ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট হল টেস্ট। আবার একই সাথে টেস্ট সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাটও বটে। ক্রিকেটারদের মানসিকতা, দক্ষতা ও টেম্পারমেন্টের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নেই পাঁচ দিনের ক্রিকেট।
টেস্ট ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়াট তাই সহজ নয়। কালজয়ী আর নামী অনেক অধিনায়কই তাই সাফল্য পাননি সাদা পোশাকে। হারের পর হার যেমন বেশি, তেমনি হারে একগাদা ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার। তেমনই কিছু নজীর নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
- অর্জুনা রানাতুঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
লঙ্কানদের ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসান অর্জুনা রানাতুঙ্গা। মোটামুটি আন্ডারডগ হয়েও সব হিসাব নিকাশ উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল লঙ্কানরা। বিশ্বের ইতিহাসেও তিনি সেরা অধিনায়কদের একজন।
তবে, টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তিনি শীর্ষমানের ছিলেন না। ৫৬ টি টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর মধ্য শ্রীলঙ্কা জিতে ১২ টিতে, হারে ১৯ টিতে, ড্র হয় ২৫ টি। ১৯ হারের মধ্যে নয়টিই ছিল ইনিংস ব্যবধানে।
- নাসের হুসেইন (ইংল্যান্ড)
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটারকে ইংল্যান্ডকে ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ অবধি নেতৃত্ব নিয়েছেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপেও তিনিই ছিলেন নেতা। ৪৫ টি টেস্ট অধিনায়কত্ব করেন তিনি। তার মধ্যে জয় ১৭ টিতে। ড্র ১৩ টি। হেরেছেন ১৫ টি ম্যাচ, যার মধ্যে নয়টাই ছিল ইনিংস ব্যবধানে।
তবে, অধিনায়ক হিসেবে বরাবরই ইংল্যান্ডে খুব সম্মানিত নাসির হুসেইন। বিশেষ করে নব্বইয়ের শেষ ভাগে ইংল্যান্ড দলকে চূড়ান্ত পতন থেকে রক্ষা করেন তিনি।
- হাবিবুল বাশার সুমন (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। প্রথম টেস্ট জয়ের নেতা তিনি। তার নেতৃত্বেই ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত প্রথম পর্বের বাঁধা টপকেছিল বাংলাদেশ।
টেস্টে তিনি ১৮ টি ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন। এর মধ্যে একটি জয় আর চারটি ড্র, বাকি ১৩ টি ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। ইনিংস ব্যবধানে হার ছিল ১১ টি। যদিও, এটা ঠিক যে – পরিসংখ্যানের ঊর্ধ্বে গিয়ে হাবিবুল বাশার সুমনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে স্মরণ করা হয়।
- জন রিচার্ড রিড (নিউজিল্যান্ড)
সাবেক এই ব্ল্যাক ক্যাপ ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডকে প্রায় এক যুগে ৩৪ টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই দেশের মাটিতে ও দেশের বাইরে প্রথম নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট জেতান।
তার অধিনায়ক হিসেবে জয় তিনটি, ড্র ১৩ টি। হার ১৮ টি, এর মধ্যে ১০ টিই ছিল ইনিংস ব্যবধানে। তবে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে তাঁর অবদান অস্বীকার কোনো কারণ নেই।
- খালেদ মাসুদ পাইলট (বাংলাদেশ)
তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় টেস্ট অধিনায়ক। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল অবধি দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি খুব লজ্জাজনক একটা রেকর্ডের অধিকারী। ১২ টি টেস্ট তিনি দলকে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশ ১২ টিতেই হারে, আর সবগুলোই ছিল ইনিংস ব্যবধানে। এমন রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসেরই আর কোনো অধিনায়কের নেই।
তিনি বাংলাদেশেরও স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যর্থ অধিনায়ক। ২০০৩ সালে তিনি দল নিয়ে যান বিশ্বকাপে। সেখানে সবগুলো ম্যাচ হেরে বিদায় নেন গ্রুপ পর্ব থেকেই। সেবার বাংলাদেশ আফ্রিকার মাটিতে হারে কেনিয়া বা কানাডার মত দলের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওরকম দু:সময় আর আসেনি বললেই চলে।