পারেননি, কিন্তু হারেননি!

ফলাফলটা প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিস্কার। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৭ রানে হারে পাকিস্তান। অনেকটা কাছে গিয়েই হেরেছে সফরকারীরা। কিন্তু, এই লড়াইয়ে ফখর জামানও হেরে গেছেন  – সেটা বলা যাবে না। তিনিই তো একা ব্যাট হাতে নি:সঙ্গ এক যুদ্ধ চালিয়েছেন।

পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান একা হাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করলেও, তিনি পারেননি! বীরত্ব দেখিয়েছেন আকাশ সমান। কিন্তু, তীরে এসে ডুবেছে তরী। ব্যক্তিগত মাত্র ৭ রানের জন্য নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেন, পাকিস্তানের সাথে জয়ের ব্যবধান ছিল আর ১০ রান বেশি।

পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ বললে ভুলই হবে হয়তো! ফখর জামান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা বলা চলে। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৩৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে একপ্রান্তে লড়াই করতে থাকেন ফখর জামান, আরেকপ্রান্তে বাকিরা ছিলেন আশা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন বাকিরা। ১৫৫ বলে ১০ ছক্কা ও ১৮ চারে ১৯৩ রান করেন ফখর! অতিরিক্ত থেকে ২৫ রান আর বাকি ১০৬ রান করেন দশ ব্যাটসম্যান মিলে! ফখরের ১৫৫ বলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্র ৩৩ বল খেলেন বাবর আজম।

অর্থাৎ পুরো ইনিংসেই ফখর ছাড়া নরকিয়া-ফেলুকায়োদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাকিরা! বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে যখন ১২০ রানেই দলের পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট তখনো একপ্রান্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করছিলেন ফখর। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যেও একবারো খেই হারাননি তিনি, একবারো দমে যাননি তিনি!

নার্ভ ধরে রেখে একা হাতে প্রতিরোধ গড়েন। ম্যাচের হাল ছেড়ে না দিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর সবচেষ্টা টুকুই তিনি করেছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি! ডি ককের চতুরতায় রান আউটের শিকার হয়ে ইনিংসের পাঁচ বল বাকি থাকতে আউট হন তিনি। মাত্র ৭ রানের আক্ষেপ, সাথে জয়ের কাছে গিয়েও হার!

তার করা ১৯৩ রানের ইনিংসটি রান তাড়ায় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে দুইবার ১৫০+ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ওয়ান্ডারারাসে এটিই এখন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও তার করা ১৯৩ রানের ইনিংসটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান।

রাবাদা, নরকিয়া, এনগিডিদের বিপক্ষে তাদের মাঠেই কোনো সাপোর্ট ছাড়া একা হাতে লড়াই করে প্রায় দুইশ রান করা অবশ্যই বিরাট ব্যাপার। কিছুদিন আগেও ভারতের বিপক্ষে স্যাম কারান একা হাতে লড়াই করে ৯৫ রান করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে না যেতাতে পারার আক্ষেপে পুড়েছিলেন! আর গতকাল ফখর জামানের ইনিংসটি তার চেয়েও বেশি আক্ষেপের।

পুরো ইনিংসেই তাকে যোগ্য সমর্থন দিতে পারেনি কেউই! একটু সমর্থন পেলে হয়তো করে ফেলতেন নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি, সেই সাথে অবদান রাখতে পারতেন দলের দ্বিতীয় জয়ে! তার আজকের ইনিংসে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন হারার আগেই না হেরে বসা। হার না মেনে কিভাবে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হয় সেটার জলন্ত উদাহরণ ফখর জামানের এই ইনিংস। কি তুখোড় একটা ঝড়, কি অনন্য এক আধিপত্ত – এত কাছে লক্ষ্য, তবুও কত দূর!

বল খেলেছেন ১৫৫ টি। চার হাঁকিয়েছেন ১৮ টি, ছক্কা ১০ টি। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে এতটা প্রতাপ কে দেখিয়েছেন কবে! ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও বুক চিতিয়ে সামনে তাকানো যায়, লড়াই করা যায় – শিখিয়ে দিয়ে গেলেন ফখর। ইতিহাসে পাকিস্তানের এই হার লেখা থাকবে, লেখা থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়। একই সাথে ফখরের বীরত্বটাও লেখা হয়ে গেল সোনার অক্ষরে। তিনি হয়তো পারেননি, কিন্তু হারেননি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link