মেলাবেন তিনি মেলাবেন

নিয়তি হয়ত একেই বলে। কবি বলেছিলেন না? ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’? আজ্ঞে হ্যাঁ, প্রতিবার হিসেব মেলে, মিলে যেতে বাধ্য! ঠিক এই মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছে বুয়েনস আয়ারসে, রাজকীয় সংবর্ধনায় দেশে ফিরেছেন মেসি, ডি পল, মার্টিনেজরা। আনন্দে আত্মহারা গোটা আর্জেন্টিনা, আবেগ যেন বাঁধ মানছে না, বিশ্ব জয়ের আনন্দে এক দিনের সরকারি ছুটিও ঘোষণা করে দিয়েছে সে দেশের সরকার৷

উৎসব চলছে, ছিয়াশির দিয়েগোর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছেন লিও। সমস্ত তর্ক-বিতর্ক শেষ, গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, অবশেষে পেলে, মারাদোনার পাশে বসতে পারবেন মেসি! এই মুহূর্তে কেউ তাঁর ধারে কাছে নেই, কেউ না!

কীভাবে থাকবে? একেবারে শুরু থেকে শ্রেষ্ঠত্বের যে প্যারামিটার ধরা হয়েছে, তার সবক’টাতেই তো ফুল মার্কস নিয়ে পাশ করেছেন মেসি। এতদিন ধরে ক্লাবের হয়ে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন, গোলমুখী পাস বাড়িয়েছেন, একের পর এক ট্রফি জিতেছেন। বাকি ছিল শুধু বিশ্বকাপ জয়, বাইশের কাতারে সেটাও হল।

সমসাময়িকদের মধ্যে এমন কৃতিত্ব আর ক’জনের রয়েছে? রোনাল্ডো অসাধারণ গোলস্কোরার, ক্লাব পর্যায়ের পরিসংখ্যানও ঈর্ষনীয়, কিন্তু বিশ্বকাপ? বিশ্বকাপ তো দূর অস্ত, ভদ্রলোকের দুর্ভাগ্য, ইউরো কাপের ফাইনালেও চোট পেয়ে খেলতেই পারেননি। প্লে-মেকিং, গোলমুখী পাস ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ছেড়ে দিলেও শেষের এই বিশ্বকাপই তো বিতর্কে যবনিকাপাত করে দেয়।

নিন্দুকেরা মুখ বেঁকিয়ে বিশ্বকাপের গরিমা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিতে পারেন এবার। নিজেরাও জানেন, সেটা এঁড়ে-তক্ক! ক্রিকেট হোক বা ফুটবল কিংবা অন্য কোনও খেলা! শ্রেষ্ঠত্বের সরণীতে অনেকটা এগিয়ে দেয় এই একটা বিশ্বকাপ! ফুটবল ছাড়ুন, ২০০৩ এর জোহানসবার্গ মনে আছে নিশ্চয়ই, শচীন গোটা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করলেও ফাইনালে হেরেছিল ভারত।

ম্যাচ শেষে ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’-এর ট্রফি নেওয়ার সময় শচীনের মুখটা মনে করুন একবার। ২০১৫ এর সেমিফাইনাল মনে আছে? কিউইদের কাছে একেবারে শেষ ওভারে হার মানতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ম্যাচ শেষে এ বি ডি ভিলিয়ার্সের কান্না এখনও চোখে জল এনে দেয় ক্রিকেটভক্তদের।

এরকম বহু উদাহরণ রয়েছে, লুকা মদ্রিচ, আর্জেন রবেন, কেন উইলিয়ামসন, সৌরভ গাঙ্গুলি, এঁরা প্রত্যেকে মহাতারকা.. কিন্তু ওই যে, শ্রেষ্ঠত্বের সরণীতে বাকিদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেছেন বিশ্বকাপ জয়ের অভাবে! শুনতে খারাপ লাগলেও, এটাই বাস্তব।

লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস আমাদের ক্ষেত্রে হিসেবটা মিলেছে একবারের জন্য হলেও! ভাগ্যিস ২০১১এর ২রা এপ্রিল ছিল, না হলে হয়ত ক্রিকেট ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্বেও খাদ থেকে যেত। ‘তোদের বিরাট বিশ্বকাপ জিতেছে?’ প্রশ্ন শুনে চুপ করতে বাধ্য হতাম আমরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link