দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত? বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই প্রশ্নের উত্তর হয়ে যেন হাজির হলেন লিটন কুমার দাস। বাংলাদেশের ভাঙা তরীকে স্রোতের বিপরীতে চালিয়ে নিয়ে গেলেন।
রাওয়ালপিন্ডির ড্রেসিং রুমের বারান্দা থেকে লিটন দেখলেন পাকিস্তানি পেসারদের তাণ্ডব। এরপর তিনি দ্রুতই চলে এলেন বাইশ গজে। তখনও লাল চেরিফলের মতই টকটকে লাল রাঙা বল। খুররাম শেহজাদ তো তুলো-ধুনো করলেন বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে।
লজ্জার কাল মেঘ ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের আকাশে। কিন্তু সেখান থেকে লিটন নিলেন দায়িত্ব। ঝলমলে এক ইনিংস খেললেন তিনি। ওই নতুন বলের প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের শর্ট বল পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানালেন ছক্কা হাঁকিয়ে। পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে এক অভেদ্য ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিটন।
মেহেদী হাসান মিরাজকে সাথে নিয়ে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন ডান-হাতি এই ব্যাটার। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ লিটনের ব্যাটেই সম্মান বাঁচানোর স্বপ্ন বুনতে শুরু করে। একটা পর্যায়ে অবশ্য মিরাজ ছেড়ে দেন সঙ্গ। কিন্তু লিটন ঠিকই একটা প্রান্ত আগলে রেখে খেলে যেতে থাকেন আপন ধ্যানে।
তাসকিন আহমেদও এসে বেশিক্ষণ টিকে রইলেন না। শেষ ভরসা হিসেবে হাসান মাহমুদ হাত বাড়িয়ে দিলেন। লিটন তার সাথে জুটি গড়লেন। রানের বিচারে হয়ত বিশাল কোন জুটি নয়। তবে সময়ের বিচারে, পরিস্থিতির মানদণ্ডে সে জুটি ছিল ভীষণ কার্যকর। ওই জুটিতে লিটনই মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
অধিকাংশ বলই নিজে খেলার চেষ্টা করেন। হাসানকে স্রেফ টিকিয়ে রাখতে চেয়েছন তিনি। আর গুটি গুটি পায়ে নিজের ব্যক্তিগত শতকের দিকে এগিয়ে যান লিটন। পেয়েও যান নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। এবারই যে প্রথম নয়। বিপর্যয়ের মুখে বারংবার এগিয়ে এসেছেন লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার ১৪১ রানের ইনিংসটিও তিনি খেলেছিলেন বিপর্যয়ের মুখে।
সেবার ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আরেকটি শতক তিনি আদায় করেছেন ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারানো অবস্থান থেকে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে খেলে গেলেন ১৩৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। এই ইনিংসকে মহা কাব্যিকও বলা চলে। আবার পরিস্থিতি বিবেচনায় লিটনের ক্যারিয়ার সেরাও বলা যেতে পারে।
যেভাবে তিনি খেলে গেলেন, তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। পাকিস্তানের সকল পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দিয়েছেন লিটন নিজ হাতে। শেষ অবধি অবশ্য বাংলাদেশের লিড নেওয়া হয়নি। কিন্তু তবুও পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেকে ১২ রান দূরে থেমেছে বাংলাদেশ। সেটা সম্ভব হয়েছে স্রেফ লিটনের সেঞ্চুরির কল্যাণে।