বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) চলমান। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায় সবচেয়ে গরম খবর বোধহয় সেটা নয়। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কয়েক দিন আগে মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়ে। তিনি নাকি আর টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না৷ হতভম্ব হয়েছিলো হয়ত বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। তামিম টি-টোয়েন্টি খেলবেন না কেন?
সেই প্রশ্নের উত্তর না মিললেও তিনি যে ক্রিকেটের এই ছোট ফরম্যাটটি থেকে বিরতি নিবেন তা বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় আরেকটু স্পষ্ট হয়েছে। তিনি ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে বলেন, ‘আমি তামিমের সাথে কথা বলেছি। আর তাঁর সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝলাম সে টি-টোয়েন্টি খেলতে চাচ্ছে না।’
কিন্তু কথায় মারপ্যাঁচে একটা বিষয় খানিক আন্দাজ করে নেওয়া যাচ্ছে যে তামিম টি-টোয়েন্টি থেকে এখনই অবসর নিচ্ছেন না। তিনি হয়ত ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাদা বলের একদিনের ফরম্যাটটায় বেশি মনোযোগী হতে চাইছেন। সেই সাথে লাল বলের ক্রিকেটে হতে চাইছেন ধারাবাহিক। সব খেলোয়াড়েরই একটু ভিন্ন পরিকল্পনা থাকে৷ নিজের মতো করে ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে শেষ করতে চান খেলোয়াড়েরা এবং সেটা স্বাভাবিক।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে ভরাডুবির পর বাংলাদেশের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে সামনে এসেছিলো টি-টোয়েন্টিতে দলের ব্যাটিং এ্যাপ্রোচ ও সুদক্ষতা৷ সেই দিক বিবেচনায় নতুন করে টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব পাওয়া খালেদ মাহমুদ সুজনও হয়ত তাঁর পরিকল্পনায় রেখেছিলেন তামিম ইকবালকে। তবে নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগেই দলের ভেতর তামিমের টি-টোয়েন্টি খেলতে না চাওয়ার বিষয় রটে গিয়েছিলো এবং তা খালেদ মাহমুদ সুজনকে বেশ অবাকই করেছিলো বলে সুজন জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি অবাক হয়েছিলাম। নিউজিল্যান্ডে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তুমি কেন খেলতে চাও না টি-টোয়েন্টি। আমাদের মধ্যে তখন খুব বেশি একটা কথা হয়নি। আমি তাঁকে বলেছিলাম নিউজল্যান্ড থেকে ফিরে তাঁর সাথে এ নিয়ে আলাপ করবো।’
সুজনের মতে টি-টোয়েন্টি খেলতে না চাওয়াটা তামিমের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে তিনি বেশ মর্মাহত হয়েছেন তামিমের এই সিদ্ধান্তে। সুজন বিশ্বাস করেন যে তামিমই দেশের সেরা ওপেনার। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তামিমের স্ট্রাইকরেট সেই কথা বলে না। একজন ওপেনার হিসেবে তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১১৭ এর কাছাকাছি।
এমন স্ট্রাইক রেটের একজন ওপেনিং ব্যাটার যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একজন বোঝাস্বরুপ তা মানতে নারাজ সুজন৷ এ বিষয়ে সুজন অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আসলে তামিমকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বোঝা মনে করি না৷ সত্যি বলতে তামিমই এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা অপশন তাছাড়া টপ-অর্ডারে তাঁর জায়গায় আসার জন্যে কোন খেলোয়াড় এখনও তৈরি নয়।’
হ্যাঁ! এ কথাও সত্য। খালেদ মাহমুদ সুজনের এ কথার সাথেও দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। কেননা পরিসংখ্যানই তাঁর কথার স্বপক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এখন অবধি তামিম বাংলাদেশের হয়ে ১৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন যেখানে তাঁর গড় ২৬.২২ এবং স্ট্রাইক রেট ১২১ এর খানিক বেশি।
অপরদিকে তামিমকে ছাড়া ২৮ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে ২৭টি ম্যাচে ওপেনিং করা তরুণ নাইম শেখের গড় ২৩.৩৮। স্ট্রাইক রেট ১০০ এর একটু বেশি। আদর্শ টি-টোয়েন্টি ব্যাটার কিংবা ওপেনার হওয়া থেকে বেশ খানিকটা দূরেই অবস্থান করছেন নাইম।
অন্যদিকে এই ২৮ ম্যাচের ১৮ টিতে ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলা লিটন দাসের গড়টা ১৭ ছুঁইছুঁই। স্ট্রাইকরেট ১০১। তামিমের অবর্তমানে সৌম্যের স্ট্রাইকরেট বাকিদের তূলনায় খানিকটা বেশি ১১২ এর ঘরে। অন্যদিকে ব্যাটিং এ বাকি তিন সিনিয়র সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরাও খুব একটা সফল তা বলার উপায় নেই। এমতবস্থায় বাংলাদেশ দলকে বছর শেষ হওয়ার আগেই খেলতে হবে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসর।
বছরের শেষভাগে অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। শক্তিশালী ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আরো দু’টি দল আসবে কোয়ালিফায়ার থেকে। বাকি থাকা নয় মাসে বাংলাদেশ দলকে খুঁজে বের করতে হবে নিজেদের ব্যাটিং এর সেরা কম্বিনেশন। এই দোলাচলের সমাধান প্রয়োজন অতি দ্রুত। তামিম ফিরবে কিনা সে আলাপ নিসঃন্দেহে চলবে আরো বেশ কিছুদিন৷
তবে তামিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান দেখানো জরুরি। অপরদিকে তামিমের উচিৎ নিজের ভাবনা এবং পরিকল্পনা সবাইকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া। এমন ধূম্রজাল আর যাই হোক বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যে খুব একটা ভাল ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে না তা বলতে দ্বিধা নেই।