নীল সমুদ্রে ভারতের কাপধ্বনি

সব ভারতীয় সমর্থক পরে এসেছিলেন ভারতের নীল জার্সি। পাকিস্তানের একেকটা উইকেট পড়ার সাথে সাথে এই নীল পোশাকের সমুদ্রে ঢেউ উঠছিল। সম্ভবত নিজেদের বিপক্ষে এই বিপুল সমর্থনের চাপ পাকিস্তানের মিডল অর্ডার নিতে পারলো না।

ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানেই আলাদা উত্তেজনা। এই দুই দেশের ফ্যান বাদে অন্য দেশের সমর্থকরা যদিও আজকাল আওয়াজ তোলার চেষ্টা করছেন ৭-০ (যা এবার ৮-০ হল) মার্কা একপেশে স্কোরলাইন থাকতে কেনো ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে এত উত্তেজনা এখনও থাকবে? কেনো যেকোনো বড়ো আইসিসি ইভেন্টে মার্কি ইভেন্ট হবে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ?

ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে উঠে গেছে অনেক প্রশ্ন। ধর্মশালার আউটফিল্ড, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান না হওয়া, টিকিট নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ, পাকিস্তানি সাংবাদিকদের ভিসা দিতে দেরি করা ইত্যাদি নিয়ে মাঠের বাইরের অভিযোগেই জেরবার বিসিসিআই। তারপরে ম্যাচ শুরুর আগে অরিজিৎ সিং সুনিধী চৌহানদের অনুষ্ঠান টিভিতে সম্প্রচার না করা নিয়ে অভিযোগ।

এর মধ্যেই রোহিত টস জিতে ফিল্ডিং নিলেন, এবং প্রথম দু তিন ওভারের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গেলো সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়ে। পিচে সুইং হচ্ছে না, সিরাজের বল সুন্দরভাবে ব্যাটে আসছে এবং দুই পাক ওপেনারকে স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে। ভারত সমর্থকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলার জন্যে যথেষ্ট।

কে ভেবেছিল শামির দলে না থাকার জন্যে শার্দূল ও যার উপরে অভিযোগের তীর আসছে, সেই সিরাজ খেলার গতির বিরুদ্ধে ক্রস সিম ডেলিভারি করে আবদুল্লাহ শফিক কে তুলে নেবেন। একটু পরে হার্দিক তুলবেন ইমামকে।

কিন্তু অভিজ্ঞ বাবর আর রিজওয়ান জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রান রেট থাকছিল ৫ এর উপরেই। ১৫৫-২ স্কোরে পাকিস্তান শিবিরকে স্বস্তিতে আর ভারতীয় শিবিরকে চিন্তিত লাগছিল। এই সময়েই ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্তটা উপহার দিলেন প্রায় সবার প্রতিবেদনেই ‘অটোচালকের ছেলে’ হিসেবে উল্লেখিত মোহাম্মদ সিরাজ। বাবর আজমের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে।

এরপরের পাঁচ ওভারের মধ্যেই পাকিস্তান ১৬৮-৬ হয়ে গেলো। কুলদীপ নিলেন এক ওভারে দুই উইকেট। বুমরাহ রিজওয়ান কে অসাধারণ স্লোয়ার অফ কাটারে বোল্ড করলেন। এরপরে আধ ঘন্টা আগেও ৩০০র স্বপ্ন দেখা পাকিস্তান ১৯১ রানে অলআউট হয়ে গেলো।

এই রান এই পিচে ভারতের তুলতে অসুবিধে হবার কথা নয়। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে শুভমন গিল অসাধারণ কয়েকটি বাউন্ডারি মেরে একটা স্কোয়ার কাট কন্ট্রোল করতে না পেরে উইকেট দিয়ে বসলেন আফ্রিদিকে।

কোহলিও উইকেট গিফট করলেন। আর একাই মোটামুটি খেলাটা অস্ট্রেলিয়া বনাম সোনালী সংঘ লেভেলে নামিয়ে আনা রোহিত নিশ্চিত সেঞ্চুরি ফেলে এসে আবার কিছু দর্শককে বলার সুযোগ করে দিলেন যে – ‘আসল ম্যাচে খেলে না, বিগ ম্যাচে ফ্লপ!’

ম্যাচের মূল আকর্ষণ ছিল মোতেরার নতুন স্টেডিয়াম যাতে এক লাখেরও অনেক বেশি দর্শক বসতে পারেন। সব ভারতীয় সমর্থক পরে এসেছিলেন ভারতের নীল জার্সি। পাকিস্তানের একেকটা উইকেট পড়ার সাথে সাথে এই নীল পোশাকের সমুদ্রে ঢেউ উঠছিল। সম্ভবত নিজেদের বিপক্ষে এই বিপুল সমর্থনের চাপ পাকিস্তানের মিডল অর্ডার নিতে পারলো না।

দেবীপক্ষের সূচনায় ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান যে দারুণভাবেই ফিফথ গিয়ারে পৌঁছে গেল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পাকিস্তানেরও এখনও অনেক ম্যাচ বাকি, সেমিফাইনালের আগে বিসর্জন হবে কিনা, সময় বলবে। তবে গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে একপেশে হারলে অনেকসময় পরের ম্যাচেও তার প্রভাব পড়ে।

যেমন গোটা এশিয়া কাপ ভালো খেলে আসা শ্রীলঙ্কা ফাইনালে ভারতের কাছে ৫০ রানে অলআউট হবার পর থেকে অনেকটাই ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। পাকিস্তানের সামনে লড়াইটা সহজ নয়। দুই প্রতিবেশীকে হারিয়ে ভারত এবার তৃতীয় প্রতিবেশী বাংলাদেশের সামনে।

ও হ্যাঁ, আসল কথা বলতেই ভুলে গেছি। শার্দূল ঠাকুর তো এই বিশ্বকাপে দীনেশ মোঙ্গিয়ার ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর রান বা উইকেট নেওয়া কোনোটাই না করলেও চলবে। দল যখন জিতছে, তখন আর কি? চালাও পানসি বেলঘরিয়া।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...