আত্মবিশ্বাসের বড্ড অভাব তামিমের

ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল গিয়ে আঘাত করলো স্ট্যাম্পে। খান সাহেবের চোখে-মুখে একটা বিরক্তির ছাপ। নিজের খারাপ সময়টা যে বড্ড পীড়া দিচ্ছে তাকে। দেশসেরা ওপেনার তাই রয়েছেন ভীষণ মানসিক চাপে। এই যে বোল্ড হয়ে যাওয়ার এই চিত্রটা। এটা নিশ্চয়ই তামিমের সামর্থ্য়ের প্রতিফলন হতে পারে না।

বরং আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যাকফুটে গিয়ে চালানো শটটাই তো তামিমের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু তিনি যেন হারিয়ে খুঁজছেন নিজের সেই আত্মবিশ্বাস। অথচ নিয়ম করে তিনি প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করেছেন। টাইগারদের মেঘে ঢাকা দিনগুলোতে রবির আলো হয়েছেন তিনি।

সেই তামিম গেল সাত ওয়ানডেতে রান করেছেন সর্বসাকুল্যে ১৫০ রান। এই সময় বল খরচ করেছেন ২০৬টি । স্বভাবজাত তামিমের সাথে বড্ড বেমানান। স্ট্রাইক রেট মোটে ৭২.৮১। কিন্তু তার ক্যারিয়ার জুড়ে তামিম রান করেছেন ৮০ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইকরেটে।

তার থেকেও চিন্তার বিষয় এই সাত ওয়ানডের মধ্যে তামিম চারটি ওয়ানডে খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের মত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। বাকি তিনটে খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের তুলনায় আয়ারল্যান্ড অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দল। সেটাতে দ্বিমত নেই।

তাছাড়া বর্তমান বাংলাদেশ দল বিবেচনায় আইরিশরা পিছিয়ে আছে বেশ খানিকটা। সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন একটি দলের বিপক্ষে শেষ চার ওয়ানডেতে তিনি রান করেছেন যথাক্রমে ৩, ২৩, ৪১ (অপরাজিত), ১৪। ওই এক অপরাজিত থাকার ম্যাচটিতে বাংলাদেশের কোন কঠিন সমীকরণ ছিল না।

সামগ্রিক এই পরিস্থিতি বিবেচনায় তামিম নিশ্চয়ই রয়েছেন বেশ দুশ্চিন্তায়। দুশ্চিন্তা খানিক কম নেই টিম ম্যানেজমেন্টেরও। তাইতো সময় সুযোগ পেলেই প্রধান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে টোটকা দিচ্ছেন তামিমকে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে অনুশীলনে তেমনটিই দেখা গেছে। অফফর্মের এই বেড়াজালটা নিশ্চয়ই তামিমকে মানসিক পীড়া দিচ্ছে।

২০২৩ বিশ্বকাপে আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। প্রথমত ভারত চেনা কন্ডিশন। দ্বিতীয়ত ওয়ানডে ফরম্যাটটায় বাংলাদেশ বেশ পোক্ত এক দল। তাছাড়া তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে দলটাও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। তাইতো আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত, সমর্থক আর অনুরাগীরা।

কিন্তু দলনেতা যখন তামিম, তখন দুশ্চিন্তার আনাগোনা হওয়াই তো স্বাভাবিক। বিশ্ব জয়ের স্বপ্নের তরী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা তো তামিমকেই দিতে হবে। কিন্তু এই যে তামিম ব্যাটে রান পাচ্ছেন না। ছোট ছোট ইনিংসেই থমকে যাচ্ছেন। এই বিষয়গুলো মানসিক অবসাদের কারণে পরিণত হতে পারে। আর সেই অবসাদের প্রভাবটা পড়তে পারে পুরো দলে।

তাইতো তামিম নিশ্চয়ই ফিরতে চাইছেন নিজের চেনা ছন্দে। তার ফর্মে ফেরাটা জরুরি। কেননা বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাল করলেই দল এগিয়েছে বড় সংগ্রহের দিকে। বিশ্বকাপে বড় সংগ্রহের পথেই তো ছুটতে চাইবে টাইগাররা। চাপে ফেলতে চাইবে প্রতিপক্ষকে।

তাছাড়া ক্রিকেটের বিবর্তনে, অসম্ভব সংগ্রহ বলে কিছু নেই। বাংলাদেশকে হয়ত প্রায় প্রতি ম্যাচেই ৩০০ এর বেশি রান তাড়া করতে হতে পারে। সে সময়ে তামিমের আগ্রাসনটা ভীষণ প্রয়োজন। তবে সেই আগ্রাসনটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না ড্যাশিং এই ওপেনার। বাজে সব বলে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসছেন তিনি।

সেই সবকিছুই হয়ত শুধরে নিতে নেট অনুশীলনে আরও বেশি ঘাম ঝড়াবেন তামিম ইকবাল। হয়ত এটাই হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার এই সুবর্ণ সুযোগটা হেলায় হারাতে চাইবেন না নিশ্চয়ই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link