বল গিয়ে সোজা স্ট্যাম্পে আঘাত করল, ‘বুলস আই’। এই একটা মুহূর্তের জন্যেই যেন অপেক্ষা ছিল তাসকিন আহমেদের। আগের বেশ কয়েকটি বল যে ঠিকঠাক লাইন আর লেন্থেই ফেলতে পারেননি তাসকিন। তবে খালেদ মাহমুদের টোটকাতে কাজ হয়েছে বেশ। ছন্দ যেন ফিরে পাওয়া যাচ্ছে।
তাসকিন আহমেদ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সম্মুখভাগের সেনানী বলা চলে তাকে। তবে তিনি অবশ্য নেই নিউজিল্যান্ড সফরে। গোটা দল সেখানে অবস্থান করলেও তাসকিন নেই দলের সাথে। পেছনের কারণ ওই সেই ইনজুরি।
বিশ্বকাপেও ইনজুরি নিয়ে খেলেছেন। বিশ্রামের মধ্য থেকেই খেলতে হয়েছে তাকে ম্যাচ। অথচ, ধারণা করা হয়েছিল বিশ্বকাপে পুরোটা সময় ধরেই মিলবে তার সার্ভিস। তবে সেটা হয়নি। বিশ্বকাপের পর ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও খেলেননি তাসকিন।
পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জিম ট্রেইনারের সাথে নিজের ইনজুরি দ্রুতই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। মাঝে পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন পবিত্র ওমরাহ পালন করতে। সেখান থেকে ফিরেই তিনি হাজির মিরপুর একাডেমি মাঠে।
নিজের বোলিংয়ের ছন্দ ফিরে পাওয়ার মিশনে মনোযোগ দিতেই হোম অব ক্রিকেটের প্রাঙ্গণে তাসকিন। তাকে আবার সঙ্গ দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। দেশের ক্রিকেটের এক পরিচিত মুখ। নানা সময়ে সুজনকে সমালোচনার তিক্ততা হজম করতে হয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশের ক্রিকেটারদের কাছে তিনি যেন পরম শ্রদ্ধাভাজন।
এই যেমন তাসকিনের সাথে অনুশীলনের ফাঁকেই একাডেমি মাঠে এসেছিলেন তানভীর ইসলাম। বা-হাতি এই স্পিনার নিউজিল্যান্ডে হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্যে দলে ডাক পেয়েছেন। তাকে দেখা মাত্রই খোদ সুজন স্যালুট দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন।
হাসিমুখে সেই স্যালুটে উত্তর দিলেন তানভীরও। তারপর করমর্দন করে তানভিরের সাথে আলাপে জুড়ে গেলেন সুজন। ঠিক এতটাই গভীর সম্পর্ক তিনি গড়ে তুলতে পারেন দেশের ক্রিকেটারদের সাথে। সাবেক খেলোয়াড়, বিসিবি কর্তা, কোচ এসবের দেয়ালের তুলে তিনি দূরত্ব বাড়াননা তাসকিন, তানভিরদের সাথে। তাতে অবশ্য তার সম্মানহানী হয় না।
তাসকিনরা বেশ মনোযোগ দিয়েই তার কথা শোনেন। মাথা নিচু করেই সম্মতি জানান সুজনের দেওয়া সকল উপদেশে। তাতে নিশ্চয়ই নেতিবাচক কিছু ঘটেনা। এদিনের অনুশীলনে তাসকিনের ক্ষেত্রেও ঘটেনি। বরং শুরুতে এলোমেলো বোলিং সময় গড়ানোর সাথে সাথে ছন্দ খুঁজে নিয়েছে।
টোটকাটা মিলেছে সুজনের কাছ থেকেই। তাছাড়া তাসকিনের ‘ল্যান্ডিং’-এ সমস্যা হচ্ছিল। মার্কার দিয়ে সেই সমস্যার সমাধানও করবার চেষ্টা করেছেন সুজন। বারংবার উইকেটের লাইনে ‘ফলো থ্রু’-তে চলে যাচ্ছিলেন তাসকিন।
সেটারও কিঞ্চিত সমাধান পাওয়া গেছে। কাঁধের ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়াতেই বোলিংয়ের ছন্দের অন্বেষণ করে যাচ্ছেন তাসকিন। সামনেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, সেই মঞ্চ দিয়েই আবার ক্রিকেট ময়দানে ফিরবেন তাসকিন। তাছাড়া এরপরই বেশ কিছু সিরিজ রয়েছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
নতুন বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাঠে গড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের দুঃখ ভুলে বাংলাদেশ চাইবে সেই বিশ্বকাপে ভাল কিছু উপহার দিতে। আর সে যাত্রায় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতে হবে তাসকিন আহমেদকে। হয়ত তাসকিন সেজন্যেই নিজের সর্বোচ্চ প্রস্তুতিটুকুই নেবেন। বাকিটা ভাগ্যের হাতে।