দ্য ফাইনালিস্ট

অন্তত সাফল্য বিচারে ইংল্যান্ডের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই ওই এলিট ক্লাবের সদস্য হতে পারছিলো না। তাদের জার্সিতে অদৃশ্য কালিতে যেন লেখা থাকতো - মিডিওকার; সেমিফাইনালিস্ট।

ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মত পরাশক্তিগুলো তো বটেই; ইংল্যান্ডের মত কিছু না জেতা দলকেও একসময় এলিট ক্রিকেট দল বলে বিচার করা হত।

‘হত’ বলি কেনো, এখনও তাই হয়।

এই দলগুলো যেনো এই চরাচরের বাকি দলগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন কিছু। এদের শরীরে বাড়তি একটা ফ্লেভার আছে। অনেকের ভিড়ে এরা আলাদা। যেনো ক্লাবের মধ্যে ক্লাব – এলিট ক্রিকেট ক্লাব।

অথচ নিউজিল্যান্ডের কথা ভাবুন। ১৯২৬ সালে তারা আইসিসির পূর্নাঙ্গ সদস্য হয়েছে; ১৯৩০ সালে তাঁরা প্রথম টেস্ট খেলেছে। টুকটাক অর্জনও ছিলো না, তা নয়। অন্তত সাফল্য বিচারে ইংল্যান্ডের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু তারা কিছুতেই ওই এলিট ক্লাবের সদস্য হতে পারছিলো না। তাদের জার্সিতে অদৃশ্য কালিতে যেন লেখা থাকতো – মিডিওকার; সেমিফাইনালিস্ট।

২০১৫ থেকে ২০২১; অবিশ্বাস্য একটা সময় কাটাচ্ছে সেই নিউজিল্যান্ড দল।

তিন ফরম্যাটে প্রবল প্রতাপের ফলাফল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই সময়ের সেরা দলটা তারা। গতকাল রাতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌছে গেলো নিউজিল্যান্ড। সেই সঙ্গে যেনো ঘোষনা দিলো যে, ক্রিকেটের নতুন এলিট দল হিসেবে তাদের নাম এখন বলতেই হবে। এখন আর নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালিস্ট নয়; ফাইনালিস্ট।

নিউজিল্যান্ড শুরু থেকেই দৌড়ে একটা উচ্চতা পর্যন্ত নিজেদের সবসময় স্থির রাখতে পেরেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসটাই দেখুন।

১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপেই সেমিফাইনাল খেলেছিলো তারা। সেখান থেকে ২০১১ পর্যন্ত যে কয়টা বিশ্বকাপ তারা খেলার সুযোগ পেয়েছে, তার ছয়টিতেই সেমিফাইনালে গেছে দলটি। কিন্তু কখনোই ফাইনাল খেলতে পারেনি।

২০১৫ সালে এসে প্রথমবারের মত এই বাঁধাটা টপকায় নিউজিল্যান্ড। ফাইনালে ওঠে এবং প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ হয়। ২০১৯ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। মূল ম্যাচ ও সুপার ওভার টাই হওয়ার পর বাউন্ডারির হিসেবে রানার্সআপ হয় তাঁরা। অনেকের মতেই নিউজিল্যান্ডকে ২০১৯ বিশ্বকাপের যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন বলা উচিত।

এরপর টি-টোয়েন্টি দেখুন। সেখানেও তিন বার সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দু বার সেমিফাইনালে ছিলো দলটি।

কিন্তু ফাইনাল তারা খেলতে পারছিলো না ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত।

কীসের অভাব ছিলো? একটা ‘কমন’ উত্তর দেওয়া হয় যে, নিউজিল্যান্ডের আসলে শেষ ধাক্কাটা দেওয়ার মত সুপারস্টার ছিলো না। রিচার্ড হ্যাডলিকে বাদ দিলে নিউজিল্যান্ড কখনোই ‘সর্বকালের সেরা’দের সাথে লড়াই করার মত তারকা পায়নি দলে; কেন উইলিয়ামসনের আগ পর্যন্ত। আর এই কেন উইলিয়ামসনের যুগে এসেই বাঁধাটা অতিক্রম করতে শুরু করে নিউজিল্যান্ড।

২০১৫ সালে ফাইনালে ওঠার থেকে শুরু হয় তাদের ফাইনালপর্ব। টানা দুটো ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। এরপর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা এবং ট্রফি জয়। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল।

মানে, তিন ফরম্যাটেই সর্বশেষ ফাইনালগুলোতে একটা নাম স্থির ছিলো-সেটা নিউজিল্যান্ড। ফলে এখন তাঁদের এলিট দল বলা যাবেই।

তবে এই এলিট দল হতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড তাদের আদি চরিত্রে পরিবর্তন আনেনি। তারা এখনও ঠিক তারকা নির্ভর দল নয়। এটা ঠিক যে, উইলিয়ামসন বাকিদের চেয়ে এক ধাঁপ এগিয়ে আছেন। কিন্তু তিনি পারফরম না করলেও দল দিব্যি ফাইনালে চলে যাচ্ছে।

ড্যারেল মিশেলের মত তারকা, কখনো যিনি ইনিংস শুরু করেননি, তিনি সেমিফাইনালে ওপেন করে ৪৭ বলে ৭২ রান করে দলকে জয় এনে দেন। কখনো জিমি নিশাম, কখনো ট্রেন্ড বোল্ট, কখনো রস টেলর হিরো হচ্ছেন। মানে, আপনি নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে আগে থেকে অনুমান করতে পারবেন না যে, কে এবারের তারকা হতে যাচ্ছেন।

আর এই জায়গাতেই নিউজিল্যান্ড বাকিদের চেয়ে এক ধাঁপ এগিয়ে থাকছে।

এটা তাদেরকে এলিটদেরও এলিট করে তুলতে পারে। অন্তত ছয় বছর ধরে এভাবেই তো তারা বিশ্ব শাসন করে আসছে।

আমরা এখন নিউজিল্যান্ড যুগে বসবাস করছি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...