মাশরাফি আর কুমিল্লা। কিংবা মাশরাফি আর ইমরুল কায়েস। ঠিক যেন দুই অপরাজেয় ফাইনালিস্টের নাম। অন্তত বিপিএলের ইতিহাস তাই-ই বলে। গ্র্যান্ড ফিনালেতে তাদের যে কোনো হার নেই। যতবার তারা বিপিএল ফাইনালের পথ মাড়িয়েছে ততবারই ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পেরেছেন।
কুমিল্লা আর ইমরুল কায়েস কখনও বিপিএলের ফাইনাল হারেনি। আবার মাশরাফিও কখনও বিপিএল ফাইনালে পরাজয়ের স্বাদ পাননি। তবে এবার সেই সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। কেউ না কেউ পরাজয়ের শামিল হতে যাচ্ছেন। কারণ এবারের বিপিএলের ফাইনালটা যে হতে যাচ্ছে এই দুই দলের মাঝে, মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্স আর ইমরুলের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
বিপিএলের ইতিহাস বিবেচনা করলে, সবচেয়ে দুই সফল অধিনায়কের মধ্যে এ বারের ফাইনালের মহারণটা হতে যাচ্ছে। মাশরাফি এর আগে অধিনায়ক হিসেবে চারবার বিপিএলের শিরোপা জিতেছেন। আর দুইবার জিতেছেন ইমরুল কায়েস। তবে খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন তিনবার।
মজার ব্যাপার হল, ইমরুল কায়েস অধিনায়ক ব্যতিত যেবার শিরোপা জিতেছিলেন সেইবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। তিন দলের হয়ে মোট ৪ বার শিরোপা জিতেছেন ম্যাশ। শুরুটা হয়েছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স দিয়ে, এরপর কুমিল্লা আর রংপুরের হয়ে এক বার করে শিরোপা জিতেছেন।
মাশরাফির সামনে তাই এখন পেন্টাজয়ের সুযোগ। এ ক্ষেত্রে, ইতিহাস মাশরাফিকেই ডাকছে। কারণ কখনোই ফাইনাল হারেননি তিনি। কিন্তু তাঁর প্রতিপক্ষ দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সও কখনও ফাইনাল হারেনি। আর এই ‘অপরাজেয়’ সমীকরণটা পাল্টে যাচ্ছে এবারের ফাইনাল ম্যাচে।
মাশরাফির পাশাপাশি কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের সামনেও রয়েছে রেকর্ড গড়ার সুযোগ। এবারের ফাইনালটা জিততে পারলে কুমিল্লাকে টানা দুইবার শিরোপার স্বাদ দিবেন তিনি। এর আগে যে কীর্তিটি একমাত্র মাশরাফিরই ছিল। একই সাথে, এবারের শিরোপা জিততে পারলে খেলোয়াড় হিসেব সর্বোচ্চ বিপিএল শিরোপা জয়ের রেকর্ডে মাশরাফির পাশে নাম লেখাবেন কায়েস।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর সিলেট স্ট্রাইকার্স। দুই ফাইনালিস্টের এবারের বিপিএলের শুরুটা ছিল একদমই বিপরীতমুখী। কুমিল্ল যেখানে হ্যাটট্রিক হার দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, সেখানে সিলেটের শুরুটা হয়েছিল হ্যাটট্রিক জয় দিয়ে। তবে সময় গড়াতে গড়াতে একটা সময় পর কুমিল্লাও টেক্কা দিতে শুরু করে অন্য দলগুলোকে।
টানা তিন হারের পর আর একটি ম্যাচেও হারেনি। দারুন প্রতাপে টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বার শিরোপাজয়ী দলটা। আর ওদিকে, সিলেট স্ট্রাইকার্স পুরো বিপিএল জুড়েই বড্ড ধারাবাহিক। কখনোই খেই হারায়নি। দারুণ ছন্দে দেশি ব্যাটারদের নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে দলটা। কুমিল্লার কাছে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে হারলেও পরের ম্যাচে রংপুরকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে প্রথম বারের মত খেলতে আসা সিলেট স্ট্রাইকার্স।
কুমিল্লার শক্তি দেশি, বিদেশিদের নিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল। আর ওদিকে সিলেটের শক্তি তাদের দেশি ক্রিকেটাররা। মাশরাফি ফাইনালে কুমিল্লাকে এগিয়ে রাখছেন ঠিকই। তবে তিনি নিজে অস্বীকার করলেও, তাঁর মধ্যে একটা জাদু আছে। যে জাদুর পরশে বদলে যায় গোটা দলের চিত্র। সিলেট স্ট্রাইকার্সও ঠিক সেভাবেই বদলে গিয়েছে। যে দলটাকে নিয়ে কেউ এতদূর ভাবনাতেও নিয়ে আসেনি, সেই দলটাই এবার ফাইনাল খেলছে।
এবারের বিপিএলে তারুণ্যের দীপ্তিতে উদীয়মান ক্রিকেটার গুলো উঠে এসেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স থেকে। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান করা সেরা তিন ব্যাটারের মধ্যে দুজনই সিলেটে, শান্ত আর তৌহিদ হৃদয়। এ ছাড়া ধুন্ধুমার হিটিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন জাকির হাসান। বল হাতে নজর কেড়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। সিলেটকে ফাইনালের ওঠানোর ম্যাচে নায়ক ছিল তো এই সাকিবই।
এদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শুরুর ধাক্কার পর এখন পর্যন্ত একটা অপ্রতিরোধ্য দল। এ দলটাতেও রয়েছে তারুণ্য আর তারকাখ্যাতির দারুণ মিশেল। সবচেয়ে নামী বিদেশি ক্রিকেটারদের দলে ভিড়িয়ে এবারের বিপিএলের আকর্ষণ বাড়িয়েছে তারা। ফাইনাল ম্যাচে থাকছে নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, মইন আলীরা। কুমিল্লার জন্য স্বস্তি ও সম্ভাবনার ব্যাপার হল, ৪ বিদেশির কেউ একজন ক্লিক করলেই তাদের হাতেই উঠতে পারে এবারের বিপিএল শিরোপা।
শুধু যে বিদেশিদের নিয়ে দলটা সমৃদ্ধ, সেটাও নয়। দলে আছেন লিটন দাশ। দেশিদের মধ্যে যিনি ম্যাচের মুহূর্ত এক হাতে ঘুরিয়ে দিতে পারেন। বল হাতে মুকিদুল মুগ্ধ, তানভীররাও ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারেন যে কোনো সময়েই।
তবে তারকাখ্যাতি কিংবা তারুণ্য দীপ্তি, যেটাই হোক। দিনশেষে প্রমাণটা তো ফাইনালেই করতে হবে। সেই বিপিএলের ফাইনালের মঞ্চ এখন প্রস্তুত। এখন শুধু চিত্রনাট্য লেখা বাকি। এটার অদল বদল, কাটাছেরা হবে বাইশ গজেই। মুহুর্মুহু উত্তেজনা, উন্মাদনায় সে চিত্রনাট্য দারুণ গতিতে এগিয়ে যাবে। এমন একটা ফাইনালের দিকেই সবার চোখ। এখন দেখার পালা, শিরোপা উৎসবে ভেসে যায় কোন দল। আর কার গায়েই অপরাজেয় ট্যাগলাইনটা অটুট থাকে। মাশরাফি নাকি ইমরুলের কুমিল্লা?