এ যে এক ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা। এক সিরিজে নাসুম আহমেদ সুযোগ পাচ্ছেন তো আরেকটিতে তাইজুল ইসলাম। পারফর্মও করছেন দুজনই। তাইজুল ইংল্যান্ড সিরিজে পারফর্ম করলেন। এরপর ঘরের মাটিতে আইরিশদের বিপক্ষে নিজের জাত চেনালেন নাসুম আহমেদ।
দুজনের এই ১-১ পাওয়া সুযোগের ব্যবধানটা এবার বাড়িয়ে নিলেন তাইজুল। আইরিশদের বিপক্ষে আগের সিরিজে জায়গা না পাওয়া এ স্পিনার এবার সুযোগ পেয়েছেন ইংল্যান্ডের মাটিতে, সেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই। মোদ্দাকথা, বাংলাদেশের এ দুই বাঁ-হাতি স্পিনারের এ লড়াইটা এখন তুঙ্গে।
আসন্ন বিশ্বকাপের সম্ভাব্য স্কোয়াডে ছবি আঁকলে সাকিবের সাথে বড়জোর একজন বাঁ-হাতি স্পিনারই স্কোয়াডে থাকবেন। তাই নাসুম, তাইজুলদের মধ্যে দিনশেষে একজনকে বাদ পড়তেই হবে। এখন সেই একজনকে বাছাই করার প্রক্রিয়াতেই চোখ রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। দুজনকে ভিন্ন ভিন্ন সিরিজে পরখ করার পরই মূলত বেছে নেওয়া হবে, এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন।
একদিনের ক্রিকেটে এ দুই জন স্পিনারের কেউই আসলে নিয়মিত মুখ। দুজনই ভিন্ন সংস্করণে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাইজুল টেস্টে আর নাসুম টি-টোয়েন্টিতে। তবে তাইজুলের ওয়ানডে অভিষেক কিন্তু হয়েছিল দুর্দান্তভাবেই।
২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তবে সেটিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল সেদিন হ্যাটট্রিক। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের প্রথম কীর্তি ছিল সেটিই।
নাসুমের ওয়ানডে অভিষেকের বয়সটা এক বছরও হয়নি। তবে এরই মধ্যে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নাম তুলতে নির্বাচকদের নজরে ভালভাবেই আছেন। এখন পর্যন্ত অবশ্য এ দুই স্পিনারকে একই ম্যাচে দেখা গিয়েছে একটি মাত্র ম্যাচে।
তাও আবার সেটি সম্ভবপর হয়েছিল সাকিবের অনুপস্থিতিতে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচে দুজন দারুণ বল করলেও মূল আলোটা কেড়েছিলেন তাইজুলই। নাসুমের ২ উইকেট প্রাপ্তির বিপরীতে তাইজুল সেদিন পেয়েছিলেন ফাইফারের দেখা।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার নিজেও অবশ্য এই দুই স্পিনারের মাঝে সুস্থ প্রতিযোগিতার ভাল দিক খুঁজে পাচ্ছেন। জনপ্রিয় ক্রিকেট গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে তিনি বলেন, ‘দুজনই দারুণ করছে। তাইজুল আসলে উইকেট টেকিং বোলার। আর নাসুম তাঁর বোলিং লেন্থ সম্পর্কে সব সময় সচেতন থাকে।’
এ দুজনের মাঝে একজনকে বেছে নেওয়ার লক্ষ্যেই মূলত ভিন্ন ভিন্ন সিরিজে খেলানো হচ্ছে— এ কথা স্বীকার করে হাবিবুল বাশার আরো বলেন, ‘আমরা আসলে ওদের পরখ করছি। কে আমাদের স্কোয়াডে সবচেয়ে উপযুক্ত হবে সেদিকেই আমাদের মূল নজর।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে তাইজুলের থাকাটা তখন চমকপ্রদই ছিল। সে সময় অনেকেই অভিযোগ তুলেছিলেন যে, তামিমের ‘অধিনায়ক’ কোটাতেই নাকি দলে রাখা হয়েছিল তাইজুলকে। তাইজুল অবশ্য এমন সমালোচনায় কর্ণপাতই করতে চান না।
ক্রিকবাজকে তিনি বলেন, ‘অধিনায়ক তো অবৈধভাবে আমাকে দলে চায়নি। আমি পারফর্ম করেছি। তাই দলে ডাক পেয়েছি। আসলে এ সব সমালোচনা নয়, দলের হয়ে আমার ভাল খেলার দিকেই সব সময় নজর থাকে। দেখুন, অনেকে অনেক কিছুই বলবে। এভাবে সবার কথা ভেবে আপনি পারফর্ম করতে পারবেন না। তাই আমি এ সব কখনো মাথাতেই আনি না। যখন পারফর্ম করব তখন ঠিকই সবাই প্রশংসা করবে।’
তাইজুল অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হলেও সে সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে ঠিকই সামর্থ্যের প্রতিদান দিয়েছিলেন তিনি। তবে এর ঠিক পরের সিরিজেই আবার তাইজুলের জায়গায় দলে আসেন নাসুম।
তাইজুল অবশ্য দাবি করেছেন, এ সিলেকশনটি তাঁকে জানিয়েই করা হয়েছিল। আর নাসুমের সাথে এভাবে সিরিজ ভাগাভাগি নিয়ে তাইজুল সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন নির্বাচকদের উপরেই।
তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড সিরিজের পরই আমাকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। নির্বাচকরা মূলত আরেকটা অপশন দেখতে চাচ্ছিল। এটা টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। এখানে আসলে আমার বা আপনার কিছুই বলার নেই। তাদের হয়তো আরো ভাল পরিকল্পনা রয়েছে। আর দলের জন্য যেটা ভাল সেটাই তো তাঁরা করবেন।’
সাদা বলের ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনার কথা টেনে এ স্পিনার আরো বলেন, ‘আপনি আপনার জীবনে সবকিছু একসাথে পাবেন না। আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। এরপর সাদা বলের ক্রিকেটে সুযোগ পেয়েছি। সেই সুযোগ পাব কি পাব না, তা নিয়ে কখনোই চিন্তা করিনি। আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমি শুধু নিজের ব্যাপারে ফোকাসড। আমি বিশ্বাস করি, নিজের কাজটা করে গেলে, একটা না একটা সময়ে সফলতা মিলবেই।’