ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে হুট করেই একটা ঝড় বয়ে গিয়েছিল তামিম ইকবালের উপর দিয়ে। ইনজুরি আর ফিটনেসের সঙ্গে লড়াই করতে যখন ব্যস্ত ছিলেন তিনি; তখন অধিনায়কত্ব থেকে সরে যেতে হল তাঁকে, এমন কি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গাও পেলেন না। এরপর থেকে জাতীয় দল তাঁর কাছে অতীত হয়ে গেল।
এসব কিছুর জন্য দায়ী অদৃশ্য শক্তিকে তাই জবাব দিতেই হতো তামিমের, জবাব দিতে হতো তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া সব ষড়যন্ত্রের। সেজন্য তিনি বেছে নিলেন বিপিএলের মত মঞ্চকে। অধিনায়ক হয়ে, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চ্যাম্পিয়ন করলেন ফরচুন বরিশালকে। তাতেই একটা চপেটাঘাত পড়লো পর্দার আড়ালে থাকা সব অপশক্তির গালে।
সদ্য বিদায়ী বিপিএলের শুরু থেকেই ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি। চোখে-মুখে ছিল কিছু একটা করে দেখানোর প্রত্যয় আর বুকে ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাস। তাই তো প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতে হেরেও পিছু হটেননি তিনি। সবশেষে এলিমেনেটর, কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালের কঠিন পথ পেরিয়ে বরিশালের স্বপ্নকে পূর্ণতা দিয়েছেন, আরাধ্য শিরোপা জিতিয়েছেন তাঁদের।
এই আসরে সবমিলিয়ে ১৫ ইনিংস ব্যাটিংয়ে নেমেছেন এই তারকা, ৩৫ এর বেশি গড়ে করেছেন ৪৯২ রান। তাঁর ব্যাট থেকে কোন সেঞ্চুরি না এলেও হাফসেঞ্চুরি এসেছে তিনটি, এছাড়া জয়ের ভিত গড়ে দেয়া পারফরম্যান্স করেছেন আরও কয়েক ম্যাচে। ফাইনালেও ২৬ বলে ৩৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে সমীকরণ সহজ করে দিয়েছিলেন অনেকটাই।
ধারাবাহিক পারফরম্যান্স আর নান্দনিক অধিনায়কত্বের স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই ওপেনার। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত জিতেছেন বিপিএলের ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’ পুরষ্কার। তাঁর প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ পুরো বাংলাদেশ, নিন্দুকেরাও বাধ্য হয়েছে প্রশংসা করতে। সর্বোপরি, পরিপূর্ণ একটা টুর্নামেন্ট শেষ করলেন তিনি; আর কোন চাওয়া বাকি থাকার কথা নয়।
গত কয়েক মাস থেকে চলমান বিতর্কের তীব্র স্রোতেও ভেসে যাননি তামিম ইকবাল; ভুলে যাননি নিজের কাজ। পাহাড়ের মত অটল হয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন, জবাবটাও দিয়েছেন মাঠের খেলায়। তাঁকে কেন কলিজাওয়ালা খান বলা হয় সেটাই আরেকবার প্রমাণ করলেন, বুঝিয়ে দিলেন তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব।