সিরিজ শুরুর আগে কেউ একজন মজা করে ফেসবুকে লিখেছেন বাংলাদেশের তিন স্পিনারের সমান রাকিম কর্নওয়াল। সেটা যে তার ওজন নিয়ে মশকরা তা আর বলতে।
সেই হাসি এখন অবশ্য নেই । প্রথম টেস্টের শেষে বাঙালি দর্শকের হাসি ঠাট্টা অনেকটা মিইয়ে গেছে কাইল মেয়ার্সের দানবীয় ব্যাটে। তবে প্রথম ইনিংসে ব্যাকফুটে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই টেস্টে কিন্তু সফরকারীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সেই কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে।
বাংলাদেশ যখন সেকেন্ড ইনিংস শুরু করেছিল তখনই তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল ১৪০ কেজি ওজনের এই অফ স্পিনার। সেই টেস্টে সত্যকার অর্থেই যিনি ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের তিন স্পিনারকে।
সেই কর্নওয়ালের শুরুটা কিন্তু হুট করে হয়নি। টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় সেই ২০১২ সালে। তিনি তখন খেলতেন এন্টিগুয়ার লিওয়ার্ড আইল্যান্ড দলে। তবে লাইম লাইটে আসতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো তিনটি বছর। ২০১৫ সালে ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গেলে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড একাদশের বিরুদ্ধে।
সেই দলের বিশালাকৃতির অচেনা খেলোয়াড় কর্নওয়ালকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সেই কি হাসি!! তাদের হাসিকে ম্লান করে দিয়ে পুজারা, কোহলিসহ ভারতীয় দলের পাঁচটি উইকেট তুলে নেয় কর্নওয়াল।
আঠাশ বছর বয়সী কর্নওয়াল আপাতত অ্যান্টিগার আশি হাজার জনসংখ্যার একমাত্র প্রতিনিধি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। সেই ২০১২ সালে রিকার্ডো পাওয়েলের পর এন্টিগুয়া আর কোন স্টার উপহার দিতে পারে নি। যদিও তাদের অতীত ক্রিকেট ইতিহাসে আছে ভিভ রিচার্ডস, কার্টলি অ্যামব্রোস, অ্যান্ডি রবার্টসের মতো বড় বড় নাম। যেইসব নামের ওজন নি:সন্দেহে কর্নওয়ালের শরীরের ওজনের চেয়েও বেশি।
অনেক তো হলো পুরোনো কাসুন্দি। এবার বরং কর্নওয়ালের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলি। আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের কাছে কর্নওয়াল মানে এক রাশ আতঙ্ক, যা তাদের বুকের ওপর পাথর হয়ে চেপে আছে।
তা না হলে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটনের মতো সেট ব্যাটসম্যানরা কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ প্র্যাকটিস করে সাজঘরে ফিরে আসবে কেন? আর এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনংসে চমৎকার বোলিংয়ে কর্নওয়াল শুধু সাজঘরে ফেরাননি শান্ত, মিঠুন, লিটন আর তাইজুলকে বরং ফিরিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের পুরো স্বপ্নটাকে। তবে এজন্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সাথে সাথে কৃতিত্ব কর্নওয়ালের ঘুর্নী বল এবং তড়িৎ বুদ্ধিমত্তারও। তার পুরস্কার হিসেবে তাই জিতে নিয়েছেন ম্যাচ সেরার তকমা।
ছয় ফুট চার ইঞ্চির এই বোলার বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাবধান ঠিক ততোটাই যতটা মমিনুল আর কর্নওয়ালের উচ্চতার ব্যবধান।
পূর্নশক্তির উইন্ডিজ দলেও এই কর্নওয়াল সাদা পোশাকে নিয়মিত সদস্য। আর এবার বাংলাদেশ সফরে তিনি ছিলেন কন্ডিশনের সুবাদে বড় তারকা। তবে প্রতিপক্ষ হয়েও এই কয় দিনে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন হাজারো বাংলাদেশি দর্শকের হৃদয়ে। ইয়ান বিশপ অবশ্য ধারাভাষ্যে বসে এক ধাপ বাড়িয়ে বললেন, ‘এই ছেলেটা এখন জাতীয় নায়ক!’
রাকিমের এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক!