অস্ট্রেলিয়ানদের উর্বর ক্রিকেট মস্তিষ্কের সুখ্যাতি গোটা বিশ্বজুড়েই। অতীতে ক্রিকেট মাঠে বেশ কয়েকবারই নিজেদের প্রত্যুৎপন্নমতির পরিচয় দিয়েছে অজিরা। এবারের ভারত সফরেও নিজেদের বুদ্ধিমত্তার ছাপ রাখলো স্টিভেন স্মিথের দল। আইসিসির নিয়মের মারপ্যাঁচে কোনো রিভিউ না নিয়েই প্রায় প্রতি বলেই ডিআরএস চেক করাতে বাধ্য করছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা!
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩তম ওভারের কথাই ধরা যাক না। বোলিংয়ে ছিলেন অফস্পিনার নাথান লিঁও। প্রথম বলটাই ছিল আর্ম বল, কোনোদিকে বাঁক না খেয়ে বলটা সোজা আশ্রয় নেয় উইকেটকিপারের হাতে। ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পূজারা রীতিমত বুঝতেই পারেননি। কিপার অ্যালেক্স ক্যারি বলটা ধরেই স্ট্যাম্প ভাঙেন এবং আউটের আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরোর কাছে পাঠানো হয় সিদ্ধান্তটা, তিনি সম্ভাব্য সকল ধরনের ডিসমিসালই চেক করে দেখেন।
আইসিসি সেকশন ডি ২.১.৪ ধারায় বলা আছে, যদি তৃতীয় আম্পায়ার অন্য কোনো উপায়ে আউটের কারণ খুঁজে পান, তাহলে তিনি বিষয়টা মাঠের আম্পায়ারকে জানাবেন যাতে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নেয়া হয়।
সেই কারণেই কিনা কেটেলবরোকে স্ট্যাম্পিংয়ের আগে প্রথমে কট বিহাইন্ডের জন্যেও চেক করতে হয়। ভাগ্যিস পূজারার ব্যাটে বল লাগেনি, কিন্তু লাগতেও তো পারতো। এখানেই অস্ট্রেলিয়ানদের বুদ্ধির খেল, তাঁরা বেশিরভাগ বলকেই কট বিহাইন্ডের জন্য চেক করতে পাঠাতে পারছে এবং সেটাও কোনো রিভিউ নেয়া ছাড়াই!
তবে কি হত যদি স্কয়ার লেগ আম্পায়ার তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে না পাঠাতেন সিদ্ধান্তটা? সেক্ষেত্রে হয়তো ডিআরএস নিয়ে ঝুঁকি নিতেই হত অস্ট্রেলিয়ানদের। এড়ানোর কোনো উপায়ই থাকতো না। তবে স্ট্যাম্পিংয়ের সময় আম্পায়াররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৃতীয় আম্পায়ারের দ্বারস্থ হন। কারণ এত দ্রুত সময়ে স্ট্যাম্পিং ঘটে যায় যে খালি চোখে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা অনেক কঠিন।
অস্ট্রেলিয়ানরা কিন্তু ইন্দোরেই প্রথম এই কাজ করছে না। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে যথাক্রমে নাগপুর এবং দিল্লিতেও একই ট্যাকটিক্স অনুসরণ করেছে অজিরা। তাঁরা সম্ভাব্য প্রতিটা কট বিহাইন্ড আবেদনকে তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠাচ্ছে স্ট্যাম্পিংয়ের অজুহাতে।
তবে অজিদের এমন কৌশলে সবাই বেশ মুগ্ধ এমনটা কিন্তু নয়। ভারতের বিখ্যাত হার্শা ভোগলেই যেমন টুইট করেছেন, ‘আম্পায়াদের নিশ্চিতভাবেই একটা উপায় বের করতে হবে যাতে কিপার প্রতি বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের অজুহাতে রিভিউ নিতে না পারে।’
বুদ্ধিতে জয়ের পাশাপাশি ইন্দোরে মাঠের খেলাতেও এগিয়ে অজিরা। নাথান লিঁও’র ঘূর্ণিতে রীতিমত অসহায় লাগছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। প্রথম ইনিংসে ১০৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও মাত্র ১৬৩ রানে গুটিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। ম্যাচে লিঁও একাই নিয়েছেন ১১ উইকেট। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য অজিদের লক্ষ্য ৭৬ রান। কোনো অঘটন না ঘটলে ইন্দোরেই সফরের প্রথম জয় পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়নরা।