সব সময় তিনি আমাদেরকে স্পন্সর পেতে সাহায্য করেছেন।’
এমন আয়োজনে স্থানীয় তরুন ক্রিকেটাররা নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুনরা যদি এই টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্ম করতে পারে তাহলে এই টুর্নামেন্ট সফল ও সার্থক হবে। সিলেটের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাশাপাশি সিলেটের বাহিরের ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুম শেয়ার করার সুযোগ পাবে তরুন ক্রিকেটাররা। স্থানীয় ১৩ ক্রিকেটাদের পাশাপাশি প্রতি দল ২ জন করে বিদেশি ক্রিকেটার দলে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কেউ চাইলে বিদেশ থেকে প্লেয়ার আনতে পারবে।
পাঁচ দল দলের এই টুর্নামেন্ট ফাইনালসহ ম্যাচ হবে ১৪টি। পাঁচ দলের এই টি২০ টুর্নামেন্ট শুরু হবে আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনীয় দিনে একটি ম্যাচ অনুষ্টিত হবে। এছাড়া প্রতিদিন দুইটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ ম্যাচের এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্টিত হবে ২৬ই ফেব্রুয়ারি। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস।
বুধবার সন্ধ্যায় প্লেয়ার ড্রাফট অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এসময় তিনি বলেন, করোনার কারণে সিলেটের ক্রিকেট অঙ্গনে স্থবিরতা এসে গেছে। আশা করি এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই স্থবিরতা কেটে যাবে। টুর্নামেন্টটি সফল করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট ক্রিকেটার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক জুনিয়র।
এনামুল হক জুনিয়র ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক এমন টুর্নামেন্টের আয়োজনের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু বিপিএল খেলার সময়। এটা নিয়ে প্রথমে কথা বলেছিলেন সাংবাদিক আহমেদ রাকিবের সাথে, তবে জুনিয়র স্পন্সর পাওয়া না পাওয়া নিয়ে একটু সংশয়ে ছিলেন। সে সময় তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন আহমেদ রাকিব। রাকিব বলেছিলেন উদ্যোগ নিলে স্পন্সরের অভাব হবে না। এনামুল হক জুনিয়র বলছিলেন, ‘আমি প্রথমে রাকিব ভাইয়ের সাথে কথা বলি এ বিষয় নিয়ে, এরকম বড় টুর্নামেন্ট করতে গেলে স্পন্সরের একটা ব্যাপার থাকে, সেটা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম, রাকিব ভাই বললেন উদ্যোগ নেন, দেখবেন স্পন্সর পেয়ে যাবেন।’
আসলে হয়েছে তাই এমন আয়োজনের স্পন্সরের জন্য যাদের কাছে গিয়েছেন সবাই এগিয়ে এসেছেন, সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। স্পন্সর করেছেন অনেকে, অনেক আবার দল গঠন করেছেন।
অংশগ্রহণকারী ৫ দলের স্কোয়াড
- স্টার প্যাসিফিক স্ট্রাইকার্স
অলক কাপালি (আইকন), তৌফিক খান তুষার, নাবিল সামাদ, সাদিক সাঈদ, আহমেদ সাদিকুর তাজিন, রাশেদ খান মেনন, অর্ক, ফয়সল, কামরুল ইসলাম, সালেহিন নাহিয়ান, তোফায়েল আহমেদ, রাজু ও নাহিদ।
- এমকেবি প্লাটুন
এনামুল হক জুনিয়র (আইকন), ইমরান আলি এনাম, আসাদুল্লাহ গালিব, এবাদত হোসেন, রুমন আহমেদ, ফরহাদ আহমেদ, ময়নুল হাসান, কামিল আহমেদ, নবাব আহমেদ, ফখরুল হোসেন, সায়েম জুনিয়র, এমদাদ ও শরিফ।
- সিলেট সিটি কর্পোরেশন ওয়ারিয়র্স
জাকির হাসান (আইকন), সায়েম আলম রেজভী, আজাদ খান, জয়নুল আহমেদ, এজাজ আহমেদ, শাহনুর আহমেদ, ইরফান খান, নাজমুল ইসলাম, সাকিব, সুহাদুল হোসেন, জালাল উদ্দিন, শাহরিয়ার ও সুজন।
- সিলেট ইউনাইটেড
আবু জায়েদ রাহি (আইকন), রাহাতুল ফেরদৌস, মেহেদি মাহবুব, শেনাজ আহমেদ, তাসবির রায়হান, রিয়াদ, সফর উদ্দিন, মুজাক্কির হোসেন, আজির উদ্দিন, মুফাসসির আলি, বক্কর-১, বক্কর-২ ও মোঃ জয়।
- কুশিয়ারা রয়্যালস
ইমতিয়াজ হোসেন তান্না (আইকন), জাকের আলি অনিক, মাহবুব হাসান, মিজানুর রহমান, রুহেল মিয়া, ওয়াসিফ আহমেদ, নাঈম আহমেদ, আহমেদ আবিদুল হক, সিয়াম আহমেদ, নূর আলম, মুস্তাকিম মিয়া, তাজিদ ও হৃদয়।