সুগন্ধ ছড়ায় দিনভর, তুমি তারচেয়ে সুন্দর

ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি; জাতীয় দলের শুরুটা ছিলো যাচ্ছেতাই! টানা ব্যর্থতা যখন ঘিরে ধরেছিলো, তখনি ফাইনালে জ্বলে উঠেছিল তাঁর ব্যাট। ফাইনাল মঞ্চে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া লিটন এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের পক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিক। বাইশ গজে ক্লাস দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। আশা দেখাচ্ছেন আবার কখনো বা হারিয়ে খুঁজছেন! দিনশেষে তিনি বর্তমান সময়ের ক্রিকেটারদের একজন তিনি। তিনি লিটন কুমার দাস।

  • ক্লাস ব্যাটসম্যান! সত্যিই?

– হ্যাঁ।

আপনি যদি কোহলি-বাবর-রুটদের ব্যাটিং উপভোগ করে শান্তি পেয়ে থাকেন তাহলে লিটনের ব্যাটিং দেখেও মুগ্ধ হতে হবে। ক্রিকেট ব্যকরণ মেনে দারুণ সব শট খেলে মন জয় করেছেন হাজারো ভক্তদের। তবুও কোথায় জানি একটা শূন্যতা বা হতাশার জন্ম নেয়!

  • হতাশা! কোথায়?

লিটন বাইশ গজে তার ক্লাস দেখালেও এখনো হয়ে ওঠেনি ধারাবাহিক! বাইশ গজে লিটনের আগমনের পর যেটুকু সময় ক্রিজে থাকেন তাতেই মাতিয়ে তুলতে সক্ষম হলেও প্রায় ম্যাচেই হতাশ করে ফিরেন সাজঘরে। যেখানে ক্লাসের মূল্য থাকেনা। থাকে হতাশার গল্প।

অথচ এই লিটনকে নিয়েই ২০১২ সালে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন ইংলিশ কোচ ইয়ান পন্ট! বলেছিলেন, ‘আগামীতে বাংলাদেশ দল এমন একজন ক্রিকেটারকে পেতে যাচ্ছে, যার মধ্যে আমি সুপারস্টার হওয়ার সব লক্ষণই দেখতে পেলাম। তার নাম লিটন দাস।’

পন্টের এই বাণী সঠিক প্রমাণ করতে সময় নেননি লিটন দাস! বছর তিনেক পর জাতীয় লীগে ৫ সেঞ্চুরিতে ৮৩.৩৩ গড়ে ১০২৪ রান করে জানান দিয়েছিলেন নিজের সামর্থ্যের। সেই সাথে নজরে এসেছিলেন জাতীয় দলের নির্বাচকদের। লাল-সবুজের জার্সিতে সুযোগও এসেছিলো, কিন্তু শুরুটা ছিলো হতাশাজনক; বড্ড আশাহত করেছিলেন লিটন।

হতাশাজনক পারফরম্যান্সে জাতীয় দলে জায়গা হারানো লিটন ২০১৭ এ ঘরোয়া ক্রিকেট করে বসেন ডাবল সেঞ্চুরি! সেই মৌসুমে ১৪ ম্যাচে ৭৫২ রান করে জায়গা করে নিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট সিরিজে। এরপর থেকে জাতীয় দলে প্রায় নিয়মিত দেখা গেলেও ধারাবাহিকতায় এখনো নিয়মিত হতে পারেননি এই ক্লাস ব্যাটসম্যান।

  • আচ্ছা, লিটন কি শুধু হতাশাতেই ডুবিয়েছেন?

হয়তো না! হতাশাজনক পারফরম্যান্সের মাঝেও লিটন নিজেকে চিনিয়েছেন বেশ কয়েকবার। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি! বিশ্বমঞ্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার না মানা ৯৪ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস কিংবা ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ড ব্যাটিং। সেই সাথে তামিম ইকবালকে টপকে দেশের পক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যাওয়া লিটন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চিনিয়েছেন নিজেকে। এইসবকিছুর কারণে হয়তো কিছুটা ছাড় পেতেই পারেন এই ক্লাসিক ব্যাটসম্যান।

  • লিটনের শুরুটা কেমন ছিল?

ফিরে যাবো অনূর্ধ্ব -১৯ ক্যারিয়ারে। যেখানে লিটন নিজের ক্লাস দেখিয়েছেন ২০১২-১৪ মৌসুমেই। লাল-সবুজের জার্সিতে বাইশ গজে এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করা লিটন সর্বোচ্চ ১০২ রানে ৪৭ গড়ে নামের পাশে যুক্ত করেছিলেন ঠিক ৫৬৪ রান। যেখানে অস্ট্রেলিয়া এবং আরব আমিরাতে মাটিতে লিটনের ব্যাটিং গড় ছিলো ৫২.৪০ এবং ৫০.০০! সবমিলিয়ে বলতে গেলে লিটন তার ক্লাস অনেক আগে থেকেই দেখিয়ে আসছেন।

  • জাতীয় দলে লিটনের পারফরম্যান্স?

২০১৫ সালে সাদা পোশাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হওয়া লিটন বাংলাদেশের পক্ষে ১৫ তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ইতিমধ্যেই। যেখানে সাদা পোশাকে ৭ ফিফটির দেখা পেলেও কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির দেখা পাননি এখনো। এর মাঝে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ৫ ম্যাচে ৪২.৭৫ গড়ে রান করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

সাদা পোশাকের গল্প শেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে নজর দিতেই লিটন মন্দের ভালো হিসেবে প্রমাণ করেছেন নিজেকে। ৩০ গড়ে নামের পাশে যুক্ত করেছেন ১১১৫ রান; যেখানে ৩ সেঞ্চুরির সাথে রয়েছে ৩ ফিফটি। এছাড়াও এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে করেছেন সেঞ্চুরির রেকর্ড!

  • টি-টোয়েন্টি?

টি-টোয়েন্টিতেও বাইশ গজ মাতিয়েছেন লিটন দাস! এই ফরম্যাটে লিটন নিজের ক্ষুধা মেটাতে পারেননি এখনো। জাতীয় দলের পক্ষে ২৯ ম্যাচে ২২.৭১ গড়ে করেছেন ৬৩৬ রান। রয়েছে ৪ ফিফটি। এই ফরম্যাটে ৭ টি পজিশনে ব্যাটিং করতে দেখা গিয়েছে তাকে।

  • ঘরোয়া ক্রিকেট?

প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে ৬৯ ম্যাচে ৪৮.৬০ গড়ে ১৫ সেঞ্চুরিতে নামের পাশে যুক্ত করেছেন ৫৩৪৬ রান! এছাড়াও লিস্ট এ ক্রিকেটের ১১৬ ম্যাচে ১০ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪২২৬ রান। সাথে টুয়েন্টি টুয়েন্টি ক্রিকেটে ১১০ ম্যাচে যুক্ত করেছেন ২৩৪০ রান।

শুরুতে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও বর্তমানে অনেকটাই ধারাবাহিক লিটন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ওয়ানডে ফরম্যাটে হতাশ করলেও সাদা পোশাকে ছিলেন দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। যদিও উইকেটরক্ষক লিটন হতাশায় ডুবিয়েছেন ঠিকই!

লিটন দাস; বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে নান্দনিক ব্যাটসম্যান। যেটুকু সময় ক্রিজে থাকেন সেটুকু সময়েই হতাশা বাড়িয়ে দেন কয়েকগুণ। দিনশেষে লিটন নিজের দূর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠে ধারাবাহিক হবেন এমনটাই চাওয়া। একজন লিটনের হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাক অনেকদূর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link