দ্য গেইল ইমপ্যাক্ট

‘বলটা করা হয় পেটানোর জন্যই’ – কোনো সন্দেহ নেই যে, ক্রিস্টোফর হেনরি গেইল এই মতধারায় বিশ্বাস করেন। তার মানে এই নয় যে – তাঁর এই নির্দয় ভাবে পেটানোর মধ্যে গেইলের মস্তিষ্কের কোনো কাজ নেই।

শচীন রমেশ টেন্ডুলকারও দিন কয়েক আগে সেটাই বললেন। শচীন মনে করেন, গেইল খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার। তিনিও বলের যোগ্যতা বুঝে তাঁর গন্তব্য নির্ধারণ করতে জানেন। বোলার বুঝে তিনি ব্যাটিং করতে পারদর্শী।

শচীন নি:সন্দেহে ভুল বলেননি, বোলারকে পড়তে না জানলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজারের ওপর রান করা সম্ভব নয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিজেদের শীর্ষস্থান ধরে রাখাটাও অসম্ভব।

অন্য কথায় বললে, গেইলের জন্য এখন বাস্তবতাটাও তেমনই। তাঁর বয়স এখন ৪১-এর ওপর। তাঁর চেয়ে কম বয়সে ক্রিকেট ছেড়ে এখন ধারাভাষ্য কক্ষে নিয়মিত জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন – এমন সাবেক ক্রিকেটারের সংখ্যাও নেহায়েৎ কম নয়।

কিন্তু, তবুও টিকে আছেন গেইল। কারণ পরিস্কার – তাঁর ইমপ্যাক্টটাই অতুলনীয়। চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কেসটাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত উধারণ হতে পারে সাম্প্রতিক সময়ে।

কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব দলটার সাথে শুরু থেকে গেইল ছিলেন না থাকার মত করেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জল-হাওয়া, খাবার সহ্য না হয় পেট খারাপ বাঁধিযে মাঝে তিনি হাসপাতালেও থেকে  এসেছেন।

সেই সময়টাতে মাঠে প্রীতি জিনতা-লোকেশ রাহুল বাহিনীর অবস্থা ছিল শোচনীয়। সাতটা ম্যাচের মধ্যে জয় পেয়েছিল মোটে একটিতে। অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের মাথায় টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানধারীর অরেঞ্জ ক্যাপ চলে আসলেও, মুখটা ছিল মলিন। তিনি হাসবেন কি হবে, দলের পারফরম্যান্সই যে তাঁকে সেই উপলক্ষ্য দিচ্ছে না।

নিতান্ত একটা ‘ফাটকা’ সুযোগ নেওয়ার জন্যই গেইলের আগমণ হয় একাদশে। সেটাও ওপেনিংযে নয়, তিন নম্বরে। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ান এই দানবের সব সাফল্য তো ইনিংসের গোড়ায়। কিন্তু তিনে নেমে তিনি আদৌ কতটা মেলে ধরতে পারবেন নিজেকে – শঙ্কা ছিল।

কিন্তু, ইউনিভার্সাল বস বলে কথা। তিনি যত বুড়ো হবেন, ততই তো নেশা বাড়বে। পাঞ্জাবের হয়ে এরপর পাঁচটা ম্যাচ খেললেন। পাঁচটা ম্যাচেই কম বেশি রান করলেন, দু’টো হাফ সেঞ্চুরি পেলেন। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হল টানা পাঁচটা ম্যাচই জিতে নিয়ে হাসি ফিরলো রাহুল-প্রীতিদের ঠোঁটে।

গেইল ছিলেন পাঞ্জাব একাদশের মিসিং লিংক। টুর্নামেন্টের মাঝপথে হলেও সেটা ধরতে পেরেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বুড়ো দানবের ওপর তাই ভরসাটা এখনো আছে। আর সেই ভরসার ভেলাতেই ভেসে চলেছে পাঞ্জাবের আশা, টুর্নামেন্টের সেরা চারে ওঠার স্বপ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link