চার-ছক্কার খেলা টি-টোয়েন্টি। গাঁটের পয়সা খরচ করে দর্শকরা মূলত ব্যাটসম্যানদের মারকুটে ব্যাটিং দেখতেই আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়ানে মারকুটে ব্যাটিংয়ের চূড়ান্ত রূপই যেন দেখালেন ব্যাটসম্যানরা, টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ২৫৮ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা পেরিয়ে গেছে সাত বল হাতে রেখেছেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি এক ম্যাচে এত রান আগে কখনোই ওঠেনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, এদিন যেন সেঞ্চুরিয়ন হয়ে উঠেছিল ভিডিও গেমের মঞ্চ। ব্যাটসম্যানরা যখন যে শটটা খেলতে চেয়েছেন ঠিক সেটাই মঞ্চায়িত হয়েছে। দুই দলের বোলাররা যেন ছিলেন রীতিমতো অসহায়, তাঁদেরকে পাড়ার বোলারে নামিয়ে এনে রান বন্যা বইয়ে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
গত কয়েক বছরে টি-টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা ক্রমশই বাড়ছে। কারণটা নিশ্চিতভাবেই ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য, দর্শকরা পয়সা খরচ করে আর বোলারদের উদযাপন দেখতে চান না। ক্রিকেট বোর্ডও তাই হাঁটছে নিরাপদ পথে, প্রায় সব দেশেই ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্ল্যাট পিচ, ক্রমেই ছোট হচ্ছে বাউন্ডারি। ফলে প্রকৃত ক্রিকেটের চর্চা হোক না হোক, ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন আর দর্শকরা হচ্ছেন আমোদিত। বেচারা বোলারদের কথা ভাবার যেন কেউই নেই!
অথচ কয়েক বছর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ ছিল ব্যাটারদের জন্য বধ্যভূমি। ইনিংসের শুরুতে দুর্দান্ত সুইংয়ের পাশাপাশি মাঠের দৈর্ঘ্য বড় হওয়ায় বাউন্ডারি হাঁকাতে বেগ পেতে হতো ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু খানিকটা ধীরে হলেও যেন টি-টোয়েন্টির আবেদনটা ধরতে পেরেছে প্রোটিয়া ক্রিকেট বোর্ড, ঘরোয়া ফ্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে চলমান সিরিজ সবখানে তাঁরা ব্যবহার করেছেন ফ্ল্যাট বা পাটা পিচ।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও রাজত্ব করেছেন ব্যাটসম্যানরা। ১১ ওভারে ১৩০ রান তুলেও শেষরক্ষা হয়নি স্বাগতিকদের। দ্বিতীয় ম্যাচে তাই আর ঝুঁকি নেননি প্রোটিয়া কাপ্তান, জানতেন এই এই উইকেটে শট খেলা যাবে আর নিজে ভুল না করলে উইকেট হারানোর সম্ভাবনা নেহায়েত কম। সেই কারণেই কিনা ২৫৮ রানের লক্ষ্য পেয়েও ড্রেসিংরুমে কাগিসো রাবাদা বলেন, ‘ওরা বোধহয় দশ রান কম করে ফেলেছে।’
এদিন যেন বাউন্ডারি হাঁকানোর চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখিয়েছেন ব্যাটাররা। ভারী ব্যাট, পাওয়ার প্লে কিংবা পাওয়ার হিটিংয়ের পসরা সাজিয়ে মোট ৮১ বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা যা কিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররাই হাঁকিয়েছেন ২২ ছক্কা যা কিনা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিটা তো ব্যাটারদের খেলাই!
পাওয়ার প্লে’র উদ্ভাবনই হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের সুবিধা দেয়ার জন্য। এদিন যেন তাঁরই পুরো ফায়দা তুললেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা, ত্রিশ গজের বাইরে মাত্র দুজন ফিল্ডার থাকার সুবাদে রান তুললেন দেদারসে। প্রথম দশ ওভার শেষে তাঁদের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ালো বিনা উইকেটে ১৪৭ রান। ম্যাচ তো ওখানেই শেষ!
একটা সময়ে টি-টোয়েন্টিতে ১৮০ রানকেই ভাবা হতো নিরাপদ সংগ্রহ। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে ততই প্রমাণিত হচ্ছে ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই সংস্করণে কোনো রানই নিরাপদ নই। ক্রিকেটাররাও মেনে নিয়েছেন সেটা। এদিন ম্যাচ শেষে মাঠের এক কিউরেটর ত্রিশ গজের বাইরে দাঁড়িয়ে খুশিতে উদযাপন করছিলেন। নাচটা অবশ্য তাঁকেই মানায়, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা যা চেয়েছিলেন সেটাই তো মঞ্চায়িত হয়েছে বাইশ গজে।