দ্যা র‍্যামসি কার্স

২০০৯ সালের ২২ আগস্ট, এমিরেটসে আর্সেনালের মুখোমুখি পোর্টসমাউথ।

দলের ৪-০ গোলের জয়ের পথে তৃতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের নতুন সাইনিং তরুণ ওয়েলস মিডফিল্ডার অ্যারন র‍্যামসি। দলের জয় পাশাপাশি নিজের গোল সবমিলিয়ে দারুণ এক রাত ছিল র‍্যামসির জন্য।

র‌্যামসি গোল করার ঠিক দুদিন পরই আমেরিকাবাসী শুনলো এক দুঃসংবাদ। মারা গেলেন ১৯৬২ সাল থেকে ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর দুঁদে রাজনীতিবিদ টেড কেনেডি। ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত কেনেডি নিজ বাড়িতেই মারা যান। কিন্তু র‍্যামসি কি তখনো জানতেন এই ছিল সবে শুরু? এই গোলের মাধ্যমেই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন এক অধ্যায়ের।

যে অধ্যায়ের নাম দ্য র‌্যামসি গোল কার্স!

হ্যাঁ, এখন দুনিয়া জুড়ে বিশ্বাসটাই এমন। র‌্যামসি গোল করলেই মারা যান কোনো না কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। র‌্যামসির গোল মানেই এক শোকের আগমনী বার্তা। র‌্যামসি নিজেও জানেন তার এই গোল অভিশাপের কথা।

কার্ডিফ শহরের রাস্তায় ফুটবল খেলে বেড়ে উঠা র‍্যামসি ছোটবেলাতেই শহরের স্থানীয় ফুটবল দল কার্ডিফ সিটির হয়ে শুরু করেন। কার্ডিফে এক তরুণ মিডফিল্ডার দারুণ খেলছে এমন কথা শোনার পর খোদ আর্সেন ওয়েঙ্গার মাঠে চলে এলেন তার খেলা দেখতে।

তার জহুরীর চোখ খাঁটি হীরে চিনতে ভুল করলো নাহ, ২০০৮ মৌসুমে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ালেন এই ওয়েলশম্যানকে। কিন্তু কি জানতেন শুরু থেকেই তার নামের পাশে অপয়ার অপবাদ? র‍্যামসি গোল করলেই যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মারা যান সেলেব্রিটিরা। আসুন জেনে নেই র‍্যামসির আরো কয়েকটি অলক্ষুণে গোলের কথা।

২০১১ সালের ১ মে। এমিরেটসে র‍্যামসির একমাত্র গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানইউয়ের বিপক্ষে জয় পায় গানার্সরা।পুরো লন্ডন সেদিন উৎসব করেছিল র‍্যামসির সাথে। হয়তো আরো কয়েকদিন পত্রিকার পাতায় ঘুরাঘুরি করতো র‍্যামসির গোলের কথা কিন্তু পরের দিনই মারা যান ওসামা বিন লাদেন।

আমেরিকান নেভির সিল টিমের  এক গোপন অভিযানে অ্যাবোটাবাদে নিজ বাড়িতেই হত্যা করা হয় এই বিশ্বকাঁপানো আল কায়েদা নেতাকে।

২ অক্টোবর, ২০১১। টটেনহ্যামের বিপক্ষে পরাজিত হওয়া ম্যাচে আর্সেনালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন র‍্যামসি। এর তিন দিন পরেই মারা যান তথ্যপ্রযুক্তির যুগের কিংবদন্তি অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। মূলত জবসের মৃত্যুর পর থেকেই কানাঘুষা শুরু হয় র‍্যামসি কার্স নিয়ে।

দ্বিতীয় ঘটনার দিনপনেরো পরের কথা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে মার্সেইয়ের বিপক্ষে ইনজুরি সময়ে গোল করে আর্সেনালকে জয় এনে দেন র‍্যামসি। সমর্থকরাও দারুণ উল্লাসিত ছিলেন র‍্যামসিকে নিয়ে। কিন্তু এরপরের দিনই বিদ্রোহিদের হাতে প্রাণ হারান লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। মূলত গাদ্দাফির মৃত্যুর পর থেকেই জোরদার গুঞ্জন শুরু হয় র‍্যামসি অভিশাপ নিয়ে।

২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করেন র‍্যামসি। আর পরের দিনই মারা যান তারকা সংগীতশিল্পী হুইটনী হাস্টন।

২০১৩ সালের ২১ মার্চ টটেনহ্যামের বিপক্ষে আবারো গোল করেন র‍্যামসি। এবার আর একজন নয়, পরেরদিন মারা যান দুই দুইজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। প্রথমে মারা যান তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড় পল উইলিয়ামস, পরের দিনই তার সহযাত্রী হন বরিস বারাজোরস্কি।

২০১৩ সালে ৩১ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান হলিউড তারকা পল ওয়াকার। আজীবন গতির সাথে আপোষ না করা ওয়াকার হেরে যান গতির কাছে। তার মৃত্যুতে বিষাদের ছায়া নেমে আসে পুরো হলিউডজুড়ে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো তার আগেরদিনই জোড়া গোল করেন র‍্যামসি।

২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল হাল সিটির বিপক্ষে দারুণ এক গোল করেন র‍্যামসি। ঠিক সেদিনই মারা যান বিখ্যাত বক্সার রবিন কার্টার।

সে বছরেরই আগস্টের ১০ তারিখে ম্যানসিটির বিপক্ষে গোল করেন তিনি। তার তিনদিন পরই মারা যান প্রখ্যাত হলিউড অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস।

২০১৫ সালের এপ্রিলের ১১ তারিখ বার্নলির সাথে গোল করার পর আবারো ঘটে জোড়া মৃত্যুর ঘটনা। দুদিন পর ১৩ তারিখে মারা যান উরুগুয়ের বিখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো এবং নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস।

র‍্যামসির অলক্ষুণে গোলের সর্বশেষ শিকার ভারতের বিখ্যাত দৌঁড়বিদ মিলখা সিং। গত জুনে  তুরস্কের বিপক্ষে ওয়েলশের হয়ে গোল করেন র‍্যামসি আর ঠিক পরেরদিন নিজের বাড়িতে মারা যান মিলখা সিং।

র‍্যামসির অভিশপ্ত গোল থেকে রেহাই পাননি আমেরিকান ফাস্টলেডি ন্যান্সি রিগ্যান, হ্যারি পটারের নির্মাতা অ্যালান রিকম্যান, ইংরেজ গায়ক ডেভিড বোয়ি, মেক্সিকান গায়িকা চ্যাভেলা ভার্গাস, আর্জেন্টাইন স্বৈরশাসক জোসে ভিদেলা, বক্সার কেন নর্টন, অভিনেতা রজার মুরসহ আরো অনেকে।এখনও পর্যন্ত বয়সভিত্তিক, ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮০টি গোল করেছেন র‍্যামসি। এর মাঝে ২০টি গোলের পরই মারা গেছেন ২৩ জন। অর্থাৎ সংখ্যার হিসেবে ২৫% গোলের পর মৃত্যু ঘটে অন্যদের।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এভারটনের বিপক্ষে র‍্যামসির হ্যাটট্রিকের পর নেটিজনদের মাঝে কৌতুকের বন্যা বয়ে যায়, এই ভেবে যে এবার কতজন মারা যান। সৌভাগ্যক্রমে সেবার কেউই মারা যাননি।

র‍্যামসিকে মজা করে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘র‍্যামসি! আপনার গোল নাকি অভিশপ্ত? আর আপনার গোলের পর নাকি বড় কোনো সেলিব্রেটি মারা যান?’

উত্তরে মৃদু হেসে র‍্যামসি বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস! আমি খুব বেশি গোল করিনি। নয়তো ফলাফল আরো ভয়াবহ হতে পারতো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link