আকাশ জুড়ে পাখা মেলি
স্টুয়ার্ড ব্রডের বেড়ে ওঠাটা ক্রিকেটের সান্নিধ্যে। বাবা ক্রিস ব্রড সাবেক ইংলিশ ওপেনার এবং বর্তমানে কাজ করছেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে। ব্রডের বোন জেমাও ক্রিকেটের সাথে জড়িত। তিনি ইংলিশ অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন।
স্টুয়ার্ড ব্রডের বেড়ে ওঠাটা ক্রিকেটের সান্নিধ্যে। বাবা ক্রিস ব্রড সাবেক ইংলিশ ওপেনার এবং বর্তমানে কাজ করছেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে। ব্রডের বোন জেমাও ক্রিকেটের সাথে জড়িত। তিনি ইংলিশ অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করেন। স্টুয়ার্ড ব্রড জন্মেছিলেন ১৯৮৬ সালের ২৪ জুন। ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় টেস্ট উইকেট-গ্রহীতাদের একজন ব্রড।
বাবার মতো স্টুয়ার্টও একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। ১৭ বছর বয়সে তাঁর উচ্চতা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তাঁর বর্তমান উচ্চতা ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। পেস বোলিংয়ে মানানসই উচ্চতা বলে তিনি নিজেকে পেস বোলারে রূপান্তরিত করেছিলেন। বোলিংয়ে ব্রডের গতি, বাউন্স ও মুভমেন্ট অসাধারণ বলে তিনি উইকেট নেয়াতে বাড়তি সুবিধা পান।
জেমস অ্যান্ডারসনের সাথে ব্রডের কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত বোলিং জুটি ছিল। ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটি ৫০০ টিরও বেশি টেস্ট উইকেট নিয়েছেন একসাথে। তাদের পাশাপাশি ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০০ টির বেশি টেস্ট উইকেট শিকারি কেবল মাত্র আর চারটি জুটি রয়েছে। তাঁরা হলেন কার্টলি অ্যামব্রোস এবং কোর্টনি ওয়েলশ, ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনিস, শন পোলক এবং জ্যাক ক্যালিস, মাখায়া এনটিনি এবং ক্যালিস।
ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই লর্ডসে অনার্স বোর্ডে প্রবেশের গৌরব অর্জনকারী মাত্র সাতজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ব্রড একজন। ব্রডকে লর্ডস এর লড বলাই যায়। ব্রড পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেন।
২৬ আগস্ট, ২০১০ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে ইংল্যান্ড যখন সাত উইকেটে ১০২ রানের আশাহীন অবস্থানে ছিল তখন অষ্টম উইকেট জুটিতে জোনাথন ট্রটের (১৮৪) সাথে ৩৩২ রান রানের জুটিতে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। সেই টেস্টে ইংল্যান্ড ইনিংস এবং ২২৫ রানে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু টেস্টটি স্পট-ফিক্সিং বিতর্কের জন্য কুখ্যাত হয়ে ওঠে যার ফলে মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ আসিফকে ও সালমান বাটকে নিষিদ্ধ করা হয়।
লর্ডসের প্রতি ব্রডের ভালোবাসা বোলিংয়ে আরও বেশি প্রসারিত। ব্রডের ক্যারিয়ারে একই ইনিংসে সাতটি উইকেট নেয়ার ঘটনা দুইবার ঘটেছে। আর দুটি ঘটনার সাক্ষীই ক্রিকেটের পবিত্র মাঠ লর্ডস। যার একটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৪ রানে সাত উইকেট যেখানে ইংল্যান্ড ১৭০ রানের জয় পায় এবং অন্যটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭২ রানে সাতটি উইকেট নেয়ার ঘটনা। ব্রড লর্ডসের মাঠে সেঞ্চুরি এবং সেই সাথে পাঁচটি উইকেট নেয়ার রেকর্ডে গুবি অ্যালেন, রে ইলিংওয়ার্থ, ভিনু মানকড়, কিথ মিলার, ইয়ান বোথাম এবং অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের মতো খেলোয়াড়দের সাথে নিজের নামটিও খোদাই করে নিয়েছেন।
ব্রড প্রকাশ করেছেন যে তিনি তার বাড়ির একটি দেয়ালে ইংল্যান্ডের রাগবি অধিনায়ক মার্টিন জনসনের (ব্রডের নায়কদের একজন) একটি উদ্ধৃতি সহ একটি পোস্টার রেখেছেন যা তার জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে। ক্রিকেট বিশ্বে দুটি টেস্ট হ্যাটট্রিক করা মাত্র চার বোলারের একজন হলেন ব্রড। হিউ ট্রাম্বল, জিমি ম্যাথিউস এবং ওয়াসিম আকরাম হলেন এই রেকর্ডধারী অন্য তিনজন বোলার।
ব্রডের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বিতর্কের একটি হলো ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি ম্যাচে আউট হওয়ার পরেও ব্রড ক্রিজ ছাড়তে অস্বীকার করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ানরা আন্দোলন করেছিল এমন আচরণের, কিন্তু ইতোমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া তাদের সমস্ত রিভিউ কাজে লাগিয়ে ফেলায় ব্রড সেদিনের মতো বেঁচে গিয়েছিল। ব্রডকে তখন ড্যারেন লেহম্যান এবং বিভিন্ন মিডিয়া প্রতারক বলে অভিহিত করে।
২০১৪ সালে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছিলেন স্টুয়ার্ড ব্রড। ব্রড অধিনায়ক থাকাকালীন ভারত বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ টেস্ট সিরিজের চতুর্থ টেস্টে সেই ঘটনাটি ঘটেছিল। ব্রড যখন ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন, তখন ভারতীয় পেসার বরুণ অ্যারনের একটি দ্রুত ডেলিভারি হেলমেটের ফাঁক দিয়ে ব্রডের মুখে আঘাত করেছিল। ব্রডের নাক ফেটে গিয়েছিল। এই দুর্ঘটনার আঘাত শারীরিকভাবে সেরে গেলেও মানসিকভাবে ট্রমায় ফেলে দেয় তাঁকে। একটি সাক্ষাৎকারে ব্রড বলেছেন যে, তিনি এখনও এই ঘটনা নিয়ে দু:স্বপ্ন দেখেন।
এমন একজন ভয়ানক পেস বোলার যিনি গতি দিয়ে মাঠে প্রতিপক্ষ দলে ভীতিপ্রদর্শন করেন, তাঁর একটি দারুণ শখ রয়েছে। সেটি হলো তিনি রান্না করতে দারুণ ভালোবাসেন! ব্রডের সিগনেচার ডিশ হলো লাসানিয়া এবং স্প্যাগেটি বোলোনিজ, যদিও তিনি আরও অনেক কিছু রান্না করতে পছন্দ করেন। অবসর সময়ে রান্নাঘর তাঁর খুব প্রিয় জায়গা।
ব্রডের সৎ-মা মিশেল তাঁকে খুব ভালবাসতেন। কিন্তু মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তার মৃত্যু ক্রিস, স্টুয়ার্ট এবং জেমাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। পরবর্তীতে মোটর নিউরন রোগের সচেতনতা এবং আর্থিক সাহায্য করার জন্য তারা ‘The Broad Appeal’ নামে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্টুয়ার্ড ব্রড ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে অনুপ্রেণা হয়ে থাকবেন। ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চির এই গতিদানব এবং অসাধারণ ব্যাটারকে ক্রিকেটবিশ্ব বহুকাল মনে রাখবে।