ভারতীয় ক্রিকেটে এখন আলোচনার নব্য বিষয়ে পরিণত হয়েছেন মুকেশ কুমার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র ২৯ রান খরচা করেছেন ডানহাতি এই পেসার। ‘হাই স্কোরিং’ সেই ম্যাচে মুকেশের এই ইকোনমিকাল বোলিংটাই ভারতকে খানিকটা নিরব স্বস্তি জুগিয়েছে।
এমনকি নিজের শেষ ওভারটায় মাত্র পাঁচ রান দিয়েছিলেন মুকেশ। তাইতো তাকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। অথচ ভারতের নীল জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করবার এই সুযোগটি রীতিমত হাতছাড়া হতে বসেছিল মুকেশের। তবে দুইটি বল বদলে দিয়েছে সমগ্র দৃশ্যপট।
পশ্চিমবঙ্গের এক ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ থেকে উঠে এসেছেন ৩০ বছর বয়সী মুকেশ। যা তদারকি করছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুস। ট্রায়ালের সময় হঠাৎ করেই মুকেশ হয়ে পড়েন অনুপস্থিত। তার নাম ডাকা হয় বোলিং করবার জন্যে। তবে তিনি তখন ছিলেন বাথরুমে।
ব্যাস, পৃথিবীর চিরায়ত নিয়ম মেনে, কেউ অপেক্ষা করেনি তার জন্যে। ট্রায়াল চলতে থাকে তার আপন গতিতে। তবে মুকেশ অবশ্য অপেক্ষা করেছেন একেবারে শেষ অবধি। সুযোগ খুঁজেছেন তিনি। এমনকি ওয়াকার ইউনুস তখন মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। ঠিক সে সময়ে ইউনুস তাকে কয়েকটি বল করবার সুযোগ দেন। আর সেই স্বল্প সুযোগেই বাজিমাত করেন মুকেশ।
তাক লাগিয়ে দেন তিনি ওয়াকার ইউনুসকে। কিংবদন্তীর নজর কাড়তে আর ক’জনই বা পারে! তিনি পেরেছিলেন। তার এই ঘটনা অবশ্য বর্ণনা করেছেন ভারতের আরেক কিংবদন্তী রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তিনি বলেন, ‘ভাবুন আপনি ওয়াকারের সামনে বল করতে যাবেন অথচ আপনি তখন টয়লেটে। তারা তার নাম ডেকেছিল, তবে সে (মুকেশ) সেখানে ছিল না। সে ফিরে আসে, ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর তাদেরকে বলে যে তার নাম ডাকা হয়নি। ওয়াকার তাকে কয়েকটি বল করবার সুযোগ দেয়। আর সেই দুই বলই তার (মুকেশের) জীবন পালটে দিয়েছে, আজ সে ভারতের হয়ে বোলিং করছে।’
মানুষের জীবন বদলে যেতে সময় নেয় না এক মুহূর্ত। তবে জীবনে আসা স্বল্প সুযোগই কাজে লাগাতে হয়। নিজের ভেতরে থাকার প্রতিভার সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিতে হয়। সে কাজটাই করতে পেরেছিলেন মুকেশ কুমার। এরপর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের রাস্তা ধরে তিনি জাতীয় দলের ঠিকানা খুঁজে নেন।
একটু দেরীতেই শুরু হয়েছে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে সমূহ সম্ভাবনা ছিল এই ক্যারিয়ারের সূত্রপাত না ঘটবার। বহুদিন ধরেই তিনি খেলে যাচ্ছিলেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে। তবে আলো তাকে খুঁজে নেয়নি কখনোই। এক মুহূর্তেই তিনি নিজের প্রতিভার আলোকচ্ছটায় নিজের অস্তিত্বে জানান দিয়েছেন মুকেশ কুমার।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো মনে করেন মুকেশই হতে পারেন পরবর্তী মোহাম্মদ সামি। এই নিয়ে অশ্বিন বলেন, ‘আমি শুরুতে মনে করতাম মোহাম্মদ সিরাজ হবে জুনিয়র সামি, তবে এখন মনে হয়ে মুকেশ হতে পারে।’ এই ভরসার জায়গাটা তৈরি করে ফেলেছেন মুকেশ। এখন স্রেফ হাতে থাকা সময়টুকু কাজে লাগানোর পালা।