জয়ের আগে হারিয়ে যেতে নেই

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে পাঁচ হাজার রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সেসময় দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। মুশফিক নিজের প্রাপ্তি উদ্‌যাপনের সময় জয়ের প্রতি রেখেছিলেন বিশেষ আশা। বলেছিলেন যে, তোর সম্ভাবনা রয়েছে ১০ হাজার রান করার।

অভিষেক ইনিংসে শূন্য রানেই ফিরেছিলেন সাজঘরে৷ এরপরের ইনিংসে ৬ রান করলেও, ম্যানেজমেন্টের চোখে জয় ছিলেন অদম্য ৷ ছোট জয়ের কাঁধে বড় দায়িত্ব দিয়ে নেওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ড সফরে৷ সেখানে পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক৷

নিউজিল্যান্ড টু ডারবান৷ জয় গড়লেন ইতিহাস৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করলেন সেঞ্চুরি৷ ধারাভাষ্যকার এক কথায় বললেন, ‘দ্যাটস ইট….আ রিমার্কেবল সেঞ্চুরি’৷ স্বাগতিক বোলারদের গতি আর ঘূর্ণির মাঝেও জয় ক্রিজে ছিলেন প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা৷

সাড়ে সাত ঘণ্টায় তৈরী করা গল্পের পর জয় হয়ে উঠলেন মধ্যমণি৷ লড়াকু এই ব্যাটারকে নিয়ে বিশাল স্বপ্ন বাংলাজুড়ে৷ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলার সংকট দূর করবেন তিনি, এমন ভাবনা একাংশের মাথায়৷ তবে জয় পারেননি৷ প্রত্যাশার চাপ মেটাতে গিয়ে তিনি হলেন খলনায়ক৷ এজন্যই হয়তো মুমিনুল বলেছিলেন, জয় ভবিষ্যতে সুপারস্টার হবেন, তবে তার সামনে এসব না বলাই ভালো৷

বাইশের মাঝামাঝি সময়ে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন জয়৷ ছন্দে ফিরে আবারও লিখবেন রূপকথার গল্প, এমন কিছুর অপেক্ষায় তখন অনেকেই৷ তবে এখনও ফুরোয়নি অপেক্ষা৷ জাতীয় দলে এই ব্যাটারের ফেরার কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছেন জাকির হাসান৷

বাইশের শেষভাগে টেস্ট দলে ডাক পেয়েই বাজিমাত করেছিলেন জাকির৷ ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই শতক৷ আপাতত সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে জয়ের চেয়ে এগিয়ে এই উইকেট রক্ষক ব্যাটার৷

জাতীয় দলে অনেকেই এসেছে, খারাপ করলে হারিয়েছে চিরতরে৷ তবে জয় আছে গুড বুকেই৷ সুযোগ পাচ্ছেন ‘এ’ দলে নিয়মিত৷ জয়ের মধ্যে বিশ্বজয়ের যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটি তিনি দেখিয়েছেন আরেকবার৷

সিলেটে উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে জয়ের লড়াই ছন্দে ফেরার৷ টানা তিন ইনিংসে প্রাণহীন এক যোদ্ধা৷ তবে শেষদিনে প্রমাণ করেছেন সামর্থ্য৷ দেখিয়েছেন টেস্ট টেম্পারমেন্ট৷

জয় উইকেটে সেট হলে মেজাজ রাখতে পারেন শান্ত৷ লড়াকু মানসিকতা আর দৃঢ়চেতা মনোভাবে শাসন করেন প্রতিপক্ষ বোলারদের৷ এই যেমন সিলেটে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলেননি কোন ওভার বাউন্ডারি৷ চারশতাধিক মিনিট করেছেন ব্যাট৷ প্রতিপক্ষের স্লেজিং আর বোলিং নৈপুণ্যতা সামলিয়ে ব্যক্তিগত রানকে পরিণত করেছেন তিন সংখ্যায়৷ শতক প্রাপ্তির দিনে ম্যাচ ড্র করে চওড়া এক হাসি নিয়ে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে৷

খারাপ সময় কাটিয়ে দলে ফিরেছেন অনেকে৷ ইমরান খাঁন অবসর ভেঙ্গে জিতেছেন বিশ্বকাপ৷ জয়ও একদিন বাংলাদেশকে জেতাবে বড় কিছু৷ বর্তমানে ধারাবাহিক ছন্দটা হয়তো কিছুটা প্রতিকূলে৷ কেননা মনে রাখা ভালো, খারাপ সময় থাকেনা চিরদিন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link