ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বর্তমানে এলিট ক্লাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুরাবস্থার মাঝে দিয়েই যাচ্ছে ইংলিশ ক্লাবটি। আর তাই পুনরায় তাদের সুসময় ফিরিয়ে আনার জন্য ডাচ কোচ এরিক টেন হাগকে নিয়োগ করেছে ক্লাব ম্যানেজম্যান্ট।
তবে এই কাজটি খুব একটা সহজ হবে না তার জন্য। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে ডেভিড ময়েস, লুই ভ্যান গাল, হোসে মরিনহো এবং ওলে গুনার সোলশারের মত কোচ’রা যেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তাতে মনেই হচ্ছে টেন হাগের জন্য বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুল লিগে রীতিমতো একটি নতুন প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। প্রিমিয়ার লিগে শিরোপার লড়াইয়ে এই দুই ক্লাব এখন এতটাই এগিয়ে থাকে যে অন্য কোন দল সহজে নাগাল পায় না। এই যেমন সর্বশেষ মৌসুমে যেখানে সিটিজেন আর অলরেডদের পয়েন্ট ছিল নব্বইয়ের উপরে, সেখানে তিন নম্বরে থাকা চেলসি পচাত্তর পয়েন্টও ছুঁতে পারেনি।
এমতাবস্থায় টেন হ্যাগ তার অভিষেক মৌসুমেই লিগ জিতবেন এমনটা আশা করা বোকামিই বটে। তাহলে টেন হ্যাগের দায়িত্বে থাকা প্রথম বছরে সাফল্যের মানদণ্ড কেমন হবে, তার প্রাথমিক কাজ হবে কোনগুলো? এসব নিয়েই এবার আলোচনা করা যাক।
- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ইস্যু
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লক্ষ্যপূরণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত মৌসুমে রোনালদোর পারফরম্যান্স নিয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনের আলোচনাই হয়েছে৷ কিন্তু এই মুহূর্তে রোনালদোকে দল থেকে বাদ দিলে রেড ডেভিলদের ক্ষতিটাই সবচেয়ে বেশি হবে।
গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোল করে দলের সেরা গোলদাতা হয়েছেন রোনালদো। এছাড়া বেশ কয়েকবার জিতেছেন ক্লাবের প্লেয়ার অব দ্য মান্থ এবং সবশেষে প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন তিনি।
এর পাশাপাশি, ইউনাইটেডের নতুন কোন বড় সাইনিং হচ্ছে না বলাই যায়। আর তাই দলের আক্রমনভাগের মূল দায়িত্ব থাকছে অভিজ্ঞ রোনালদোর। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী রোনাদলো আধুনিক ফরোয়ার্ডদের মত প্রেসিং করতে পারবেন না৷
এক্ষেত্রে তাই রোনালদোর ঘাটতি দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের মেটাতে হবে। এজন্যই গোলমুখে রোনালদোর পূর্ণ ফায়দা তুলতে চাইলে একটি ভারসাম্যমূলক গেম প্ল্যান তৈরি করাটা টেন হ্যাগের প্রথম মৌসুমের একেবারে প্রথম কাজ।
- সানচো-রাশফোর্ড এর অফ ফর্ম
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসার আগে জোডান সানচো ছিলেন অন্যতম সেরা উদীয়মান তারকা। কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এসে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাতে ব্যর্থ হন এই ইংলিশ উইঙ্গার। তাঁর মত অবস্থাতেই আছেন আরেক ইংলিশ ফুটবলার মার্কাস রাশফোর্ড। নিজের সেরা ফর্ম থেকে অনেক দূরে আছেন রাশফোর্ডও।
ইউনাইটেডের সমর্থকরা ২০০৯ সালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর থেকে একজন আগ্রাসী উইঙ্গারের জন্য হাপিত্যেশ করেছিল। এক্ষেত্রে সানচো এবং রাশফোর্ড হতে পারতেন কাঙ্খিত একজন। তবে সময় এখনই শেষ হয়ে যায়নি।
টেন হ্যাগ যদি রাশফোর্ড এবং সানচো থেকে সেরাটা বের করতে পারে, তবে এটি রেড ডেভিলদের আক্রমণে বাড়তি শক্তি এনে দিবে। আর তাই এই দু’জনের ভুলত্রুটি শুধরে ফর্মে ফেরানোটা নতুন কোচের অন্যতম প্রাথমিক দায়িত্ব।
- চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার যোগ্যতা
লিগ জিততে না পারলেও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের শীর্ষ চারে তুলে আনতে পারাটা এরিক টেন হ্যাগের সাফল্যের নূন্যতম মানদণ্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে মিশে আছে। অথচ এমন একটি ক্লাব গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়। আর তাই পুনরায় ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ফেরাটা টেন হ্যাগের কাছে ভক্তদের প্রথম চাওয়া।
তবে এই মৌসুমে শীর্ষ চারের জন্য লড়াইটা হয়তো স্মরনকালের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে যাচ্ছে। একদিকে যেমন আছে লিভারপুল আর ম্যানচেস্টার সিটি অন্যদিকে আছে আন্তোনিও কন্তের অধীনে পুনরুজ্জীবিত টটেনহ্যাম, আর্সেনাল এবং চেলসি।
এছাড়া ওয়েস্ট হ্যাম কিংবা নিউক্যাসলও সেরা চারের দৌড়ে সামিল হতে পারে। এতকিছুর পরেও ইউনাইটেড যদি আবারো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বাদ পড়ে তবে এরিক টেন হ্যাগ সফল হয়েছেন, এমনটা মোটেও দাবি করা যাবে না।
- ট্রফি জয়
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সর্বশেষ ট্রফি জিতেছিল পাঁচবছর আগে। ২০১৭ সালে জোসে মরিনহো কারাবাও কাপ এবং ইউরোপা লিগ জিতিয়েছিলেন দলটিকে। এরপর থেকে শিরোপা উদযাপন করা ভুলেই গিয়েছে রেড ডেভিল’রা। এর মাঝে ওলে গানার সোলশারের অধীনে সর্বোচ্চ ইউরোপা লিগে রানার আপ হতে পেরেছে দলটি।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভ্যাস আছে এরিক টেন হ্যাগের। আয়াক্সে থাকাকালীন তিনবার ডাচ লিগ এবং দুইটি ডাচকাপ জিতেছিলেন তিনি৷ এজন্যই তার আগমনের মধ্য দিয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ট্রফিরও আগমন ঘটবে বলেই আশা করে আছে সমর্থকেরা। মেজর কিছু না হোক অন্তত ছোটখাটো কোন ট্রফি জিতিয়ে হলেও দলের খরা কাটানো তাই টেন হ্যাগের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।
- আকর্ষণীয় এবং কার্যকরী কৌশল
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ে পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলায় ধারাবাহিকতার অভাব বড্ড চোখে লেগেছে। এরই মাঝে অনেক কোচ রদবদল করলেও বদলায় নি পরিস্থিতি। উল্টো বারবার পরিবর্তন ঘটেছে ক্লাবের ফুটবল দর্শনে।
এক্ষেত্রে তাই এরিক টেন হ্যাগকে তাঁর নিজস্ব দর্শন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তাৎক্ষনিক ফলাফল না পেলেও একই কৌশলে দলকে ধারাবাহিক করে তুলতে হবে। টেন হ্যাগ তার দুর্দান্ত ফুটবল মতাদর্শের কারণেই ম্যানইউ-তে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এবার তাকে সেটি মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে।